বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় ?

  • আপডেট সময় রবিবার, জুন ৯, ২০২৪
  • 152 পাঠক

দিশারী ডেস্ক । ৯ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় ভুগছেন। ভয়ঙ্কর এই তথ্যটি ওঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায়।

এতে বলা হয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বেশি হতাশাগ্রস্ত। তাদের ৮৩ শতাংশই বিষণ্নতায় ভোগেন। তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে হতাশায় ভোগার হার ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশা উপসর্গের মধ্যদিয়ে শিক্ষাজীবন পার করেন। ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী একবার হলেও আত্মহত্যার চিন্তা করেছেন। শুক্রবার ৭ জুন, সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে জরিপ প্রকাশ করে।

————————————————————————————————————————-

৫২ শতাংশ  করেন আত্মহত্যার চিন্তা

————————————————————————————————————————-

‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শীর্ষক জরিপের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়।

জরিপে অংশ নেয়া ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোনোকিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরনের পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারার মতো অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিচ্ছেন।

হতাশার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার কারণে হতাশায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, হল বা আবাসিক পরিবেশ নিয়ে, সহপাঠী বা শিক্ষকের বুলিংয়ের কারণে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উপরের সব কারণের জন্য এক দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন।

শিক্ষাজীবনে অন্তত একবার হলেও আত্মহত্যা করার চিন্তা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী একবার হলেও আত্মহত্যার চিন্তা করেছেন। অংশগ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার উপকরণও জোগাড় করে ফেলেছিলেন এমন শিক্ষার্থী ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এলেও কোনো চেষ্টা করেননি ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপে মোট ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। বয়সের সীমা অনুযায়ী ১৭-২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন ৫৮০ জন, যা শতাংশের হিসাবে ৩৬ দশমিক ৯৪। ২৩-২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নেন ৯১৯ জন, যা শতাংশের হিসাবে ৫৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২৭-৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নেন ৭১ জন, যা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫৬ জন পুরুষ, ৮১৩ জন নারী এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের। তাদের মধ্যে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ২৫১ জন, দ্বিতীয় বর্ষের ২৫৪ জন, তৃতীয় বর্ষের ৩৬৯ জন, চতুর্থ বর্ষের ৩৪০ জন এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৪১ জন। এ ছাড়া সদ্য পড়ালেখা শেষ করা ১৫ জন।

জরিপে ওঠে এসেছে, বিসিএসসহ সরকারি চাকরির দিকে আগ্রহ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এর থেকেই বেশি ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী দেশে থেকে ক্যারিয়ার হিসেবে বিসিএসে ক্যাডার বা ভালো সরকারি চাকরি করতে চান। ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন মাত্র ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি চাকরি পেতে চান ৭ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ শিক্ষকদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ৪১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফ্যাকাল্টির শিক্ষকদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প এডিডি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!