মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমীপে

  • আপডেট সময় রবিবার, জুলাই ৩০, ২০২৩
  • 93 পাঠক

আকাশ মো. জসিম।৩১ জুলাই, ২০২৩।

———————————–
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সাংবিধানিক অত্যাবশ্যকীয়তাকে সামনে রেখে জাতীয় জীবনের এক অতিব গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছেন আমজনতা।

দেশের এক সিংহভাগ আমজনতা সংকটাপন্ন  রাজনীতির দুর্বিপাকে কঠিন, সমস্যাবহুল ও বেদনাহত জীবন পার করছেন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সংকট নিরসনে আপনার উপদেষ্টমহল কিংবা মন্ত্রী পরিষদ রাখডাক ডেকে সত্যটা গোপণ করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখে আমজনতা চরম বিব্রত, মর্মাহত ও এক অস্বস্তির বাতায়নে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রের প্রধাননির্বাহী হিসেবে একটা সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে আমজনতার অভিপ্রায় জানানোর অধিকার থেকে কিছুটা সত্যভাষণের দু:সাহস দেখাতে চাই।

মূলত, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আপনার নেতৃর্ত্বের সরকার কিছু বিষয় অযাচিত, অনভিপ্রেত, অমানবিক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে টেনে এনে দেশে বর্তমান সংকট সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন আমজনতা ।

জানাতে চাই, বিগত ১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্যে আপনার দল ও জামাতে ইসলাম আন্দোলনকালে দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতির অপূরনীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। যে ক্ষতের ভয়াবহতার পরিণাম ছিল অসহনীয়, আত্মমর্যাদাহীন ও রক্তের হোলিখেলার নামান্তরও। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে খাদের কিনারে দাফনের চেষ্টা ছাড়াও দিগম্বর পর্যন্ত হতে হলো কোন কোন ব্যক্তিজীবনকে, অচল করা হলো পুরো দেশ ও জাতিকে।

এরপর বিএনপি সরকার একটি ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন নামে সরকার ব্যবস্থায় তত্বাবধায়ক ব্যবস্থাা সংবিধানে সংযোজন করেন। অথচ, দেখলাম আপনার সরকার ক্ষমতায় এসে সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আঘাত হানলেন।

একপর্যায়ে, নিজেদের সুবিধামতো বিচারব্যবস্থায় একটি রায় প্রদানের অভিযোগে সংবিধান থেকে সে ব্যবস্থা মুছে ফেললেন। এরপর শুরু হলো বিরোধীদের অজুহাত। সভা, সমাবেশ ও প্রতিবাদ। বিরোধীদের প্রতিবাদের মানববন্ধন, লংমার্চ, লন্ডভন্ড করা হলো। হরতালে দেখা মাত্রই চললো গুলি।

বিরোধী দলীয় নেত্রী, নেতাদের নামে কথায় কথায় মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়ার চিত্র আরো ভয়ঙ্কর। দেখতে হলো বিরোধী দলীয় নেত্রীর রাজনৈতিক সংগ্রামকে ভূলুণ্ঠিত করতে বাসার সামনে জলকামান, বালু কিংবা ময়লার ট্রাক।

বিষয়টি যে একতরফা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি অপপ্রয়াস , সে প্রমাণে যখন দেখি ওই আদালতের যেসব বিচারক তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে ছিলেন তারা প্রত্যেকেই পরবর্তীতে প্রধান বিচারক পর্যন্ত হয়েছেন।

বাড়ি দখলের খেলায় রাষ্ট্রটাকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি হতে ঘরচ্যুত করতে। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদকে এক কাপড়েই বের হতে হয়েছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ঘর হতে। যেসবের কোন দরকারই ছিল বলে মনে করছেনা আমজনতা।

অবশ্য ক্ষমতার আগে বলছিলেন, আপনি এলে ১/১১ সরকারেরর সব কর্মকান্ডকে বৈধতা দেব। হয়েছেও তাই। সে সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ দলের নেতা, কর্মীদের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের সে দায়ের করা সব মামলার গ্লানিগুলো আজও থেকে গেলো জেলখানা কিংবা আদালতের এজলাসে।

অথচ যদি ওই সরকারের কর্মকান্ড বৈধ হয়, তাহলে সে সরকার ব্যবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো অবৈধ হওয়ার কারণ সমীচীন হওয়ার অবকাশ রাখেনা।

এরপর ১/১১ সরকারের দায়ের করা মামলাগুলোর একটিতে তারেক রহমান খালাস ফেলেন। পরিণামে সে বিচারককে দেশ ছাড়তে হলো। আরেক বিচারক খালেদা জিয়াকে সাজা দিলেন। বিনিময়ে তাকে পুরস্কৃত করা হলো।

উপরোক্ত খামখেয়ালিপনায় না জড়িয়ে নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ, স্বাধীন, শাক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় রুপান্তর করতে পারলে আমজনতা আমাদের সরকার নিয়ে গর্ব করতে কোন দৈন্যতা থাকতোনা !

২০১৪ সালে ১৫৪ আসনে নিজের লোকদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সেসব করতে গিয়ে হাস্যকরভাবে নির্বাচনের নামে কেন্দ্রের পথে, মাঠে কুকুর দেখতে হলো। যা একটি উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের জন্যে চরম অবমাননাকর, লজ্জাস্কর, বেদনাদায়কও।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন জনগণের ভোটাধিকার তথা একটি উদার গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রাম করেছেন। আপনি তাঁর কন্যা হিসেবে এভাবে বিধি নিষিদ্ধ গণতন্ত্র চালানো মানেই বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের আত্মায় কষ্টের দহন জ্বালানো বলে মনে করছে তাঁরা।

তাছাড়া, গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। একটি স্বপ্ন। একটি অঙ্গীকার। সে গণতন্ত্রকে হাত, পা বেঁধে বিকাশ ঘটানো সম্ভব না। গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীও।

এরপর সে সংসদের দায়িত্বশীল একটি বিরোধী দল নামের আরেকটি তামসাচিত্র নিশ্চয় আপনাকেও আশান্বিত করেনি। যে আস্তানায় সরকার আর বিরোধী চেয়ার এক কাতারে শামিল ?

তবে ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রাক্কালে দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে আপনার ফোনালাপ একটি উদার গণরেতন্ত্রের পরিচয় হলেও, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করার হেয়ালিচিত্রও ভাল চোখে দেখিনি আমজনতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুবিধা ভোগের লালসে অনেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের গণতন্ত্রে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা না থাকার কথা বলেন , কিন্তু সেসব রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তো জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তারা তো কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতির মতো ঘৃণ্য ও জঘন্য ঘটনার চিন্তা কিংবা উদাহরণ রাখেনি। কিন্তু, আমরা তো আজও সেসব থেকে বের হতে পারিনি।

২০১৪ সালে নির্বাচনকালীন দেশও জাতির কাছে পরিষ্কার বলেছিলেন, এটি সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সব দলের অংশ গ্রহণে একটি সুস্থ্য নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরে যাবেন। সভ্যতার বিচারে আমরা মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একজন প্রধানমন্ত্রীর এরুপ আশ্বাসে, বিশ্বাস করাটা বিরোধীপক্ষের বোকামী কিংবা অন্যায় বা দৈন্যতা হতে পারেনা।

তাই আমাদের ধারনা রাষ্ট্রের দায়িত্বে থেকে কোন দ্বিচারিতাকে রাজনীতির খেলায় দেখাটাও আমজনতার কাছে সুন্দর, সরল ও স্বাভাবিক খেলা মনে হতে পারেনা। আপনার উদারতা আরো প্রসারিত ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে দেশ ও জাতিকে নিশ্চয়। এ প্রত্যাশা দুরাশা নয়।

একটি বিষয়ে পরিস্কার থাকতে হবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডা বিদেশিরা ঠিক করে দিয়েছে, এমন নজির নেই। যেটুকু গণতন্ত্র আমরা পেয়েছি, তা এখানকার মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ফল।

ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এ দেশের মানুষের আন্দোলনের ফল। যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের উচিত জনগণের ওপর ভরসা রাখা। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে অনেক কিছুর পরিবর্তন দরকার। এটি নিয়ে তো দেশের মানুষকেই কথা বলতে হবে। এখানে নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। টাকার প্রবাহ বন্ধ হলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।

সর্বশেষ, সরকার থেকে বলা হয়েছে, ২০৪১  সালে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে যাবেন ; তবে এটুুকুর বাস্তবায়নে বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকেও উন্নত মানসিকতার পরিণত করা বিনে কোনভাবেই সম্ভব বলে মনে করছেনা আমজনতা ।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!