বেপরোয়া সিন্ডিকেট, পৌর টোলের নামে চলছে চাঁদাবাজি

  • আপডেট সময় রবিবার, জানুয়ারি ১, ২০২৩
  • 178 পাঠক

দিশারী প্রতিবেদন
০১ জানুয়ারি ২০২৩

——————–

নোয়াখালীর রাস্তায় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় সড়কের দুপাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট ও সিএনজি, অটোরিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন এবং পৌর টোল আদায়ের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে।

———————————————————-

প্রশাসনের উদাসীনতা * পুলিশের বিরুদ্ধে মদদ দেয়ার অভিযোগ

——————————————————–

এছাড়া শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামেও বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে নীরবে নানা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালী মহল। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, এমপির লোক, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ প্রভাবশালী মহল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজদের মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে চাঁদাবাজির দায়ভার স্বীকার করতে কেউ রাজি নয়।

প্রশাসনের সঙ্গে চাঁদাবাজদের ব্যাপক সখ্য গড়ে ওঠায় জনপ্রতিনিধিরা এসব অপরাধ দূর করতে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছেন না। চিহ্নিত চাঁদাবাজদের প্রশাসনে অবাধ চলাচল থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নেয়া বা কথা বলার সাহস পায় না।

সরেজমিন দেখা গেছে, সোনাপুর, মাইজদীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কের দুপাশ দখল করে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান, বাস, সিএনজি স্টেশন ও বাজার স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশের সামনেই সড়কগুলোয় হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা চলছে। সড়কের দু’পাশ ও পাশের খালের ওপারে শতাধিক দোকানপাট-বাজার বসানো হয়েছে।

মাইজদীতে সড়কের দুপাশে শতাধিক দোকানপাটসহ বাজার বসানো হয়েছে। মাইজদী হকার্স রোড় এলাকায়ও সড়কের দুপাশ দখল করে সব সড়কের দুপাশে শতাধিক অবৈধ দোকানপাট বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে।

এ বিষয়ে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, আমি কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডেমরায় চাঁদাবাজি চলছে। এটি নিয়ন্ত্রণহীন। প্রভাবশালী মহল ও সিন্ডিকেট চেইন আকারে চাঁদাবাজি করছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টরা ঐক্যবদ্ধ হলে এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব। তবে প্রশাসনিক উদ্যোগ এ বিষয়ে জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, সিএনজি ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকদের রুটভেদে ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। আর পৌরসভার নামে ২০ টাকা এবং চাঁদাবাজদের অতিরিক্ত ২০ টাকা জন্য দিতে হয়। পাশাপাশি অন্য কোনো রুটে ঠুকলেই চালককে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। আর নিজ এলাকায় চালকদের ১০০ থেকে ১৩০ টাকা চাঁদা দিয়ে সড়কে চলতে হয়।

নোয়াখালীর সোনাপুর- মাইজদী সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। একাধিক অটোরিকশা চালক জানান, সড়কে ইজিবাইক নামানো বাবত রুটভেদে চালককে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আর প্রতি মাসে থানায় প্রতিটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা বাবত ৬০০ টাকা দিতে হয়। এসব যানবাহনকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই শতাধিক গ্যারেজ গড়ে ওঠেছে। মাসোহারার ভিত্তিতে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। এটি এখন ওপেন সিক্রেট।

সোনাপুর-মাইজদী সড়কের দু’পাশে অবৈধ পার্কিংয়ে সৃষ্ট যানজটে যাত্রীরা নাকাল। অটোরিকসা ও সিএনজি স্টেশন ভোগান্তির নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া ফুটপাত দখল করে দোকানপাট স্থাপন করায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অবৈধ স্টেশনগুলোয় হাজার হাজার অটোরিকশা এলোমেলোভাবে রাখা হয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হওয়াসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।

সোনাপুর-মাইজদী সড়কে পৌরসভার নামে পরিবহণ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে। প্রধান সড়কের ওপরও অবৈধভাবে স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। এখানে দৈনিক ও মাসোহারা ভিত্তিতে চাঁদা নিয়ে চাঁদাবাজমহল ও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ বিষয়ে সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা জানে আলম বলেন, এ সড়কে অপরাধ বেড়েছে। সড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করায় যানজট বাড়ছে। সর্বত্র চাঁদাবাজি চলছে। সড়কে হেঁটে চলাই মুশকিল। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব এলাকায় সড়কের পাশে বসানো দোকানপাট থেকে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। তবে এ বিষয়ে মুখ খুললে দোকান করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে আরেকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, যুগ যুগ ধরে এ রাস্তায় চাঁদাবাজি চলছে। এখন সিন্ডিকেট আকারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চাঁদাবাজি চলছে। এমপি, কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি চলছে। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর। তিনি আরও বলেন, তবে আমরা চাই-এলাকা থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দূর হোক। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার জানান, সড়কের দুপাশে ও অভ্যন্তরীণ এলাকায় চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার জানা ছিল না। আর এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর চাঁদাবাজির সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচরের স্থানীয় সংসদ-সদস্য বলেন, আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো চাঁদাবাজি করলে তাকে পুলিশে দেয়ার নির্দেশ রইল। এলাকায় চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!