কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়

  • আপডেট সময় শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
  • 4 পাঠক

মো. আবদুর রহমান। ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

কবরের আজাব সত্য। যা বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নেককার মুমিনগণ যেমন কবরের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত আরাম-আয়েশে থাকবে, তেমনি পাপী ও গুনাহগার ব্যক্তিরা কবরের মধ্যে আজাব ভোগ করতে থাকবে।

কবরের আজাবের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা জরুরি। তাহলে এটা থেকে বাঁচার উপায় বের হবে। তা হলো, যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত থাকা এবং কবরের আজাব থেকে মহান আল্লাহর কাছে মুক্তি চাওয়া।

ওসমান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ কবর হচ্ছে পরকালের সর্বপ্রথম মঞ্জিল। কেউ যদি এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী মঞ্জিলসমূহ তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী মঞ্জিলগুলো তার জন্য খুব কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে।’

————————————————————————————-

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘ মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি সেগুলোর মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

————————————————————————————-

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ ওই সত্তার কসম, যার পবিত্র হাতে আমার প্রাণ, মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর যখন লোকেরা ফিরে আসতে থাকে, তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। মৃত ব্যক্তি যদি ইমানদার হয় তাহলে নামাজ তার মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়, রোজা তার ডানদিকে এবং জাকাত বামদিকে এসে হাজির হয়, তার নফল ইবাদতসমূহ যথা দান-সদকা, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ ইত্যাদি এসে পায়ের দিকে দাঁড়ায়। যদি মাথার দিক থেকে আজাব আসতে থাকে তাহলে নামাজ বাধা দিয়ে বলে, ‘ এদিক দিয়ে যাওয়া যাবে না।’

যদি ডানদিক থেকে আজাব আসতে থাকে তাহলে রোজা বাধা দিয়ে বলে, ‘এদিক দিয়ে যেতে পারবে না।’ যদি বামদিক থেকে আজাব আসতে থাকে, তাহলে জাকাত নিষেধ করে বলে, ‘এদিক দিয়েও জায়গা পাবে না।’ তারপর যদি পায়ের দিক থেকে আজাব আসতে থাকে, তাহলে তার নফল আমলসমূহ গতিরোধ করে বলে, ‘এদিক দিয়েও যাওয়া যাবে না।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সুরা মূলক পাঠ করবে সে এর বরকতে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তাফসিরে নুরুল কোরআন ২৯/৩)

খালেদ ইবনে মাদান (রহ.) সুরা মূলক ও সুরা সেজদা সম্পর্কে বলতেন, এই সুরা দুটি তার তেলাওয়াতকারীর জন্য কবরের মধ্যে আল্লাহর সঙ্গে ঝগড়া করবে এবং বলবে, ‘ হে আল্লাহ, আমি যদি আপনার কিতাবের অংশ হয়ে থাকি তাহলে পাঠকারীর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর যদি আমি আপনার কিতাবের অংশ না হই তাহলে আমাকে আপনার কিতাব থেকে মিটিয়ে দেন।’ তিনি আরও বলতেন, এই সুরা দুটি তেলাওয়াতকারীর ওপর পাখির ন্যায় ডানা বিছিয়ে তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ)

বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমেও জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। রাসুল (সা.) তার উম্মতদের জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য অনেক দোয়া শিখিয়েছেন। যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কেউ যখন নামাজে তাশাহুদ পড়ো, তখন চারটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়া পাঠ করবে, ‘ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন আজাবিল কবরি, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। আর জীবনকালীন ও মৃত্যুর পরের ফেতনা থেকে এবং দাজ্জালের ফেতনার ক্ষতি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম)

দুনিয়ার জীবন আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। তাই প্রতিটি মুহূর্তে সব চিন্তা-চেতনায় ও কর্মসাধনায় আখেরাত ও কবর জীবনকে স্মরণ করে চলতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!