দিশারী ডেস্ক। ০৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
নতুনত্ব না থাকায় উচ্চশিক্ষায় কলা ও মানবিকের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জিত না হওয়ায় অনুষদভুক্ত বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন চাকরির বাজারে।
ধারাবাহিকভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও কলা ও মানবিকের বিষয়ের চেয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিষয়গুলো পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। চাহিদা ফেরাতে বৈশ্বিক ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এসব বিভাগের কারিকুলামে নতুনত্ব আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, কলা অনুষদের উর্দু, ফারসি, আরবি এই বিষয়গুলো অবলম্বন করে চাকরির সুযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম দেখা যায় আমাদের এখানে। সেই কারণে এসব জায়গায় ভর্তি হতে চায় না শিক্ষার্থীরা। কিছু ছাত্র-ছাত্রী থাকে যারা একান্তই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়, তারা যদি সুযোগ পায় এসব বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হয়। পরিপূর্ণ আগ্রহ থেকে বিষয়টা পড়ে সে রকম না, পরীক্ষায় পাস এবং চাকরিতে সার্টিফিকেট দরকার সে জন্য পড়ে। এসব বিষয়ে চাকরির সুযোগ কম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও বিষয়গুলো তেমন গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয় না। এখানে নতুনত্ব আনা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার ৯৬৪ জন। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞানে ৪৪ হাজার ৪২৫ জন, বাণিজ্যে ৪১ হাজার ৩৮৫, প্রকৌশল ও কারিগরিতে ৫২ হাজার ৯১২ জন এবং বিজ্ঞানে ৩৮ হাজার ৩৬ জন অধ্যয়নরত ছিলেন।
অন্যদিকে ২০২১ সালে ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ২৫২ জন। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৪৫ হাজার ২৫৭ জন, বাণিজ্য অনুষদে ৩৯ হাজার ৩৯ জন, বিজ্ঞানে ৩৭ হাজার ১৮১ জন, প্রকৌশল ও কারিগরিতে ৫২ হাজার ১ জন এবং কৃষি ১৯ হাজার ৩৭০ জন।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বাড়লেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কলা ও মানবিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এ ছাড়া দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষার্থী প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিষয়গুলোতে অধ্যয়নরত, যা শতকরা হিসাবে ৪৩ ভাগের বেশি। কলা ও মানবিকের বিষয়গুলো নিয়ে পড়ছেন ৩৭ হাজার ৭৭৩ জন (১১.০৭ শতাংশ)। এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৫ হাজার ৫৮ জন, সামাজিক বিজ্ঞান ১১ হাজার ৯০০ জন এবং আইন নিয়ে পড়ছেন ২০ হাজার ৭৭২ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলা অনুষদের মধ্যে ভাষাভিত্তিক যেসব বিভাগ (আরবি, ফারসি, উর্দু, পালি, সংস্কৃত) রয়েছে, সেসব বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আলাদা করে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্য অনুষদের মতো মনোগ্রাফ, থিসিস বাধ্যতামূলক না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর দখল কম হচ্ছে।
এ ছাড়া টিউটোরিয়াল থাকলেও প্রেজেন্টশন কম থাকায় উপস্থাপনায় বড় দুর্বলতা রয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার মাধ্যম (ভাষা) নির্দিষ্ট না থাকায় ভাষাগত দুর্বলতা প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষার এক গ্র্যাজুয়েট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলা অনুষদের এসব বিষয় পড়ে চাকরি জীবনে কোথায় কাজে লাগবে সেটা শিক্ষকরাও জানেন না। এখানে ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হয় প্রথমে। সেটা শিখতেই আমাদের আগ্রহ চলে যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীকে সাহিত্যের গভীর বোধটা ধরিয়ে দেয়া দরকার শিক্ষকের। আউটকামবেজড কারিকুলাম এবং পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন দরকার।
গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২২ সালে ৪৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের আসন সংখ্যা কমিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন (৫১৫টি) কমানো হয়েছে কলা অনুষদের বিভাগগুলোতে।
এ ছাড়া সব বিভাগে বাধ্যতামূলক থিসিস মনোগ্রাফ করার কথা একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ থাকলেও বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার বলেন, আমাদের আউটকামবেজড সিলেবাস শুরু হয়েছে। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের (আইকিউএসি) মাধ্যমে আরও হালনাগাদ করা হবে। আমাদের ছাত্ররা এখন সংস্কৃতের বাইরে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, আইসিটি, ইংরেজি, বাংলা পড়ছে। এখন যেহেতু বিসিএসনির্ভর চাকরি, সেহেতু সবাই চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে। থিসিস চলতি বছর থেকে শুরু হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply