জালিমের করুণ পরিণতি কি হয় ?

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
  • 32 পাঠক

আল্লাহ কখনো কখনো জালিমদের অবকাশ দেন, যে অবকাশ তাদের অপরাধবোধ ওঠিয়ে নেয়, ফলে তারা দাম্ভিকতার সঙ্গে জুলুম করে। শয়তান তাদের অন্যায়গুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে দেয়, একসময় তারা জুলুম করতে করতে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা । ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু কুখ্যাত জালিম এসেছিল, যাদের জুলুমের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তারা নিজেদের খোদা ভাবতে শুরু করেছিল। তাদের দৃষ্টিতে তৎকালীন যুগে তাদের দমানোর সাহস কারো ছিল না, যা তাদের ঔদ্ধত্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তাদের লাঞ্ছনাকর সমাপ্তি পৃথিবী দেখেছে।

মহান আল্লাহ বারবার পৃথিবীবাসীকে শিক্ষা দিয়েছেন, জালিমদের দৌরাত্ম্য ও অপ্রতিরোধ্য শোডাউন দেখে মুমিনের মনোবল হারানোর কিছু নেই, এটাও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।

মুমিনের উচিত আল্লাহর নাফরমানদের ধন-দৌলত ও শক্তি-সামর্থ্যে ভীত না হয়ে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখা। এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে অবিচল থাকা। নিজেদের কখনোই অসহায় না ভাবা। কারণ আল্লাহ কখনো কখনো জালিমদের অবকাশ দেন, যে অবকাশ তাদের অপরাধবোধ ওঠিয়ে নেয়, ফলে তারা দাম্ভিকতার সঙ্গে জুলুম করে, শয়তান তাদের জুলুমের সপক্ষে তাদের জন্য অনেক যুক্তি দাঁড় করিয়ে দেয়, তাদের অন্যায়গুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে দেয়, একসময় তারা জুলুম করতে করতে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।

———————————————————————————————-

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ সুতরাং তারা কেন বিনীত হয়নি, যখন আমার আজাব তাদের কাছে এলো ? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা করত, শয়তান তাদের জন্য তা শোভিত করেছে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৩)

———————————————————————————————-

অর্থাৎ কোনো জাতি যখন চারিত্রিক অবনতি এবং অনুচিত কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে নিজেদের অন্তঃকরণে জং লাগিয়ে নেয়, তখন আল্লাহর আজাবও তাদেরকে উদাসীনতার নিদ্রা থেকে জাগাতে এবং তাদের মনে পরিবর্তন আনতে অসফল হয়।

তাদের হাত ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহর সামনে ওঠে না, তাদের অন্তর তাঁর কাছে বিনয়ী হয় না এবং সংশোধন হওয়ার প্রতি তাদের কোনো আগ্রহও জাগে না ; বরং নিজেদের মন্দ আমলগুলোর ওপর অপব্যাখ্যা ও অজুহাতের সুন্দর চাদর চাপিয়ে নিজেদের মনকে সন্তুষ্ট করে নেয়।

একসময় মহান আল্লাহর দরবার থেকে চূড়ান্ত ফায়সালা চলে আসে, তখন তাদের আর কিছুই করার থাকে না।

————————————————————————————————

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের ওপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল্ল হলো, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৪)

————————————————————————————————–

এ আয়াতে বলা হয়েছে যে তাদের অবাধ্যতা যখন সীমাতিক্রম করতে থাকে, তখন তাদেরকে একটি বিপজ্জনক পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। অর্থাৎ তাদের জন্য দুনিয়ার নিয়ামত, সুখ ও সাফল্যের দ্বার খুলে দেওয়া হয়।

এতে সাধারণ মানুষকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে দুনিয়ায় কোনো ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্পদের প্রাচুর্য দেখে ধোঁকা খেয়ো না যে তারাই বুঝি বিশুদ্ধ পথে আছে এবং সফল জীবন যাপন করছে। অনেক সময় আজাবে পতিত অবাধ্য জাতিসমূহেরও এরূপ অবস্থা হয়ে থাকে।

তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত এই যে তাদেরকে অকস্মাৎ কঠোর আজাবের মাধ্যমে পাকড়াও করা হবে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা দেখ যে কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় ধন-দৌলত প্রদান করছেন, অথচ সে গুনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে, তাকে ঢিল দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তার এ ভোগবিলাস কঠোর আজাবে গ্রেপ্তার হওয়ারই পূর্বাভাস। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/১৪৫)

————————————————————————————————–

নবীজির এই হাদিস দেখলে কুখ্যাত জালিম ফেরাউনের কথা মনে পড়ে যায়, যাকে মহান আল্লাহ পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন, ইতিহাসের আরেক অপ্রতিরোধ্য জালিম নমরুদ, যাকে মহান আল্লাহ দুর্বল লেংড়া মশা দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। এভাবেই মহান আল্লাহ যুগে যুুগে কুখ্যাত জালিমদের সব অহংকারকে মুহূর্তে ভষ্ম করে দিয়েছেন।

————————————————————————————————–

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!