পুঁজিবাজারে বিদেশিরা আর আস্থা পাচ্ছেন না ?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
  • 52 পাঠক

—————————————————–

৬৫ শতাংশ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন তারা

—————————————————-

দিশারী ডেস্ক। ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

পুঁজিবাজারে নতুন করে বৈদেশিক বিনিয়োগ নেই। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়োজন করা ‘রোড শো’ কাজে আসেনি। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশিদের লেনদেন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে।

গত দেড় বছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন, ‘ ফ্লোর প্রাইস ’ আরোপ ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে ঢালাও পতনকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ‘ ডাবল ব্লো ’ বা ‘ দ্বৈত আঘাত ’ হিসেবে দেখছেন।

ডিএসইতে সর্বোচ্চ মূল্যের ১০০ তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্রেড প্রবণতা থেকে জানা যায়, মাত্র ৩২টিতে বিদেশিদের শেয়ার আছে। শুধু একটি সিমেন্ট কোম্পানি ছাড়া অন্যগুলোতে শেয়ারের পরিমাণও খুবই সামান্য। অধিকাংশ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিদেশিরা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, গুটিকয়েক কোম্পানির শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগ এই সময়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া অর্থের পরিমাণের অর্ধেকেরও কম।

এ ব্যাপারে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে এটি সত্যি। তবে ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ আটকে আছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, করোনা-পরবর্তী সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। তবে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা রয়েছে এবং আশা করি নির্বাচনের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অতিমারি করোনা সংক্রমণের বছর মার্চে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়লে দরপতন ঠেকাতে প্রথমবারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয় বিএসইসি। এর পর থেকে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমতে থাকলেও ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। তবে তা স্থায়ী হয়নি।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আবারও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে সরে যেতে শুরু করেন। এরপর একই বছরের জুলাইয়ে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হতে থাকলে বিএসইসি আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়। ফ্লোর প্রাইস হলো একধরনের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণী ব্যবস্থা, যা দরপতন ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়।

২০১৮ সালে সর্বশেষ এক বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মতো বিদেশিরা লেনদেন করেছিলেন। মাসিক হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ট্রেডের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫০ কোটি টাকা। তবে ইতোমধ্যে শেয়ারবাজার থেকে তারা তুলে নিয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফ্লোর প্রাইস বা ‘ সর্বনিম্ন দর ’ আরোপের কারণে অনেক শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে যায়। পরে ডলারের সংকটে টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ‘ ব্লক মার্কেটে ’ বাল্ক শেয়ার বিক্রি করে অর্থ তুলে নিয়ে গেছে।

এদিকে বিএসইসি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে আনতে বিদেশে একাধিক ‘রোড শো’ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সর্বশেষ গত অক্টোবরে জার্মানি, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে পৃথক ‘রোড শো’তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানান।

ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেন, শেয়ারের দর কমে যাওয়া, ফ্লোর প্রাইস আরোপ ও ডলারের বিপরীতে টাকার দর হ্রাস- এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ বাজারের ওপর আর আস্থা পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একধরনের ‘ডাবল ব্লো’। এতে আমাদের শেয়ারবাজার নিয়ে তাদের মধ্যে অবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে। ওরা তো ব্যবসা করতে আসে। ফ্লোর প্রাইস বলবৎ থাকায় তারা ট্রেডও করতে পারছে না।

ডিএসইর গত রবিবারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্রামীণফোনে বিদেশিদের শেয়ার ডিসেম্বর ২০২২-এ ছিল ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত মাস নভেম্বরে তা কমে হয়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

পদ্মা অয়েলে হোল্ডিং জুন ২০২২ শেষে ছিল শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত নভেম্বরে তা কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ। মেঘনা পেট্রোলিয়ামে কমে হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সিভিও পেট্রোকেমিক্যালে কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ। যমুনা অয়েলে জুন ২০২২ সালে ছিল শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। গত নভেম্বরে তা হয়েছে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ।

ইউনিলিভারে গত মার্চে ছিল শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। নভেম্বরে তা কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ।

হাইডেলবার্গ সিমেন্টে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ছিল শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে কমে হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ক্রাউন সিমেন্টে আছে শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, গত জুন ২০২২ সালে ছিল শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বিএটিবিসিতে গত ডিসেম্বর ২০২২ শেষে শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত নভেম্বর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, ফুড এগ্রো প্রসেসিং খাতের শিল্পসহ অনেক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নেয়া হয়েছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড নিবন্ধিত। এর মধ্যে গত রবিবার ট্রেড বা লেনদেন হয়েছে ৩৪২টি কোম্পানির শেয়ার।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!