৩ কারণে নোয়াখালীতে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদ

  • আপডেট সময় রবিবার, মার্চ ১৯, ২০২৩
  • 319 পাঠক

ডেস্ক রিপোর্ট

————

নোয়াখালীতে দিনদিন বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদ ও তালাকের হার। বাড়ছে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে সাংসারিক অশান্তি। সঙ্গে যোগ হয়েছে নারী-পুরুষের পরকীয়া প্রেম। এ ৩ কারণে তালাকের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন জেলার সমাজ বিশ্লেষকরা।।

মূলত, গত ১৪ মাসে নানা কারণে উল্লেখযোগ্য নারী তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে। আর অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। তালাকের ক্ষেত্রে নারীরাই এগিয়ে। এ অবস্থায় স্বামীকে তালাক দেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এ তথ্য জানা গেছে নোয়াখালীর একটি বেসরকারী সংস্থার হিসেবে।

———————————–

শাররিক অক্ষমতার অভিযোগ ভুয়া

———————————

নোয়াখালী সদরের জিয়াউল হক জানান, নানা কারণে মেয়েদের এখন স্বামীকে তালাক দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে স্বামীর মাদক সেবন, যৌতুক, শাররিক অক্ষমতা, পরকীয়া ও পারিবারিক অশান্তির কারণে ইদানিং যখন তখন তালাকের নোটিশ জমছে ইউনিয়ন ও পৌরসভায়। মাইজদীর জাহেদা আকতার জানান, বিয়ের পর থেকেই তার সঙ্গে স্বামীর বনিবনা হচ্ছিল না। তাছাড়া যৌতুকের টাকার দিকে তার লোভ অনেক বেশি। এজন্য তাকে স্বামীর হাতে অনেক মারপিটের শিকার হতে হয়েছে। একপর্যায়ে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন তিনি।

নোয়াখালী শহরের শাহ আলমের মেয়ে সাবিহা সুলতানা ও মাইজদী বাজারের সুলতানা আকতার। দু’জনের স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণে তাদের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক জীবনে অশান্তি চলে আসছে। তাদের ঘরে সন্তান আছে কিন্তু নিজেরা আর কতো ধৈর্য্য ধরতে পারে। সে কারণে স্বামীকে তালাক দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।

একইভাবে স্বামীর নির্যাতন, মাদকাসক্ত হওয়া, শাররিক অক্ষমতার কারণে গত দুই মাসে নোয়াখালীতে অনেকগুলো বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে যৌতুক, স্বামীর পরকীয়া প্রেম ও পারিবারিক অশান্তির কারণে অনেক নারী তাদের স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন। তবে, সমাজ বিশ্লেষকরা বলেছেন, শাররিক অক্ষমতার অভিযোগ ভুয়া ও বানোয়াট। এমন অভিযোগ কোন সভ্য ও সুস্থ্য মানসিকতা সম্পন্ন স্ত্রীর কাছে কাম্য হতে পারেনা।

অন্যদিকে, এই দুই মাসে বেশ কয়েক জন পুরুষ তাদের স্ত্রীদের দেনা পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তালাক দিয়েছেন।

নোয়াখালী পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় প্রতিদিনেই তালাকের কাগজ আসে পৌরসভায়। পারিবারিক অভাব অনটন, পরকীয়া প্রেম, মাদকাসক্ত, যৌতুকের কারণে নোয়াখালীতে অনেকের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। আদালতে মামলা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।

প্রতিদিন পৌরসভা ও ইউপিতে সালিশ বসিয়ে বিয়ে বিচ্ছেদ ঠেকানোর প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। কিন্তু বিচ্ছেদ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীরা অনেক এগিয়ে। নারীদের প্রতি অবহেলা, স্বামীর মাদকাসক্তের প্রবণতা, স্বামীর অসচ্ছল জীবন পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।

তাছাড়া, মাদকাসক্তের কারণে শাররিক অশান্তি দেখা দেয়। স্ত্রীরা তাদের আবেদনে এসব কথা লিখে নালিশ জানান পৌর মেয়রের কাছে। কিছু সমাধান হয় আবার বেশির ভাগই তালাক হয়ে যায়। কারণ কারও চাহিদা পূরণ করা বা মাদকাশক্তি থেকে ফেরানো যায় না অনেক স্বামীকে। ফলে তালাক ঠেকানো মুশকিল হয়ে যায়।

এভাবে ২০২২ সাল এক বছরে ও চলতি বছরের ২ মাসে নোয়াখালীতে অনেক অসচ্ছল, সচ্ছল, কর্মজীবী নারী তাদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। তারা স্বামীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সংসার থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী বলেছেন।

তানিয়া নামের এক নারী জানান, স্বামীর আয় রোজগার বলতে কিছু নেই। তারপরও সে নেশায় আসক্ত। সংসার ও সন্তানের দিকে তার কোনো টান নেই। এভাবে আর কতোদিন থাকা যায়। তাই সন্তান নিয়ে চলে এসেছেন বাপের বাড়িতে। স্বামীকে তালাক দিয়েছেন আইনগতভাবেই। এতে তার অনেক কষ্ট হলেও স্বামী নামের অকর্মাকে নিয়ে আর কতোদিন কাটানো যায়।

এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলার এক কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতন না হলে তালাকের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তবে তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে আচার আচরণে সহনশীল হলেই কেবল বিয়ে বিচ্ছেদের মতো এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতির অবসান হতে পারে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!