মুমূর্ষু গণতন্ত্র উত্তরণের দায়িত্ব কার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, নভেম্বর ৭, ২০২৩
  • 105 পাঠক

সম্পাদকীয়।০৭ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

দৃষ্টিনন্দিত কিছু উন্নয়ন দেশ বিদেশে প্রশংসিত হলেও আওয়ামী সরকার তার কিছু কর্ম ও নীতির কারণে সেসব মহলে সমালোচিতও হয়েছেন। সরকার নিজেকে নিপীড়নমূলক, অগণতান্ত্রিক এবং দেশের অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত করেছে তার গত তিন মেয়াদের শাসনে।

সরকারের অন্যতম প্রধান সমালোচনা হল গণতন্ত্রের নীতি সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতির বাস্তবনের চরম ব্যর্থতা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে একতরফা ভোট কারচুপি, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা এবং ভিন্নমতের কণ্ঠকে দমন করার মতো কৌশল ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটির প্রতিষ্ঠাতারা যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য লড়াই করেছিলেন তার উল্লেখযোগ্য অবক্ষয় ঘটেছে দারুনভাবে।

এছাড়াও, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা খবরও প্রায় পাওয়া যায়। এই লঙ্ঘনগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারা পরিচালিত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যা কোনো প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই।

সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত করার এবং স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে দমন করার পাশাপাশি নিজস্ব এজেন্ডা প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে মিডিয়াকে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে। যে কারণে এ দেশের সাধারণ পাঠক এখন আর কোন সংবাদমাধ্যমকেও বিশ্বাস আর আস্থায় রাখেনা। দৈনিক সংগ্রাম, আমার দেশ, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইত্যাদি মিডিয়াকে জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে তা হল এর অর্থনীতি। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে না আসার ব্যর্থতা, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বৃদ্ধির মতো কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও, সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলো আয় বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের সমস্যাগুলো মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে চুক্তি এবং অন্যান্য ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে তার সমর্থক ও মিত্রদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের খবর পাওয়া গেছে।

কোভিড-১৯ মহামারীতে সরকারের প্রতিক্রিয়াও যাচাইয়ের আওতায় এসেছে। যদিও সরকার প্রাথমিকভাবে ভাইরাসের বিস্তার রোধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, এটি একটি কার্যকর পরীক্ষা এবং ট্রেসিং সিস্টেম বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে। মহামারীর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের হেঁটে ঢাকা ফেরার ছবি এখনো মানুষের মনে ভাসে। গার্মেন্টস মালিকদের প্রণোদনা দেয়ার পরও কর্মীদের ওপর এমন জোরজবরদস্তির খবরটি মানুষের চোখ এড়ায়নি।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকারের আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় যথেষ্ট কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। সংকটের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া অপর্যাপ্ত এবং সমস্যার মূল কারণগুলিকে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে।

উপসংহারে, বাংলাদেশ সরকার তার অগণতান্ত্রিক অনুশীলন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অর্থনৈতিক নীতি ও কোভিড মহামারী এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার জন্য সমালোচিত হয়েছে। যদিও দেশে কিছু ইতিবাচক উন্নয়ন হয়েছে, যেমন তৈরি পোশাক শিল্পের বৃদ্ধি, সরকারকে এই সমালোচনাগুলি মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক সমাজের দিকে কাজ করতে হবে।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো যাতে সমুন্নত হয় এবং ক্ষমতার পদে থাকা কয়েকজন ব্যক্তির কর্মকাণ্ডে দেশের অগ্রগতি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এটিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে সত্যিকার অর্থে তার সম্ভাবনা পূরণ করতে পারবে।

একটি উদার গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখা ও বিশ্বের দরবারে ৯০’র স্বৈরতান্ত্রিকতার অবসান ঘটানো প্রিয় বাংলাদেশ যেন আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিকতার পরিণতির কলঙ্কে আর কোন গণতন্ত্রকামী মানুষকে যেন বুলেটবিদ্ধ হতে না হয় সে দায়িত্ব পালনের দায়িত্বও শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের।

যেহেতু, অনেক অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা আর রক্তের বিনিময়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় রচিত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থাকে নিজস্ব আঙ্গিকে নাস্তানাবুদ করে নিজ দলীয় কর্তৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রথার কারিগর শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনরাই ; সে কারণে ফের সংসদীয় ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জ্জীবনের পূর্বাপর দায়িত্বটুকু তাঁদের ওপর বর্ত্যায়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!