০৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

পরিবার-সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে কেন ?

  • Akash Md. Jasim Editor
  • আপডেট: ১১:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

দিশারী ডেস্ক। ১০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

সন্তান খুন করেছেন জন্মদাতা পিতাকে। চাচার হাতে খুন হয়েছেন ভাতিজা। স্ত্রীর হাতে স্বামী কিংবা স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হয়েছেন। গত কয়েক দিনে এ রকম বেশকিছু পারিবারিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জাতীয় ভয়ানক অপরাধমূলক ঘটনা আগেও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে, তবে সম্প্রতি তা আকস্মিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করেন তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় বেদম মারধরসহ ইট দিয়ে থ্যাঁতলে ভাগ্নে সুমন কাজীকে খুন করেন তার মামা মোস্তফা ও তার পরিবারের সদস্যরা। খবরের কাগজের বিশ্লেষণেও এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আকস্মিকভাবে এমন পারিবারিক বা সামাজিক হত্যাকাণ্ড কেন বাড়ছে? এটি কি আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা, নাকি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির কম থাকা, নাকি অন্য কিছু ?

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা মনে করেন, লোভ-লালসা, নারী ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধসহ এ জাতীয় কিছু কারণে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। মঙ্গলবার খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‌এসব ঘটনা আগেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। তবে দেখতে হবে সেটি অতিরিক্ত উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কি না। এই জাতীয় ঘটনা আগেভাগে রোধ করাও কঠিন।

আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব এসব নৃশংস ঘটনা বৃদ্ধির জন্য কোনোভাবে দায়ী কি না, জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি বলেন, এর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়ে। কিন্তু সেটিই প্রধান বা অন্যতম কারণ নয়। এর সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সাংসারিক অভাব-অনটনসহ নানা রকম বিষয় থেকে চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন ঘটে থাকে। সেখান থেকেই হিংস্রতা-নৃশংসতা বেশি ঘটে।

পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংসতার কারণ সম্পর্কে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষের মনোজগতে একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার বেশির ভাগই নেতিবাচক। মনোজগতে একধরনের প্রবৃত্তি (কামনা, বাসনা, চাহিদা) কাজ করছে। এসব চাহিদা বা বাসনা সব ক্ষেত্রে পূরণ হয় না বা হচ্ছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে, ইন্টারনেটভিত্তিক গেমে ও মুভি-নাটকে নৃশংসতা যেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে সেখান থেকেও অনেকে এ জাতীয় ভয়ানক ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ধর্মীয় নৈতিকতার শিক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষা-প্রথা এসবের দিকে গুরুত্বের সঙ্গে সবাইকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সমাজে ও পরিবারে পারস্পরিক সম্মানবোধ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে নৃশংসতা অনেকটাই কমে যাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরের একটি বাসায় আয়েশা খানম (৪২) নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তার দেবর মাসুদ হাওলাদার। ঘটনার পর অভিযুক্ত মাসুদ পালিয়ে গেলেও মঙ্গলবার তাকে বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। একই দিন (৬ এপ্রিল) দুপুরে শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা বাসস্ট্যান্ডে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদ করায় শাকিল মাহমুদ নামে এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন বাসের হেলপার।

গত ৫ এপ্রিল পারিবারিক কোন্দলের জেরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামে ছেলে ও মেয়ের হাতে মুসলিম মিয়া (৪৭) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। মুসলিম মিয়ার স্ত্রীর বিদেশ যাওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ছেলে ও মেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

তার আগের দিন ৪ এপ্রিল পূর্ব বিরোধের জেরে রাজশাহীর বাগমারায় চায়ের দোকানে ঢুকে আবদুর রাজ্জাক (৩৫) নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে আমিনুল ইসলাম (২২) নামের অভিযুক্ত তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অভিযুক্ত তরুণকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

গত ৪ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে স্ত্রী তানিয়ার হাতে তার স্বামী জুয়েল (৩৮) খুন হন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়। স্থানীয়দের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে এমনটা হতে পারে।

গত ২ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় পারিবারিক বিরোধের জেরে আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী নূর বেগমকে (৩৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া গত ১ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চাচা রবিউল ইসলাম ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে তার ভাতিজা কাওসার আহমেদকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে গেমে আসক্ত ছেলের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২২ মার্চ রাতে চুয়াডাঙ্গায় নামাজরত বাবা দোদুল হোসেন রিন্টুকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে রিফাত হোসেন (১৭)। ঘটনার পর অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে পুলিশ। একই রাতে (২২ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়ার মুক্তারের চর ইউনিয়নের চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দিতে ছেলের এলোপাতাড়ি কোপে মকবুল হোসেন মোল্লা (৫৫) নিহত হন। এই ঘটনার পর পরই হার্ট অ্যাটাকে ঘাতকপুত্র রুবেল মোল্লাও (৩০) মারা যান। স্বজনরা জানান, রবিবার ইফতারের পর বাবা ও ছেলের মধ্যে পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে ওই ঘটনা ঘটে। এই জাতীয় বেশকিছু ঘটনা সম্প্রতি সমাজ ও পরিবারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নানা পারিপার্শ্বিকতায় বর্তমানে সমাজ ও পরিবারে একধরনের চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়েছে লোভ আর হিংসা। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষ অনেক কিছুই সহজে মেনে নিতে পারেন না। এর ফলে ঘটছে হত্যার মতো নৃশংস সব ঘটনা। এই জাতীয় ঘটনা শুধু আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়, এর জন্য সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক চর্চাও খুব জরুরি।

————————————–

খবর : অন্য দৈনিক

————————————-

এ বিষয়ে প্রেক্ষাপট ও পুলিশিংয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংস ঘটনার নেপথ্যে মূলত নানা কারণ কাজ করে থাকে। এর মধ্যে পরিবারে বন্ধন ও সমাজে পারস্পরিক মূল্যবোধের ঘাটতি, সন্তানদের মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিংয়ের অভাব, সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- সেসব বিষয়ে অভিভাবকদের উদাসীনতা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, মাদক ও খারাপ আড্ডাসহ এমন নানা কারণে ওই জাতীয় নৃশংস হত্যা বা বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের যথেষ্ট দায়বদ্ধতা রয়েছে।

এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক এমন নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ে সচেতনতামূলক সভা করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। এসব সভায় পুলিশ ওই সব অপরাধের আইন ও শাস্তির বিষয়ে সবাইকে অবগত করে থাকে। তারপরও এখানে সমাজের ভূমিকা কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি।

পরিবার-সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে কেন ?

আপডেট: ১১:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

দিশারী ডেস্ক। ১০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

সন্তান খুন করেছেন জন্মদাতা পিতাকে। চাচার হাতে খুন হয়েছেন ভাতিজা। স্ত্রীর হাতে স্বামী কিংবা স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হয়েছেন। গত কয়েক দিনে এ রকম বেশকিছু পারিবারিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জাতীয় ভয়ানক অপরাধমূলক ঘটনা আগেও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে, তবে সম্প্রতি তা আকস্মিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করেন তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় বেদম মারধরসহ ইট দিয়ে থ্যাঁতলে ভাগ্নে সুমন কাজীকে খুন করেন তার মামা মোস্তফা ও তার পরিবারের সদস্যরা। খবরের কাগজের বিশ্লেষণেও এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আকস্মিকভাবে এমন পারিবারিক বা সামাজিক হত্যাকাণ্ড কেন বাড়ছে? এটি কি আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা, নাকি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির কম থাকা, নাকি অন্য কিছু ?

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা মনে করেন, লোভ-লালসা, নারী ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধসহ এ জাতীয় কিছু কারণে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। মঙ্গলবার খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‌এসব ঘটনা আগেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। তবে দেখতে হবে সেটি অতিরিক্ত উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কি না। এই জাতীয় ঘটনা আগেভাগে রোধ করাও কঠিন।

আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব এসব নৃশংস ঘটনা বৃদ্ধির জন্য কোনোভাবে দায়ী কি না, জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি বলেন, এর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়ে। কিন্তু সেটিই প্রধান বা অন্যতম কারণ নয়। এর সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সাংসারিক অভাব-অনটনসহ নানা রকম বিষয় থেকে চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন ঘটে থাকে। সেখান থেকেই হিংস্রতা-নৃশংসতা বেশি ঘটে।

পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংসতার কারণ সম্পর্কে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষের মনোজগতে একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার বেশির ভাগই নেতিবাচক। মনোজগতে একধরনের প্রবৃত্তি (কামনা, বাসনা, চাহিদা) কাজ করছে। এসব চাহিদা বা বাসনা সব ক্ষেত্রে পূরণ হয় না বা হচ্ছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে, ইন্টারনেটভিত্তিক গেমে ও মুভি-নাটকে নৃশংসতা যেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে সেখান থেকেও অনেকে এ জাতীয় ভয়ানক ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ধর্মীয় নৈতিকতার শিক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষা-প্রথা এসবের দিকে গুরুত্বের সঙ্গে সবাইকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সমাজে ও পরিবারে পারস্পরিক সম্মানবোধ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে নৃশংসতা অনেকটাই কমে যাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরের একটি বাসায় আয়েশা খানম (৪২) নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তার দেবর মাসুদ হাওলাদার। ঘটনার পর অভিযুক্ত মাসুদ পালিয়ে গেলেও মঙ্গলবার তাকে বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। একই দিন (৬ এপ্রিল) দুপুরে শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা বাসস্ট্যান্ডে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদ করায় শাকিল মাহমুদ নামে এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন বাসের হেলপার।

গত ৫ এপ্রিল পারিবারিক কোন্দলের জেরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামে ছেলে ও মেয়ের হাতে মুসলিম মিয়া (৪৭) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। মুসলিম মিয়ার স্ত্রীর বিদেশ যাওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ছেলে ও মেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

তার আগের দিন ৪ এপ্রিল পূর্ব বিরোধের জেরে রাজশাহীর বাগমারায় চায়ের দোকানে ঢুকে আবদুর রাজ্জাক (৩৫) নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে আমিনুল ইসলাম (২২) নামের অভিযুক্ত তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অভিযুক্ত তরুণকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

গত ৪ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে স্ত্রী তানিয়ার হাতে তার স্বামী জুয়েল (৩৮) খুন হন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়। স্থানীয়দের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে এমনটা হতে পারে।

গত ২ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় পারিবারিক বিরোধের জেরে আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী নূর বেগমকে (৩৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া গত ১ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চাচা রবিউল ইসলাম ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে তার ভাতিজা কাওসার আহমেদকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে গেমে আসক্ত ছেলের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২২ মার্চ রাতে চুয়াডাঙ্গায় নামাজরত বাবা দোদুল হোসেন রিন্টুকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে রিফাত হোসেন (১৭)। ঘটনার পর অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে পুলিশ। একই রাতে (২২ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়ার মুক্তারের চর ইউনিয়নের চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দিতে ছেলের এলোপাতাড়ি কোপে মকবুল হোসেন মোল্লা (৫৫) নিহত হন। এই ঘটনার পর পরই হার্ট অ্যাটাকে ঘাতকপুত্র রুবেল মোল্লাও (৩০) মারা যান। স্বজনরা জানান, রবিবার ইফতারের পর বাবা ও ছেলের মধ্যে পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে ওই ঘটনা ঘটে। এই জাতীয় বেশকিছু ঘটনা সম্প্রতি সমাজ ও পরিবারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নানা পারিপার্শ্বিকতায় বর্তমানে সমাজ ও পরিবারে একধরনের চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়েছে লোভ আর হিংসা। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষ অনেক কিছুই সহজে মেনে নিতে পারেন না। এর ফলে ঘটছে হত্যার মতো নৃশংস সব ঘটনা। এই জাতীয় ঘটনা শুধু আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়, এর জন্য সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক চর্চাও খুব জরুরি।

————————————–

খবর : অন্য দৈনিক

————————————-

এ বিষয়ে প্রেক্ষাপট ও পুলিশিংয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংস ঘটনার নেপথ্যে মূলত নানা কারণ কাজ করে থাকে। এর মধ্যে পরিবারে বন্ধন ও সমাজে পারস্পরিক মূল্যবোধের ঘাটতি, সন্তানদের মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিংয়ের অভাব, সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- সেসব বিষয়ে অভিভাবকদের উদাসীনতা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, মাদক ও খারাপ আড্ডাসহ এমন নানা কারণে ওই জাতীয় নৃশংস হত্যা বা বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের যথেষ্ট দায়বদ্ধতা রয়েছে।

এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক এমন নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ে সচেতনতামূলক সভা করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। এসব সভায় পুলিশ ওই সব অপরাধের আইন ও শাস্তির বিষয়ে সবাইকে অবগত করে থাকে। তারপরও এখানে সমাজের ভূমিকা কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি।