বিপদ কখনো কখনো সুখও বয়ে আনে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
  • 96 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা। ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিপদ সব সময় মানুষের ধ্বংসের জন্য আসে না, কখনো কখনো বিপদ বড় সফলতার রাস্তা উন্মোচন করে দেয়। যেমন—ইউসুফ (আ.)-এর বিপদগুলো তাঁকে সময়ের ব্যবধানে রাজত্বের অধিকারী বানিয়েছিল। আমাদের নবীজি (সা.)-এর জন্য কুরাইশদের পেতে রাখা বিপদ মক্কা বিজয়ের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছিল।

বিপদ-আপদ মূলত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। কখনো কখনো বিপদ-আপদ মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, বিশেষ করে যারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করে, মহান আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দেন।

———————————————————————————————-

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫)

———————————————————————————————-

আয়াত দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, দুনিয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করারই জায়গা। কখনো রাত, কখনো দিন, কখনো কান্না, কখনো হাসি নিয়েই দুনিয়ার জীবন। সুতরাং কোনো বিপদে পড়লে তাকে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে না করলেই ধৈর্য ধারণ করা সহজ হয়ে যায়।

বিপদে ধৈর্য ধারণ বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করে দেয়। তখন বিপদই বান্দার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। তবে বিপদে আল্লাহর ওপর ভরসা হারালে তা নিছক বিপদই থাকে বা আরো বড় বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

———————————————————————————————-

সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধরে, প্রতিটিই তার জন্য কল্যাণকর। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)

———————————————————————————————-

সব ক্ষেত্রে বিপদে পড়ার মানে এই নয় যে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিটি আল্লাহর অপ্রিয়। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরো বেশি পরীক্ষা করেন। তাদের পুরস্কার যেমন বড়, বিপদও তেমন বড়। এটা নবীজি (সা.)-এরই বাণী।

আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর ওপর আমার হাত রাখলে তাঁর গায়ের চাদরের ওপর থেকেই তাঁর দেহের প্রচণ্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কত তীব্র জ্বর আপনার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের (নবী-রাসুলদের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের ওপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়।’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কার ওপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে ? তিনি বলেন, ‘নবীদের ওপর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর কার ওপর ?

তিনি বলেন, তারপর নেককার বান্দাদের ওপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র্য পীড়িত হয় যে শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে তাঁর পরিধানের কম্বলটি ছাড়া কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উত্ফুল্ল থাকে, যেমন—তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২৪)

বিপদ কখনো কখনো মানুষের গুনাহ মাফেও সহযোগী হয়। বান্দার ওপর বিপদ এলে সে যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধৈর্য ধরে, তখন তা তার গুনাহ মাফে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ছোট থেকে ছোট বিপদও মুমিনের গুনাহ মাফে সহায়ক হয়।

———————————————————————————————-

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)

———————————————————————————————-

অনেক সময় বিপদ-আপদগুলো শত্রুদের প্রপাগান্ডার কারণে তৈরি হওয়ায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমাদের উচিত তখনো এই বিষয়গুলো আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয়া। নিজেকে সত্যের ওপর অবিচল রাখা।

কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতি সাধন করে, আল্লাহ তাআলা তা দিয়েই তার ক্ষতি সাধন করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)

তাই আমাদের উচিত বিপদের দিনে ভেঙে না পড়ে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা। আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ দুশ্চিন্তাকে আনন্দে পরিণত করবেন। উত্তম থেকে উত্তম প্রতিদান দেবেন। শত্রুকে তার পাতানো ফাঁদেই সমাধিস্থ করবেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!