দিশারী ডেস্ক। ১৬ মার্চ,২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় চর আফজল ভূমিহীন বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক চরিত্র, বদমেজাজী স্বভাব, শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত, বই বিতরণ, উপবৃত্তি ও পরীক্ষার ফির নামে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছে।
স্থানীয় মাইন উদ্দিন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেনের সংঘটিত অন্যায়, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিচার চেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক-পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে গেলে বেলা সাড়ে ১১ টায়ও বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ বা শ্রেণীকক্ষের কোথাও দেখা মেলেনি ওই প্রধান শিক্ষকের। একপর্যায়ে খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন তিনি।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়ের সত্যতা স্বীকার করেন, সহকারী শিক্ষিকারাও। তবে প্রাক প্রাথমিকের শ্রেণীতে থাকা এক শিক্ষিকা বলেন, আমি এসেছি মাত্র কিছুদিন হলো। সব বিষয়ে আমার জানা নেই।
এ সময় পঞ্চম শ্রেীণর প্রায় ছাত্র অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, টাকা ছাড়া বই দেয়া হয়না, পরীক্ষাও নেয়া হয়না। একইসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন কিছুদিন আগে একজন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্ম করেছে বলেও স্বীকার করেন তারা। তবে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি নিয়ে এতোবেশি বাড়াবাড়ি করেননি।
মাইন উদ্দিন বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি তার পুত্রকে সামান্য ভুলের দায়ে গায়ের জেকেট খুলে বেদম মারধোর করেছে প্রধান শিক্ষক। এতে তার ওই পুত্রের হাতের আঙ্গুল ও বাম হাত ভেঙ্গে গেছে।
তিনি জানান, ফজলুর রহমান নামে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রামগতি হতে এখানে সাময়িকভাবে বদলি করে পাঠানো হয়েছে। তাকেও বেত্রাঘাত করেছেন প্রধান শিক্ষক আখতার।
তবে, ওই শিক্ষক এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
স্থানীয়রা দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক আখতার ওই শিক্ষকের বিষয়ে খারাপ মন্তব্য লিখলে তার চাকুরিজনিত সমস্যা হতে পারে। এমন ভয়ে ওই শিক্ষক মার খেয়েও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেননা। এ সময় তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক আখতারের দৌরাত্ম্য অনেক ওপরে। তিনি নাকি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় হতে শুরু করে প্রশাসনের অনেককে ম্যানেজ করে চলেন। তাই কেহ কোন অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মেলেনা সহজে !
এদিকে, বেশ কয়েক বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে শিক্ষকতা করেছিলেন রাবেয়া সুলতানা। ২০১১ সালে ওই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণকালে তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক আখতার।
রাবেয়া জানান, তিনি ওই টাকা দিতে না পারায় অন্য ব্যক্তির নাম শিক্ষক, শিক্ষিকার তালিকায় পাঠিয়ে তাকে প্রতারিত করা হয়েছে।
রাবেয়া দীর্ঘ কতেক বছর অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একপর্যায়ে, হতাশ হয়ে হাতিয়ায় দেওয়ানী মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলা দায়েরের অজুহাতে ওই শিক্ষিকার দুটি বাচ্চাকেও বিদ্যালয়ে ভর্ত্তির সুযোগ দেননি প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন। বিষয়টি চরম অমানবিক বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে বইয়ের নামে অর্থ আদায় বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আখতার কবলেন, হাতিয়া থেকে বই আনতে প্রায় সাড়ে নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে ওঠে হয়তোবা ছয় বা সাত হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাকীটা আমার পকেট থেকে দিয়েছি।
স্থানীয়রা আরো জানান, এ বিদ্যালয়ের পাশেই প্রধান শিক্ষক আখতারের বাড়ি। যে কারণে বিদ্যালয়টিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি।
এছাড়া কোন অভিভাবক কিংবা কোন সচেতন নাগরিক তার এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে সেসব অভিভাবক হেনস্থার শিকার হন বলেও দাবি করেন তারা ।
কতেক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন নিজের আয়ত্বে অনেকগুলো সিম রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরের স্থলে নিজের কাছে রক্ষিত সেসব সিমেরা নম্বর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির এক বৃহদাংশ অর্থ লোপাট করছেন তিনি।
বেশ ক’জন অভিভাবক বলেন, প্রধান শিক্ষকের দাপটে তারা অসহায়। তিনি কোন অভিভাবককে মানুষই মনে করেননা। তারা বলেন, এখানে আশে-পাশে আর কোন প্রথমিক বিদ্যালয় নেই। নয়তোবা তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের অন্যত্র নিয়ে যেতেন।
অবশ্য , প্রধান শিক্ষক আখতার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো ডাহা অসত্য বলেই দাবি করছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি জাফর আহমদ বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা কমিটির লোকজন সহসায় এসব নিয়ে বসবো।
এ বিষয়ে নোয়াখালীর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এ রকম একটা অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। অফিস খোলার পরই এ বিষয়ে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply