শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
মানুষ হায়ওয়ানে নাতিক বা বাক্শক্তিসম্পন্ন প্রাণী। একই সঙ্গে মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ ভাষার মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করে, তথ্য আদান–প্রদান ও যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন করে।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘ দয়াময় রহমান কোরআন শেখাবেন বলে মানুষ সৃষ্টি করলেন; তাকে বয়ান (ভাষা ও ভাব প্রকাশ) শিক্ষা দিলেন।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ১-৪)
কথা বলার আদবকায়দা অনুসরণের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সুরা-৫০ কাফ, আয়াত: ১৮)
———————————————————————————————-
উপদেশ দিতে হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসার চেতনায়। রূঢ়, কর্কশ ও কঠিন ভাষায় বা অশোভন আচরণে নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘ তুমি মানুষকে দাওয়াত দেবে তোমার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’
———————————————————————————————-
‘আর মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৮৩) ‘ তুমি সংযতভাবে পদক্ষেপ করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো ; নিশ্চয় গাধার স্বরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’ (সুরা-৩১ লোকমান, আয়াত: ১৯) ‘ হে মুমিনগণ ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো; তবে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে, অবশ্যই তারা মহাসফলতা অর্জন করবে।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৭০-৭১)
মুমিন বান্দাদের পরিচয় সম্পর্কে কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘ আর রহমানের বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩) ‘তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজে নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলো।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ১৯৯)
কথা ও কাজে মিল থাকা অপরিহার্য। মানুষে মানুষে জ্ঞানে, চিন্তা-দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে পার্থক্য ও মতভিন্নতা থাকতে পারে। তবে নিজের কথা, নিজের অবস্থান বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলা বা কর্ম সম্পাদন করা অগ্রহণযোগ্য ও গর্হিত অন্যায়।
কোরআনুল হাকিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ হে মুমিনগণ! তোমরা যা করো না, তা বলো কেন? তোমরা যা করো না, তা বলা আল্লাহর কাছে চরম অসন্তোষজনক।’ (সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ২-৩)
উপদেশ বা নসিহত প্রদানের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা নয়।
উপদেশ দিতে হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসার চেতনায়। রূঢ়, কর্কশ ও কঠিন ভাষায় বা অশোভন আচরণে নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘ তুমি মানুষকে দাওয়াত দেবে তোমার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ ( সুরা-১৬ নাহল, আয়াত : ১২৫)
‘ ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা ; ফলে তোমার জানের দুশমন প্রাণের বন্ধুতে পরিণত হবে।’ (সুরা-৪১ হা-মিম সাজদাহ, আয়াত: ৩৪)
সদুপদেশ দিতে হয় ব্যক্তিগতভাবে, প্রকাশ্যে মানুষের সম্মুখে নয়। যে ব্যক্তি তার ভাইকে একান্ত উপদেশ দিয়েছে, সেটাই নসিহত, আর যে ব্যক্তি মানুষের সামনে উপদেশ দিল, সে বস্তুত তাকে ভর্ৎসনাই করল। হজরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ (র.) বলেন, ‘ ইমানদার লোক দোষ গোপন রাখে ও একান্ত উপদেশ দেয়। আর পাপী লোক মানুষকে অসম্মান করে, ভর্ৎসনা করে ও প্রকাশ্যে লজ্জা দেয়।’ ( জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ২৩৬ )
হজরত ইবনে হাজম (র.) বলেন, ‘ যদি তুমি উপদেশ দিতে চাও, তাহলে গোপনে দাও, প্রকাশ্যে নয়। ইঙ্গিতে দাও, সরাসরি নয়। যদি তুমি এর ব্যতিক্রম করো, তাহলে তুমি জালিম ; তুমি হিতৈষী নও।’ (আল আখলাক ওয়াস সিয়ার, পৃষ্ঠা: ৪৫)
‘ যারা মানুষের ত্রুটি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের ত্রুটিগুলো গোপনে ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি: ২৪৪২, মুসলিম: ২৫৮০, আবুদাউদ: ৪৮৯৩; সহিহ্ আলবানি)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
Leave a Reply