উন্নয়নশীল দেশের এক নম্বর সমস্যা পাতিনেতা ?

  • আপডেট সময় শুক্রবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
  • 143 পাঠক

————————————————————————————

এই ধাঁচের নেতারাই বিশ্বে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠছে

————————————————————————————-

মতামত। ১৩ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

একজন ক্রীড়াবিদ হয়েও রাজনৈতিক অনুশীলনে সুন্দরতম উক্তিটি করেছেন ভিনস লম্বারডি। তার ভাষায়, নেতারা জন্মান না; কঠোর চেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষ নেতায় পরিণত হন। লম্বারডির কথা শতভাগ সঠিক।

পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, ত্যাগ বাদে প্রকৃত নেতা হওয়া যায় না। যদিও উন্নয়নশীল বিশ্বের চিত্র বলে ভিন্ন কথা। বিশেষ করে, যেসব দেশ আধাসামন্তবাদের বৃত্ত ভাঙতে পারেনি এখন পর্যন্ত, সেখানে যেন নেতার অভাব নেই ; কিন্তু আধাসামন্ত ব্যবস্থার সুযোগে যারা অসৎ পথে টাকা কামাই করে রাতারাতি নেতা বনে যায়, তাদের নেতা হিসেবে গণ্য করা উচিত নয় ।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই ধাঁচের নেতারাই উন্নয়নশীল বিশ্বে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা বা আমলার নাম ভেঙ্গে তাদের রাজপথ দাবড়িয়ে বেড়াতে দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় মদতে উন্নয়নশীল বিশ্বে সামন্তবাদের শিকড় যেভাবে বহুদুর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, তার আসল শক্তির জায়গা হলো ‘আমলাতন্ত্র’। এ মহা সুযোগটিই গ্রহণ করে একশ্রেণির ভুঁইফোঁড় নেতা। পুলিশ-প্রশাসনসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কবজা করে নেয় তারা। কতেক অসাধু আমলাকে ম্যানেজ করে হঠাৎ নেতায় পরিণত হওয়া ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড উন্নয়নশীল বিশ্বের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে ওঠে।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, এ জনপদে বিশেষ করে বিগত প্রায় দুই যুগকালে বহু পাতিনেতা, ভণ্ড নেতার উদয় ঘটছে। তারা গঠন করেছেন পেটোয়া বাহিনী। মাদক ব্যবসায়, চাঁদাবাজি, মাস্তানিসহ হেন অপরাধ নেই, যেখানে তাদের অবাধ বিচরণ পরিলক্ষিত হয়না। অথচ তাদেরই দেখতে পাওয়া যায় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষমহলের কর্তাব্যক্তিদের আশে পাশে !

দলে অনুপ্রবেশ করে তারা যে রাতারাতি বড় নেতা হয়ে গেল, তা দলের শীর্ষব্যক্তি না জানতে পারেন; কিন্তু যার বা যাদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা স্লোগান দিতেছে, তারা কেন এবং কোন স্বার্থে তাদের লালন-পালন করছেন ? বাস্তবতা হলো, উন্নয়নশীল বিশ্বের শীর্ষব্যক্তিদের ধ্যান-ধারণাই এমন যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যার পকেটে থাকবে, তার কথামতোই চলবে সব কিছু। উন্নয়নশীল দেশের এক নম্বর সমস্যা এটাই।

জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ যত কাছে আসছে , লক্ষ্য করা যাচ্ছে—কোনো কোনো এলাকায় পাতি বা হাইব্রিড নেতারা ‘বিশেষ কৌশল’ খাটাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠছে। অন্য দলের নেতাকর্মীর ওপর দমনপীড়ন বাড়িয়ে দিয়ে তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে তুলে দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের হাতে। মাসল পাওয়ার দেখাতে ‘হিটার বাহিনী’ গড়ে তুলছে এবং রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি জনগণের সম্মুখে ক্ষুণ্ন করছে। ইহা তো অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা, সামন্তবাদ ব্যবস্থার নগ্ন দৃষ্টান্ত!

উপর্যুক্ত পরিস্থিতির আলোকে উত্তরণের রাস্তা কী হতে পারে ? দলে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী নেতার অনুপ্রবেশ ঘটলে শীর্ষনেতাদের কী করার কথা ? সম্ভবত এর সঠিক পথটি দেখিয়েছেন গ্রাচো মার্কস। গ্রাচোর পরামর্শ, রাজনীতি হলো সমস্যার অনুসন্ধান করা, এর খোঁজ করা, ইহা নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা এবং সর্বশেষে ভুল রাস্তা পরিহারে সঠিক ও কার্যকর পন্থা প্রয়োগ করা।

এই প্রখ্যাত মার্কিন তারকা শীর্ষনেতাদের উদ্দেশে যা বলেছেন তার সাথে একমত না হয়ে উপায় নেই। কেননা, পাতিনেতাদের দৌরাত্ম্যে দলে কেবল বিশৃঙ্খলা ও হানাহানিই বাড়বে। সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে দমনপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের সাথে অবধারিতভাবে সংঘাত বাধবে একটি সময়ে।বিশেষত, নির্বাচনের সময় এর আশঙ্কা অধিক। পাতিনেতারা না-জানতে পারে, সচেতন মহল ঠিকই জানেন, রাজনীতিতে সুদিন এবং দুর্দিন অসাবধানতার কারণে সহসায় বদলে যাইতে পারে!

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!