দেশের কল্যাণে ঘর ভাঙছে কানাডার নেতাদের ?

  • আপডেট সময় রবিবার, আগস্ট ৬, ২০২৩
  • 93 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ০৬ আগস্ট ২০২৩।

জনগণ ও দেশের কল্যাণে নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হয় নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতাদের। পদ সামলে টিকে থাকতে হয় রাজনীতির মাঠে। রক্ষা করতে হয় বহির্দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও। আমজনতার মন পেতে নামতে হয় রাস্তায়। পরিবার থেকে দূরে বাড়ির বাইরে কাটাতে হয় রাতের পর রাত। দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকতে হয় ঘরের বাইরে।

রাজনীতির এসব কঠিন চাপ সামাল দিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের হিসাব মিলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নেতাদের। বাহ্যিক জীবনের এই অতি ব্যস্ততার প্রভাবগুলো প্রতিদিন একটু একটু করে গেড়ে বসে পরিবারের অন্দরমহলে। বিরক্ত হয়ে ওঠেন প্রিয়জনরা। বিষিয়ে ওঠেন ঘরণী। নিমপাতার কষের মতো তেঁতো হয়ে পড়ে দাম্পত্যের মধুর সম্পর্ক। ফলাফল যা হওয়ার তাই! সম্পর্কে টানাপোড়েন। টাল খেতে খেতে একসময় ছিঁড়ে যায় নাটাই। শেষমেশ বিচ্ছেদ।

দেশ গড়তে গিয়ে এভাবেই ঘর ভাঙছে কানাডার নেতাদের। বুধবার ঘটে যাওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং সোফি গ্রেগোয়ারের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ইতিটা তেমনই একটা উপসংহার, এমনটাই বলছেন দেশটির মনোবিজ্ঞানীরা।

অনেকের মতে, ঘরছাড়া থাকতে থাকতে নেতাদের বাড়ির বাইরেই তৈরি হয় আরেক ঘর। এ কারণেই শেষবয়স বা মধ্যবয়সে এসে সংসার ভাঙে নেতাদের। দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল, টরোন্টো স্টার।

শুধু ট্রুডো দম্পতিই নয়, একই দশার শিকার কানাডার আরও অনেক নেতা। দেশটির রাজনীতির ইতিহাসে বিচ্ছেদেরে এ তালিকা নাতিদীর্ঘ নয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ২৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিয়েবিচ্ছেদ ঘটেছে। ২০১৩ সালে পার্লামেন্টারি লাইব্রেরি প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, কানাডায় ৮৫ শতাংশ এমপির বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে।

এই হার ২০১১ সালের নির্বাচনের আগে ৭০ শতাংশের তুলনায় বেশি ছিল। এমনই একজন কানাডার ১৯তম প্রধানমন্ত্রী কিম ক্যাম্পবেল। তখনো তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠেননি। রাজনীতির মাঠে চলছিল তার জোরসোর প্রচারণা। হঠাৎই প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটান তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে। তালিকায় পরপরই আছেন জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডো। কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। অফিসে থাকাকালীন জনসমক্ষে পত্নীর সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ।

ব্যক্তিগত জীবনে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রয়েছে আরও কালো অধ্যায়। সেসময়কার সাবেক সলিসিটর জেনারেল (বর্তমান হিসাবে মন্ত্রী পদমর্যাদা) ছিলেন ফ্রান্সিস ফক্স। নিজের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে এক বিবাহিত মহিলার গর্ভপাতের জন্য একটি নথি জাল করেছিলেন। এ ঘটনার পর স্ত্রী জোয়ান পেনেফাদারের সঙ্গে তার বিয়েবিচ্ছেদ হয়। পরে ঘটনা জনসম্মুখে আসার দুই বছরের মধ্যে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

অতি সম্প্রতি সাবেক ফেডারেল জননিরাপত্তামন্ত্রী ভিক টোস তার ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান। কনজারভেটিভ পার্টির তরুণ একজন কর্মীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল এবং সে সম্পর্কে একটি সন্তানও রয়েছে।

লিবারেল পার্টির কর্মী অ্যাডাম ক্যারল অনলাইনে নথিপত্র ফাঁস করার পর ভিকের ব্যাপারে আরও এক তথ্য সামনে আসে। তার সন্তানদের দেখাশোনা করা কর্মীর সঙ্গেও অবৈধ সম্পর্ক ছিল তার। এরপর টোয়েসও ২০১৩ সালে তার পদ থেকে সরে যান। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন এই বলে যে, ‘এটি (রাজনৈতিক জীবন) পরিবারের জন্য সহজ জীবন নয়।’

২০০৫ সালে এমপি বেলিন্ডা স্ট্রোনাচের সঙ্গে ব্রেকআপের পর তখনকার কনজারভেটিভ ডেপুটি লিডার পিটার ম্যাককে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। খুব কমই রাজনীতিবিদরা তাদের সম্পর্ককে মিডিয়ার বাইরে রাখতে সক্ষম হন। দুবার তালাকপ্রাপ্ত সাবেক গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়েট সেই চেষ্টাটাই করেছিলেন। তবে তা ব্যর্থ হয়। ঘটনা জানাজানি হলে কাজে তিক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

পরে ২০২১ সালে তিনি গভর্নর জেনারেল পদ থেকে সরে আসেন। এসব ঘটনার মধ্যদিয়ে আরও যে তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো কানাডায় বিয়ের বন্ধন বিচ্যুতির পর প্রায়ই রাজনীতিবিদরা তাদের পদত্যাগ করেন।

সম্প্র্রতি টরন্টোর সাবেক মেয়র জন টোরির ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছিল। যিনি ২০২৩ সালের শুরুতে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার মাত্র চার মাস পরে পদত্যাগ করেছিলেন। কারণ হিসাবে সামনে আসে টোরি মহামারি চলাকালীন পার্টির একজন তরুণ কর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!