হুমায়ুন কবীর । ২৯ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
বিয়ে আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে বাঁচতে পারে, আদর্শ পরিবার গঠন করতে পারে, জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারে।
আল্লাহ বলেন, ‘ তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন মাওয়াদ্দাহ এবং রহমাহ তথা ভালোবাসা এবং দয়া।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা বিয়ে করো। কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের মাধ্যমে উম্মতের সংখ্যাধিক্যের ব্যাপারে গর্ব করবো।’ (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, ৭/৭৮)। এখানে বিয়ের কয়েকটি কল্যাণকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো—
মানবজাতির সংরক্ষণ: পৃথিবীতে বিয়েই হলো মানবজাতি সংরক্ষণের একমাত্র বৈধ উপায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ আল্লাহ তোমাদের স্বজাতির মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদের জন্য তোমাদের জোড়া থেকে পুত্র-পৌত্রাদি বানিয়েছেন আর তোমাদেরকে উৎকৃষ্ট রিজিক দিয়েছেন…।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ আমি আপনার আগে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছি। আমি তাদের দান করেছি স্ত্রী-সন্তান।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ৩৮)
চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা হয় :
বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা হয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে শয়তানের পেতে রাখা নানা ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ যখন আল্লাহর কোনো বান্দা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা তার দায়িত্ব হয়ে পড়ে।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, ৬২৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘ হে যুবসমাজ, তোমাদের উচিত হলো বিবাহ করা। বিবাহ দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তবে কারও বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে, তার উচিত রোজা রাখা। রোজা যৌনশক্তি দমন করে রাখে।’ (তিরমিজি, ১০৮১)
মনের স্থিরতা ও প্রশান্তি অর্জন :
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করতে পারো।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)। এটাও বিয়ের একটা বিশেষ সফলতা যে, বিয়ে মানবমননে প্রশান্তি আনে। সুস্থ চেতনাবোধ জাগ্রত করে। দায়িত্ববোধ শিক্ষা দেয়। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ পৃথিবীই হলো ভোগের সামগ্রী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভোগের সামগ্রী হলো সৎ জীবনসঙ্গিনী।’ (মুসলিম, ১৪৬৭)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সৌভাগ্যের চার সোপানের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে প্রথমে বলেছেন, ‘নেককার স্ত্রী।’ (সহিহুত তারগিব, ২৫৭৬)
জৈবিক চাহিদা পূরণ :
জৈবিক চাহিদা মানবজীবনের একটা স্বাভাবিক চাহিদা। একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পরে প্রত্যেক সুস্থ মানুষ এই চাহিদা অনুভব করেন। এটা রাব্বুল আলামিনেরই সৃষ্টি এবং তিনিই এই চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা মানুষকে বলে দিয়েছেন। পৃথিবীতে যারা যখনই এই চাহিদার বিরুদ্ধে গেছে, তারা লাঞ্ছিত হয়েছে, অপদস্থ হয়েছে, ধিক্কৃত হয়েছে।
যেমন খ্রিষ্টানরা বহুবার বিভিন্ন শ্রেণির খ্রিষ্টানদের জৈবিক চাহিদা পূরণে নিষেজ্ঞাধা জারি করেছে। ফলে হয়েছে কী ? সময়ে সময়ে তাদের চার্চগুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। ইন্টারনেটে সার্চ করলে এখনো শত শত প্রমাণ পাওয়া যাবে।
একবার সাহাবিগণের একটি দল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে খাসি হয়ে যাওয়ার আবদার করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘ আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম, কিন্তু আমাদের কোনো সম্পদ ছিল না।
সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললাম, আমরা কী খাসি হয়ে যাব ? তিনি আমাদেরকে খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোনো নারীর সাথে একটা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও বিবাহ করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহতায়ালা যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যে আল্লাহতায়ালা জৈবিক চাহিদা পূরণের সহযোগী বানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তো কোরআন মাজিদে এবং হাদিসে নববিতে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এখানে শুধু একটা আয়াত উল্লেখ করা হলো।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ স্ত্রীগণ তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭) এই আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসির হলো, পোশাক যেমন মানুষের ইজ্জতের হেফাজত করে, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের ইজ্জতের হেফাজত করে।
লেখক: শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর-২।
Leave a Reply