এবার কোরবানির ঈদে আদার দাম বেড়েছে তিন গুণ, দ্বিগুণেরও বেশি জিরায়

  • আপডেট সময় শনিবার, জুন ২৪, ২০২৩
  • 149 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। শনিবার। জুন ২৪, ২০২৩

————————————-

প্রায় প্রতি বছরই এ ঈদ সামনে রেখে দেশের বাজারে এক-দুই মাস আগেই বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। সে হিসেবে এ বছরও মাসখানেক আগে থেকেই এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। দামের এ ঊর্ধ্বগতি এখনো চলমান।

গত এক বছরের ব্যবধানে আদার দাম তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর লবঙ্গ, রসুন, পেঁয়াজ, দারচিনিসহ বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজার এবং বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাবে এ চিত্র ওঠে এসেছে।

দেশে চাহিদাসম্পন্ন প্রধান মসলার মধ্যে রয়েছে জিরা, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, শুকনা আস্ত মরিচ, শুকনা আস্ত হলুদ, সরিষা ও ধনিয়া। মসলার মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে মেথি, কালিজিরা ও মিষ্টি জিরা। এছাড়া জায়ফল, জয়ত্রি, রাঁধুনি, স্টার ফুল, শাহি জিরা, সাদা গোলমরিচের ব্যবহারও হয় উৎসব-পার্বণে। এসব মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সরিষা, কালিজিরা, মিষ্টি জিরা, তেজপাতা, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া দেশে উৎপাদন হলেও বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে দেশীয় চাহিদা মেটাতে হয়।

তাছাড়া জিরা, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রি, শাহি জিরা, সাদা গোলমরিচ, মেথি, রাঁধুনি, স্টার ফুলসহ বেশ কয়েক ধরনের মসলার প্রায় শতভাগই আমদানিনির্ভর।
অন্যদিকে পচনশীল মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন দেশে উৎপাদিত হলেও বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভশীলতা রয়েছে অনেকাংশে। যে কারণে দেশে বাড়তি চাহিদার মৌসুমগুলোয় এসব পণ্যের দাম চড়া থাকে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মসলার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আদার। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশী আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮০-৩৩০ টাকায়। যদিও টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে দেশী আদা ১২০-১৫০ টাকা এবং আমদানি করা আদা ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় তিন থেকে চার গুণ।

গত একদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি পাটনা জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯৩০-৯৫০ টাকায়। আর ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৮০-১০০০ টাকা। এক বছর আগে পাটনা জিরার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৮০-৪৪০ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে দাম।

বাজারের এক  পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘জিরার কেজি পাইকারিতে এখন ৯৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগের দিন ৮৫০ টাকা ছিল। লবঙ্গের দামও কিছুটা বাড়তির দিকে। অন্যান্য মসলার দাম কয়েকদিন আগে বেড়েছে। তবে কোরবানির আগে এটি কমার সম্ভাবনা নেই। উল্টো দাম আরো বাড়তে পারে।’

রসুনের দাম একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। প্রতি কেজি দেশী রসুন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুনের কেজি ১৬০-১৮০ টাকা। এক বছর আগে দেশী রসুন ৬০-৮০ এবং আমদানি করা রসুনের দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। সে হিসাবে দেশী রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ‍দ্বিগুণ। বর্তমানে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিপ্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। এক বছর আগেও যে দাম ছিল ১ হাজার1৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ মসলার দামও প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে।

এছাড়া প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫-৪৫, এলাচ মানভেদে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬০০, তেজপাতা ১৩০-১৫০, ধনিয়া ২০০-২৫০, গোলমরিচ মানভেদে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশী শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৪০০-৪২০ ও আমদানি করা শুকনা মরিচ ৪২০-৪৫০, দেশী হলুদ ২২০-২৮০ এবং আমদানি করা হলুদ প্রতি কেজি ২০০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। দেশীয় ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশের আমদানি ও লেনদেন হয় এ বাজার থেকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এ বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় জিরা বিক্রি হয়েছে ৮৮০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও একই মানের জিরার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা। সে সঙ্গে পাইকারিতে দারচিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩১০ টাকায়, এলাচ মানভেদে ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৪০০, গোলমরিচ ৬২০ এবং লবঙ্গ ১ হাজার ৪২০ টাকা।

এছাড়া জায়ফল প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, জয়ত্রি ২ হাজার ৭৫০, ধনিয়া ১৭০, কালিজিরা ২৪০, তেজপাতা ৮০, মিষ্টি জিরা ৩০০, স্টার ফুল ১ হাজার ৩০০, শাহি জিরা ৯০০, সাদা গোলমরিচ ৯২০, সরিষা ৯০-১০০ এবং মেথি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কয়েকদিন আগেও কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-২৮ টাকা। বৃহস্পতিবার ও গতকাল পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩২-৩৩ টাকা। বাজারে চীনা রসুনের সরবরাহ কমে যাওয়ায় কেজিপ্রতি এটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। একই সঙ্গে চীনা আদার সরবরাহ না থাকায় বাজারে ভারত ও মিয়ানমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়।
এছাড়া দেশীয় শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকায়। আর ভারত থেকে আমদানি হওয়া শুকনা মরিচের দাম ৩৯০-৪০০ টাকা। দেশীয় আস্ত হলুদের কেজি ১২০-১২২ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতীয় হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১২৪-১২৬ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর মসলার দাম অনেক বেশি। এ সময়ে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় জিরা ব্যতীত অন্যান্য মসলার দাম কিছুটা কমলেও গত বছরের তুলনায় তা অনেক বেশি।

জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মসলাপণ্যই আমদানি হয় বিশ্ববাজার থেকে। একসময় ব্যবসায়ীরা ৮২-৮৪ টাকার ডলার দিয়ে পণ্য আমদানি করত। এখন ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১২ টাকা। পণ্যের দামের ওপর শুল্ক নির্ধারণ হওয়ায় আমদানি খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। যে কারণে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও বেশি।’ বিলাসপণ্য হিসেবে মসলা আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি ছাড়াও আমদানি কমে যাওয়ায় আসন্ন কোরবানির ঈদে দেশে মসলার বাজার চড়া থাকবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আমদানিকারকদের দাবি, ভারতে সরবরাহ ঘাটতির কারণে সেখানেই দাম ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া ডলারে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে জিরা আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণেই আমদানি বাড়লেও দাম কমেনি।

এছাড়া অন্যান্য মসলায়ও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে। বাজারের এক মসলাবিক্রেতা গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সব মসলারই চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়তি। আমরা বাড়তি দামে কিনি, এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এর এক নেতা বলেন, ‘‌কয়েক বছর ধরে দেখা যায়, রোজার পর থেকেই ধীরে ধীরে মসলার দাম বাড়াতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তারা কয়েক ধাপে দাম বাড়ান। এক বছরের ব্যবধানে কয়েকটি মসলার দাম তিন-চার গুণ বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারক সংস্থাগুলো একটি আরেকটির ওপর দায় চাপায়। কোরবানির ঈদে চাহিদা বেশি এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তেই পারে। কিন্তু বাড়ার যে হার সেটা অস্বাভাবিক। যখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল তখন অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিলোভে দাম বাড়িয়ে লাভ নিয়ে চলে যান। এতেই বাজার অস্থির হয়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!