——————————
আকাশ মো. জসিম
——————————-
প্রিয় হানিফ ভাই, তোমার বিদায়ের অপ্রত্যাশিত খবর জানার পর বরাবর ৩দিনই ছিলাম নেট-দুনিয়ার বাইরে। আজ পবিত্র ঈদের দিনে বারবার তোমার কথা খেয়াল হয়েছে। কেননা, প্রতিটি ঈদে তোমার মুঠোবার্তা পেতাম। ফোনালাপ হতো। এ প্রথম তোমার কোন বার্তা নেই। প্রায় ঈদের পরদিন মোটর সাইকেলে তোমার আর আমার ঘুরাঘুরিই ছিল পাঠ্যবইয়ের কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ আর রচনার ন্যায়।
একজনমে তোমাকে সফলই বলা যায়। প্রিয় হানিফ ভাই, তুমি নেই, বিশ্বাস করতে বুকটাই ধড়পড় হয়। বেদনাহত হৃদয়ে তোমার পুত্র, কন্যা, স্ত্রীকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। তুমি কারো কাছে হয়তোবা নিন্দিত হলেও তাতে আমার কোন বিরোধীতা নেই। কেননা আমার কাছে তুমি নন্দিত বলেই ছিলে প্রণোদিত।
তুমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি পছন্দ করতে। কিন্তু, আওয়ামী শোষন, দু:শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষায় নিজের সামাজিকতায় বলতে, লিখতে বিন্দুমাত্র দলদাস ছিলেনা কখনো। তোমার সাথে এসব জায়গায় ছিল আমার হুবহু মিল।
তুমি একজন স্কুল শিক্ষক ছিলে। এরপর তা ছেড়ে বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রতিনিধি পদেও কাজ করেছিলে কিছুদিন। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে আদ্যপ্রান্তে দেখেছি তোমার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা আর সংগ্রাম। তোমার সম্পাদনায় (ভারপ্রাপ্ত) জেলা শহর থেকে একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা দেখে আমি তোমার আরো কাছাকাছি হই। একপর্যায়ে, তোমার সাথে কেটেছে ২৪টি ঘণ্টার বেশির ভাগ সময়।
তোমাকে একদিন ফোন করে বললাম, সাপ্তাহিক নুরের মালিকানাটা তোমার জন্যে চূড়ান্ত করেছি। তুমি বলেছিলে যাই বলেন, সবই আপনার সিদ্ধান্ত ভাই। এরপর যাই লিখেছি, তুমি তার চেয়েও বেশি সম্মানে সম্মানিত করেছিলে মালিক চাচাকে। দেখেছি তোমার হৃদয়ের বিশাল গন্ডিলতা। পত্রিকাটি প্রকাশনায় মিল্টন ভাইকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে পরিচালনার বিষয়ে একটি বারও বারণ করনি তুমি।
তোমার হৃদয়কাড়া অনুরোধে পত্রিকাটির প্রকাশনার ধারা অব্যাহত রাখতে কিছুদিন জুয়েল রানা লিটনকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে এবং কিছু সময় রনি চৌধুরীকে বার্তা সম্পাদক করেও প্রকাশনার ধারা অব্যাহত রেখেছি। তোমার প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে পত্রিকাটি যত্নসহকারে লালনের চেষ্টা করেছি।
তোমার সাথে চট্রগ্রাম সীতাকুন্ডের সর্বোচ্চ পাহাড়ে ঘুরেছি। রামগতির ওপারে গিয়েছি। মোটর সাইকেলে লক্ষীপুৃর, চাঁদপুর, কত বার যে হাতিয়ার পাড়ে গেছি ; সে সব কিছুতেই যে ভুলার নই।
কিছুদিন আগে জনাব আবুল কালাম ভূইয়া ( কাকা ) বললেন, কাকা সাপ্তাহিক নুরটা হানিফ সাহেবকে প্রধান সম্পাদক লিখে আমি সম্পাদনা চালিয়ে যেতে চায়। আপনি একটু ব্যবস্থা করেন। তোমাকে বলার পর বললে, সবই আপনার সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমার কিছুই বলার নেই। এরপর তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিনামা সম্পাদন করে পত্রিকাটি জনাব ভুইয়া কাকাকে সম্পাদনা করতে সুযোগ করে দিই।
তুমি পত্রিকাটির পেছনে লাখ পেরিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করেছ। তবে জানামতে, একটি পয়সাও লাভের ঘরে ওঠেনি তোমার। কেননা তুমি তো চেয়েছিলে পত্রিকাটির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে কারো ঘর সংসারটা খেয়ে পরে কেটে যাক। আজ তারাই সংসার করছে, আর তুমি চিরদিনের জন্যে অন্যতে।
একপর্যায়ে তুমি পুরোপুরিই আইন পেশায় জড়িয়ে গেলে। ঢাকায় প্রায়মহলে তোমার পরিচয়ও কম হয়নি। তোমার নান্দনিক বাড়িটায় বেশি দিন ঘুমোতে পারনি। এবার ঈদের ৬টি দিন ওই বাড়িতে ঘুমোতে চেয়েছিলে তুমি। কিন্তু সব কিছু তছনছ করে শহীদি মৃত্যুর সাথী হয়ে পবিত্র রমজানের দিনেই চিরদিনের জন্যেই ঘুমিয়ে গেলে তুমি।
সামাজিকতায়ও কম ছিলেনা তুমি। তোমার সভাপতিত্বে পরিচালিত অজপাড়ার মসজিদটি নিমার্ণশৈলীতে কম নজর কাড়ার নয়। এছাড়া সমাজের বিভিন্নমহলে তোমার দান, অনুদানের কথা তোমার জানাজায় প্রকাশ্য স্বাক্ষ্য হয়। ওপারের সেসব আমল নিয়ে তুমি চির আবাসনে শান্তিতে ঘুমাও ভাই। এ শেষটাই যেন ভাল থেকো প্রিয় এডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক দিশারী।
Leave a Reply