যেন হারাম রোজগারে কোরবানের বাহাদুর না হই !

  • আপডেট সময় রবিবার, জুন ১৬, ২০২৪
  • 125 পাঠক

বিশেষ করে। ১৬ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

সন্নিকটে ঈ-উল-আযহা বরণের সরকারী, বেসরকারী যাবতীয় প্রস্তুতি। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থায় একটি ইবাদত পালনের পরম আপেক্ষিক সময়। আর যে ইবাদতটির পরিপূর্ণতায় হালাল রোজগারে নিজে অংশজনী করাটাই মহান প্রভূর কাছে অধিকতর পছন্দনীয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে এমন একটি ইবাদত পালন করতে গিয়েও আমরা অনেকেই খেয় হারায়। ভুলে যাই সততা, সত্যতা, সাধুতা, আর ন্যায়পরায়নতার কথা।

বিশেষ শাখার এক পুলিশ পরিদর্শক যেন মহাবেকায়দায় ! গত ক’দিন ধরে কোন মক্কেল পেলেই দাবি করে বসছেন, তাকে কোরবানীর গরু কিনে দেয়ার জন্যে।

নোয়াখালীর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে জনৈক বাদী মাত্র বিশেষ শাখার ( ডিবি ) কার্যালয়ে আদেশের কপিটি পৌঁছে দিলেন। আর সেদিনই পিয়ন নিল এক হাজার টাকা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এস আই) দাবি করলেন, একটা দেশী গরু। বাদী সর্বসাকুল্যে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ওই কার্যালয় থেকে কোন রকম গা বাঁচিয়ে এলেন।

ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি, অসভ্যতা আর বিচারহীনতার এমন সংস্কৃতির খবর জানা নেই বাদীর। বাদীর আক্ষেপ, মারধোরও খেলেন। অর্থকড়িও হারালেন। হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হচ্ছে। আদালতে মামলা করে এবার পুৃলিশের চাহিদাও পূরণ করতে হচ্ছে।

জানালেন, ওই রাতে মামলার ওই কর্মকর্তা মুঠোফোনে পরিষ্কার জানালেন, ঈদের আগেই দেখা করতে হবে। নয়তোবা বিবাদীদের কাছ থেকে তারা সুবিধা ভাগিয়ে নেবেন। হুমকি দিলেন, মামলাও নাকি খারিজ করে দেবেন ? ভুক্তভোগী বাদী জানান, আইন-আদালত, থানা -পুলিশে বিচার চাইতে গিয়ে পদে-পদে এসব হয়রানির কথা জানলে মামলার ধারে কাছেও যেতেননা তিনি।

এভাবে একটি পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপনের জন্যে মতি হারালেন দেশের প্রায় থানার পুলিশেরাও ? অথচ, নিজের হালাল উপার্জন বিনে কোরবানী করা হারাম, অন্যায়, নিন্দনীয় অপরাধ এবং চরম গর্হিত কাজ।

আর এসব কর্মকর্তা পদবীর পুলিশ যে পরিমাণ বেতন, বোনাস পেয়েছেন তা অনেকটাই একটি কোরবানীর জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু লোভ, লালসার সংসারে একটি সৎ, পরিশ্রমী ও ন্যায়ের জবাবদিহিতার অভাবে বেশ কিছুৃ কর্মকর্তা হারাম রোজগারে কোরবানের বাহাদুর সাজতে নিজেকে পাগল করে চলছেন।

জানামতে, সরকার পরিবারের এসব সদস্যদের জীবনচারিতায় আনন্দ, উৎসব আর খুশির খবর বরাবরই অবারিত। তবুও পেট ভরে না। আরো চায়। এসব কর্মকর্তাদের অনেকের বেতন, বোনাস সবই পরিপাটি। নেই কোন ধরনের কান্না-কাটি। মহাধুমদামের ঈদানন্দ তাদের। তবুও বাড়তি সুবিধা গ্রহনের নেশায় উন্মাদনার মহাঅসুখে ভোগেন তারা।

অবশ্য, সরকারী কর্মচারীদের মধ্যেই কিছু ফারাকও রয়েছে।কিছু সদস্যই অনেকটা নিরান্দন। অনেকের বেতন হয়েছে। বোনাস হয়নি। অনেকের বোনাস হয়েছে, বেতনটা আটকা। তবুও তাঁরা মানসিকতায় অনেক বেশি সুখি। নির্লোভ, সুস্থ্য , সাবলীল, মানসিকতায় জীবনাবাস তাদের। সেসব সদস্যদের অনেকের বেতন, বোনাস মিলেও একটি পরিপূর্ণতা ঈদুল আযহার পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক নয়। তবুও একটি দুর্নীতিমুক্ত, উদাসহীন ও উন্মাদনাহীন জীবনের আলোয় আলোকিত ও সুসভ্য তাঁরা ।

এদিকে, নাগরিক জীবনের চারদিকে হা-হুতোশ। অভাব, অনটন।নানা টানাপোড়নের খবর। এরই মধ্যে এবারের ঈদ-উল-আযহার ঘনঘটা। আর কয়েক ঘণ্টা পরই চূড়ান্ত তালিম, তাকবির। মসজিদের মাইকে মাইকে প্রচারিত হবে ঈদের জামাতের সময়সূচির খবরাখবর।

নামাজ শেষেই প্রত্যাশিত পশুর কোরবানী। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এ সাথে আমরা যেন আমাদের মনের হিংস্র পশুত্ব রোধে সামর্থ্য হই। চারদিকের সন্ত্রাস, লোভ, লালসা, অসততা, প্রতারনা, অন্যায়, স্বার্থান্ধ, দখলদারিত্ব আর পাপিষ্ঠ জীবন থেকে একটি পবিত্র মানসিকতায় যেন উত্তরিত হই।

একইসঙ্গে, সামর্থ্যবান যারা এ ঈদুল আযহায় কোরবানী দিতে সামর্থ্যবান হয়েছেন , তারা যেন অসমর্থদের কোন ধরনের হক থেকে বঞ্চিত না করি, সে আশাই রাখছি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!