দিশারী ডেস্ক ।২৭ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
গত ১৫ বছরে হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব পৌঁছেছিল এক অন্য জায়গায়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক চলে গেছে ব্যক্তিত্ববাদীর ভিন্ন জায়গায়। যে সম্পর্কে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ আর ভারত নাকি স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্ক !
আবার শেখ হাসিনাও বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি সারাজীবন মনে রাখবে। এতে পরিষ্কারই ধরে নেয়া যায়, বাংলাদেশ স্বার্থ সুবিধার মৌলিকত্ব দিতেও বাংলাদেশের হাসিনা সরকার কোন ধরনের কাপর্ণ্য করেনি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারত সন্দিহান যে, ভারতের সাথে বাংলাদেশর অতীতের স্বার্থ, সুবিধা বহাল থাকবে কিনা ! নাকি, তা হবে নাজেহাল ? ভারত যদি বাংলাদেশ প্রশ্নে তার আগের স্বভাব, চরিত্র আর সুবিধা হারায়, সেক্ষেত্রে সেটুকুর পূণ্যতা চলে যাবে হয়তোবা চীনের খাতায়।
তবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ভারতের জন্য যে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিভঙ্গির দুর্বলতাগুলোকে উন্মোচিত করেছে এবং তাদের কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও হাসিনা সরকারের পতন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে ভারত কিছুটা বিস্মিত।
এই পরিস্থিতিতে ভারত কীভাবে বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সাথে নিজেদের কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়ন করবে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান।
এতে বলা হয়েছে, সদ্য ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনার ক্রমাবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক শোষণে বাংলাদেশের জনগণের যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের বিবৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধীতা প্রকট হওয়ার কারণ হচ্ছে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনে ভারতের অন্ধ সমর্থন।
দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়েছে যা ভারতের উদ্বেগের কারণই বটে। এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে আগামীতে যে সরকার আসবে তারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হতে পারে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাথে দেশটির বৃহৎ ইসলামী দলের জোট এবং ভারত বিরোধীতার ইতিহাস রয়েছে।
ভারতের পূর্ব সীমান্তে অস্থিতিশীল করার জন্য পাকিস্তানের মতো বহিরাগতরা একটি অনুঘটক হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করেছে দ্য স্টেটসম্যান।
গণমাধ্যমটি আরও বলেছে, বাংলাদেশে চীনা প্রভাব বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সামরিক ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে নিরাপত্তা আরও জোরালো করতে পারে দুই দেশ। বাংলাদেশে চীনের দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যকে কৌশলগতভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
তাছাড়া, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ভাগ্য ভারতের জন্য একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যদিও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো নিপীড়ন হয়নি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অবশ্যই ভারতের জন্য একটি অগ্রাধিকার হতে হবে, কারণ সহিংসতার যে কোনো বৃদ্ধি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ভারতের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তার স্বার্থ রক্ষার জন্য, ভারতকে দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে হবে।
আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে যুক্ত হতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্যাকেজ এবং তিস্তা নদীর জল-বণ্টন ভারত বিরোধীতা নিরসনের নতুন প্রচেষ্টার সাথে বিশ্বাস পুনর্গঠনে সহযোগী হতে পারে।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে সামরিক সহযোগিতাও বাড়াতে হবে। ভারতকে অবশ্যই প্রতিবেশি দেশের জনগণের আশা-অকাঙ্খার কথা মাথায় রেখে আরও সূক্ষদর্শী হতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে এমন মতাদর্শগত চিন্তা পরিহার করতে হবে। ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং আধিপত্যবাদী চিন্তা চেতনা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন অর্জন করা কঠিন হবে।
তবে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি ভারতের জন্য যেমন হতাশার তেমন সম্ভাবনার। কূটনীতি, আর্থিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত ধৈর্য ব্যবহার করে, ভারতকে আঞ্চলিক নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করতে হবে।
Leave a Reply