আলেমা হাবিবা আক্তার | ১২ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
কোরআনের বর্ণনায় স্থান পেয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ও বৈচিত্র্য। কোনো ব্যক্তি যদি ঈমানের সঙ্গে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ও বিস্ময়গুলো উপলব্ধি করতে পারেন, তবে তা তাঁর ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ সুনিপুণ
আল্লাহ তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টিকুশলতায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তাই আল্লাহর সৃষ্টি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুনিপুণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৮৮)
আল্লাহ নিখুঁতভাবে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে তিনি কোনো খুঁত রাখেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না ; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি ? অতঃপর তুমি আবার দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৩-৪)
সৌন্দর্য অবলোকনের আহ্বান
নিম্নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের কোরআনের কয়েকটি আহ্বান তুলে ধরা হলো—
১. দেখো সুশোভিত আকাশ : মহান আল্লাহ বিস্ময় ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মহাকাশ দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তারা কি তাদের ঊর্ধ্বস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং তাকে সুশোভিত করেছি এবং তাতে কোনো ফাটলও নেই?’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৬)
২. দেখো প্রীতিকর ভূ-মণ্ডল : পরের আয়াতেই আল্লাহ ভূ-মণ্ডলকে প্রীতিকর আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদ্গত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৭)
৩. দেখো গ্রহ-নক্ষত্রের সৌন্দর্য : আল্লাহ গ্রহ-নক্ষত্রের সৌন্দর্যের প্রতি মানবজাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ‘ আমি আকাশ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং তা সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৬)
৪. আছে মনোরম উদ্যান : কোরআনে বৃক্ষ-তরুলতা ও উদ্যানকে মনোরম বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, অতঃপর আমি তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬০)
৫. উপভোগ কোরো গোধূলিলগ্নের সৌন্দর্য : আল্লাহ গোধূলিলগ্নের সৌন্দর্য তুলে ধরে বলেছেন, ‘ এবং তোমরা যখন গোধূলিলগ্নে তাদেরকে চারণভূমি থেকে ঘরে নিয়ে আসো এবং সকালে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬)
৬. লক্ষ করো ফলমূলের বৈচিত্র্য : বিচিত্র ফলমূল আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। মুমিন যা দেখে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন ; এবং আমি তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)
৭. বিচিত্র পাহাড় কেন দেখো না ? : আল্লাহ পৃথিবীতে যে বর্ণিল পাহাড় সৃষ্টি করেছেন তা দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ (তুমি কি দেখো না) পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের পথ—সাদা, লাল ও নিকষ কালো।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)
৮. প্রাণিজগৎ সম্পর্কে উদাস থেকো না : আল্লাহ প্রাণিজগতের বিস্ময়কর জীবনধারার প্রতি মুমিনকে দৃষ্টিপাতের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ তবে কি তারা দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কিভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ১৭)
সবচেয়ে সুন্দর মানুষ
আল্লাহর সৃষ্টিজগতে সবচেয়ে সুন্দর হলো মানুষ। মানুষের সৌন্দর্য শুধু তার রং বা আকার-আকৃতির ওপর নির্ভর করে না, বরং সে তার সৌন্দর্য পুরো অবয়বে ধারণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন—তোমাদের আকৃতি করেছেন সুশোভন, এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ৩)
মুমিন শুধু দেখার জন্য দেখে না
মুমিন আল্লাহর মহাবিশ্বের বিপুল সৌন্দর্য অবলোকন করে তার ঈমান বৃদ্ধি করে। সে মহান আল্লাহর মুরাকাবা করে এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে ও বলে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি এটা অনর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
Leave a Reply