অর্থ-সম্পদ আত্মসাতের পরিণতি ভয়াবহ

  • আপডেট সময় রবিবার, জুলাই ১৪, ২০২৪
  • 275 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা । ১৪ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

বিগত কয়েক বছরে অনলাইনে ইমো প্রতারণা বেড়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইমো হ্যাক করার মাধ্যমে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই অ্যাপটির ব্যবহারকারী বেশির ভাগ প্রবাসী হওয়ায় তাঁদের টার্গেট করা হচ্ছে বেশি। আজ আমরা আলোচনা করব ইসলামের দৃষ্টিতে ইমো হ্যাকিং ও হ্যাকারের ফাঁদে পা দেওয়া কতটুকু বৈধ সে বিষয়ে।

ইমো কী

ইমো হলো স্মার্টফোন ব্যবহার করে অডিও বা ভিডিও ফোনকল বা বার্তা লেনদেনের একটি অ্যাপ। ২০০৫ সালে তৈরি হওয়া এই অ্যাপের সারা বিশ্বে ৫০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মেসেঞ্জিং অ্যাপের তুলনায় ইমোতে কম ব্যান্ডউইডথ লাগে। সেই সঙ্গে এই অ্যাপটি একাধিক ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। তাই অনেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

যেভাবে ইমোর মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, মোবাইলে ভিডিও কল ও মেসেঞ্জিং অ্যাপ ইমো বাংলাদেশের প্রবাসী এবং তাঁদের স্বজনদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। ফলে প্রবাসীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে প্রতারকরা এই অ্যাপটি বেছে নেয়।

প্রতারকরা সাধারণত মেয়ে সেজে নারীকণ্ঠে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সুন্দর চেহারার ছবি দিয়ে কথিত নারীর আইডি থেকে মেসেজ দেয়া হয় প্রবাসীদের। এরপর শুরু কথোপকথন ও ছবি আদান-প্রদান। সুন্দর ছবি ও মধুর কণ্ঠের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার ফলে সহজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রবাসীরা। পরে ভিডিও কলের প্রলোভনে কৌশলে প্রবাসীদের ইমো আইডি নেয়া হয় নিয়ন্ত্রণে।

এরপর ইমো নম্বর পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি হিস্ট্রিতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের নম্বর সংগ্রহ করে নানা বাহানায় হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে আবার পরিচিতমহলের লোকদের হাতে মোবাইল ফোন গেলে তারা কৌশলে ইমোর ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে ইমো আইডি অন্য মোবাইলে সচল করে। এরপর এই ফোনে যেসব তথ্য আদান-প্রদান করা হয়, সেগুলো প্রতারকের ফোনেও চলে যায়। সেখান থেকে স্পর্শকাতর ছবি-ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করা হয়।

প্রতারক যে কয়টি পাপে লিপ্ত হয়

এখানে একজন প্রতারক কয়েকটি পাপে লিপ্ত হয়—

১. অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করা : প্রতারণা করে ওটিপি হাতিয়ে নেয়, যা হারাম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)

২. অন্যের গোপন তথ্য হাতানোর চেষ্টা : এটা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারো গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান কোরো না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

৩. অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা : সাধারণত অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এসব করা হয়। অথচ রাসুল (সা.) চক্রান্তকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, অভিশপ্ত সে, যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)

৪. অন্যের সম্ভ্রমহানি করা : অনেক সময় প্রতারকচক্র প্রতারিত ব্যক্তির ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তার গোপন ছবি বা ভিডিও ইমোর স্টোরিতে ছেড়ে দিয়ে তার সম্ভ্রমহানি করে। বলা হয়, টাকা না দিলে আরো তথ্য ফাঁস করে দেবে। অথচ এটা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। কিয়ামতের দিন এই পাপের শাস্তি ভয়াবহ হবে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয় সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)

৫. অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেয়া : মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া হারাম করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ হে মুমিনরা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে না, তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ, তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এমন কাজ করলে তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, তা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩০)

মহান আল্লাহ সবাইকে এসব পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া থেকে বিরত রাখুন। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুনাহের প্রতি আকর্ষণ তথা বেগানা নারীর সঙ্গে কথা বলার নেশা থেকে মানুষ এ ধরনের প্রতারণায় পড়ে যায়। তাই এ ধরনের বাসনা মনে এলে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

কারো হাতে নিজের ফোন আনলক অবস্থায় ছেড়ে না দেয়াই ভালো। এমনকি কোনো মেকানিকের কাছে মোবাইল ফোন ঠিক করানোর প্রয়োজন হলে দাঁড়িয়ে থেকেই তা সারিয়ে আনা উচিত। কেউ ফোন করে কোনো মেসেজ বা কোড জানতে চাইলে তা কোনো অবস্থাতেই দেয়া যাবে না।

অনলাইনে একান্ত প্রিয় মানুষের সঙ্গে কল অথবা মেসেজে এমন কোনো ফাইল শেয়ার করা উচিত নয়, যা অন্যের হাতে গেলে বিব্রত হতে হবে। কারণ এগুলো যেকোনো মুহূর্তে হাতছাড়া হতে পারে।

আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!