রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের সাক্ষাৎ হয়েছিল কিভাবে ?

  • আপডেট সময় বুধবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
  • 15 পাঠক

আতাউর রহমান খসরু
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ 

মহানবী (সা.) শুধু মানবজাতির নবী ছিলেন না, বরং তিনি মানুষ ও জিন উভয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে জিনদের মধ্যে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার বর্ণনা আছে।

জিনরাও আল্লাহর ইবাদত করে

মানুষের মতো জিনরাও মুকাল্লাফ তথা আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত। তাদের জন্য ঈমান আনা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

যেহেতু মানবজাতির মতো জিন জাতিও আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের ব্যাপারে আদিষ্ট। তাই পরকালে তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং অবাধ্যতার জন্য শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ উভয়ের মাধ্যমে জাহান্নামকে পূর্ণ করব।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘ আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)

জিনদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ

রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের ছয়টি পৃথক সাক্ষাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যার মধ্যে দুইবার মক্কায়, তিনবার মদিনায় এবং একবার মদিনার বাইরে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।

পবিত্র কোরআনেও জিনদের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর সাক্ষাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ বলুন! আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কোরআন) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথের নির্দেশ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১-২)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে না পেয়ে সাহাবায়ে কিরাম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি ফিরে এসে বলেন, ‘ আমার কাছে একদল জিন এসেছিল। আমি তাদের সঙ্গে যাই এবং তাদের সম্মুখে কোরআন তিলাওয়াত করি।’ অতঃপর নবী (সা.) আমাদের নিয়ে যান। আমাদেরকে তাদের চিহ্ন ও তাদের আগুনের চিহ্ন দেখান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৫০)

সাহাবি কারা ?

বেশির ভাগ আলেমরা বলেছেন, যাঁরা ঈমানের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁরাই সাহাবি। যেমন—ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা নবীজি (সা.)-এর সঙ্গ বা সাক্ষাৎ পেয়েছেন তাঁরাই তাঁর সাহাবি। (আল কিফায়া, পৃষ্ঠা-৫১)

জিনদের সাহাবি বলা যাবে ?

উল্লিখিত সংজ্ঞার আলোকে ফকিহ আলেমরা বলেন, যেহেতু মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের সাক্ষাৎ এবং তাদের ঈমান গ্রহণের বিষয়টি কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তাই যেসব জিন ঈমানের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছে, তারাও সাহাবি হিসেবে গণ্য হবে।

হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, ‘ গ্রহণযোগ্য মত হলো, জিনরা সাহাবায়ে কিরামের অন্তর্ভুক্ত হবেন। কেননা সন্দেহাতীতভাবে নবীজি (সা.) তাদের জন্যও প্রেরিত হয়েছেন। তারা মুকাল্লাফ তথা আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে বাধ্য ও অনুগত রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে যার নাম জানা যায় তার সাহাবি হওয়ার সঙ্গে সংশয় করা উচিত নয়। (ফাতহুল বারি : ৭/৪)

জিন সাহাবিদের মর্যাদা

মুমিনের জন্য মানুষ সাহাবিদের মতো জিন সাহাবিদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হওয়া আবশ্যক। আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.) বলেন, কোনো মুসলিম এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করবে না যে তাঁরা নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন। যে ব্যক্তি বিষয়টি অস্বীকার করবে, কোরআন অস্বীকার করার কারণে সে কাফির। অন্য সব সাহাবির মতো জ্ঞান ও দ্বিনদারির জায়গা থেকে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে মুসলমানের কোনো সন্দেহ নেই। (ইলাউস সুনান : ১৪/২২৪)

জিন সাহাবির সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ

জিন সাহাবিদের সঙ্গে মানুষের একাধিক সাক্ষাতের প্রমাণ রয়েছে। যেমন—একবার ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) ফুলাত এলাকায় হাঁটছিলেন। সেখানে তিনি একটি মৃত সাপ দেখতে পেলেন। তিনি তাঁর চাদরের বাড়তি অংশ দিয়ে তার কাফন করলেন এবং দাফন করলেন। তখন একজন বলল, হে সারাক ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছে, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তুমি ফুলাত নামক স্থানে মারা যাবে এবং একজন নেককার ব্যক্তি তোমাকে দাফন করবে।

ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) বললেন, তোমার প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করুন! তুমি কে ? লোকটি বলল, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে কোরআন শ্রবণকারী জিনদের একজন। তাদের মধ্যে থেকে আমি ও সারাক অবশিষ্ট ছিলাম। আজ সারাক ইন্তেকাল করল। (তাফসিরে কুরতুবি : ১৬/১৪২)

জিন সাহাবিদের সংখ্যা

প্রকৃতপক্ষে জিন সাহাবিদের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় এমন একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, নবীজি (সা.)-এর কাছে কোরআন শ্রবণকারী ও তাঁর পেছনে নামাজ আদায়কারী জিনদের সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজারেরও বেশি। (আল ইসাবা : ৬/২৭৭)

এই বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায়, জিন সাহাবিদের সংখ্যা মানুষ সাহাবিদের প্রায় সমান বা তার চেয়েও বেশি ছিল।

কয়েকজন জিন সাহাবির নাম

আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) তাঁর ‘আল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ’ বইয়ে ২২ জন জিন সাহাবির নাম-পরিচয় উল্লেখ করেছেন। তাঁদের কয়েকজন হলেন হামা, আহকাব, আরকাম, মুতাকিদ, জাওবাআ, হাসির (রা.) প্রমুখ।

এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্রে যেসব জিন সাহাবির নাম জানা যায় তাঁরা হলেন আমর বিন জাবির, উসাইম, আমর বিন তালাক, ওরদান, খিরকা, ফারিয়া, সামহাজ, ঝাওবাআ, জুলআব, শাসির, উরফাতা, লাহকাম (রা.) প্রমুখ। (উজামাউল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৫০)

আল্লাহ সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন এবং তাঁদের জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!