সুবর্ণচরের প্রস্তাবিত সৌর বিদ্যুৎ, বদলে যাবে নোয়াখালীর রুপ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪
  • 121 পাঠক

দিশারী রিপোর্ট। ১৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের জ্বালানী খাতে এক বিপুল স্বয়ংসম্পূর্ণতার খবর মেলবে বলে আভাষ দিয়েছেন সৌর বিদ্যুৎ পরিকল্পনাবিদরা।

তারা জানান, এতে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুতের জন্যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবেনা। জ্বালানী খাত যখন-তখন পরনির্ভরশীলতায় ভোগতে হবেনা। এ প্রকল্পের প্রভাবে এ অঞ্চলের মানুষ সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অবারিত সুবিধা ভোগ করবেন বলে মনে করছেন তারা।

তাছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনুৎপাদনশীল ভূমিরও উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হতে পারে বলে মন্তব্য করছেন তারা। এর সাথে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও যোগ হতে পারে সরকারের কোষাগারের হিসেবের খাতায়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুরের চরলক্ষীতে ৩২০ একর ভূমিতে একটি পরিকল্পিত সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন হাতে নিয়েছেন একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সৌর বিদ্যু উৎপাদন কোম্পানী চায়না ন্যাশনাল হেভি মেশিনারী কর্পোরেশন। যাতে বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ।

এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাবরে প্রস্তাবনাপত্র দিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ওই মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন-১ অধিশাখার দায়িত্বশীল উপসচিব সাইফুল ইসলাম আজাদকে আহবায়ক, পাওয়ার গ্রিড কোম্পনী অব বাংলাদেশ লিমিটেডের এর প্রতিনিধি,  সুবর্ণচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলার কৃষি কর্মকতা মো. হারুন অর রশিদ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আইপিপি সেলের প্রতিনিধিকে সদস্য মনোনীত করে একটি পরিদর্শন দল গঠন করা হয়।

একইসঙ্গে, ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলী আফরোজ স্বাক্ষরিত ওই প্রতিনিধি দলকে ওই পত্রে আগামী ৩০ কর্ম দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু, দীর্ঘ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্যমী বিষয়ে সজাগ হয়নি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষি দপ্তর। উপরন্ত, তারা যেন ওই প্রকল্পের বাধ সাজেন।

সম্প্রতি জেলার কয়েকজন গণমাধ্যম প্রতিনিধি সরেজমিনে গেলে ওই ভূমির বিশাল অংশই বিস্তীর্ণ এক অনাবাদী ভূমি হিসেবে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ ভূমির ব্যবহার প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উচ্ছ্বাসা প্রকাশ করে বলেন, এসব ভূমি প্রায় সারাবছরই অনাবাদী হিসেবে পড়ে থাকে। এখানকার মাটিতে এখনও লোনার গন্ধ কাটেনি। নেই উৎপাদনশীল উর্বরা শক্তি। তারা এ ভূমিকে কৃষিজ পন্য উৎপাদনের নির্ভরশীল ভূমি হিসেবে মনে করেননা।

তারা বলেন, এ লোনা মাটিতে তারা কিছু ধরনের ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েও বিভিন্ন সময়ে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থানীয় কৃষকেরা মনে করেন, অনুর্বরশীল এ ভূমি নামখাওয়াস্ত কৃষির পরিবর্তে কোন উৎপাদনশীল শিল্পে ব্যবহৃত হলে দেশের অর্থনীতিতে তা বিরাট অবদান রাখতে পারে।

এ বিষয়ে স্থানীয় মোহাম্মদপুর ইউপির নারী সদস্য আয়েশা খাতুন বলেন, আমাদের এখানে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইন থাকলেও বিগত ৫/৬ বছরে বিদ্যুৎ আসেনি। এ অঞ্চলে এমন একটি পরিবশেবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতের চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনই এ অঞ্চলের স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান তৈরী হবে। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যের বিরোধীতা করে তিনি আরো বলেন, এখানে মূলত এক ফসলী ফসলে আবাদ হয়। তাও উচ্চ ফলন হয়না।

স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম, নুর নবী, মাইন উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা এখানে বর্ষাকালে আমন ফলন করি। বছরের বাকী সময় এ ভূমি গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যহৃত হয়। আগে সামান্য পরিমাণ রবি শস্য হলেও মাটি লবনাক্ততার কারণে এখন তাও হয়না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে ছোট-বড় কিছু কল কারখানাও গড়ে ওঠতে পারে।

সূত্র জানায়, এ ভূমিতে উৎপাদনশীল কোন শিল্প কারখানার সম্ভাবনার পথের অন্তরায়েও রয়েছেন সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষীমহল। তারা চান, এসব ভূমি নিজেদের করায়ত্বে থাকলে নিজেরাই কৃষি ভূমির নামে দখলদারিত্ব বজায় রাখতে পারবেন। পাবেন বিভিন্ন সরকারী সুযোগ-সুবিধা।

এদিকে, সুবর্ণচরের কৃষকরা আরো বলেছেন, আমরা মাঠের মানুষ। আমরা মাটি চিনি। ব্যক্তিগতভাবে কে কি বলছেন, তা আমাদের জানা নেই। তবে এ ভূমি এখনো কৃষির জন্যে যথেষ্ঠ উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। তারা মনে করেন, এখানে ১০০ মেগওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নোয়াখালীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে সূচিত হবে নতুন আরেকটি অধ্যায়। যাতে বদলেও যাবে নোয়াখালী।

জেলার উন্নয়নকামী মানুষ মনে করেন, কোন ধরনের রাখডাক না করে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এমন অনাবাদী, লবনাক্ত ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের ১০০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়িত হলে জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় এক নতুন দ্বার সূচিত হবে।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!