হাসিনাও ভাগ পেয়েছেন রেলওয়ের ২৬ হাজার কোটি টাকার

  • আপডেট সময় বুধবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
  • 23 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শোষণের অন্যতম শিকার রেল। ভুয়া ভাউচার, কাগুজে প্রকল্প, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে কমিশন বাণিজ্যসহ নানা উপায়ে এ খাত থেকে লুটপাট করা হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অনেক সময় শুধু অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই নেয়া হতো নানা কর্মসূচি। এসব কারণে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বিনিয়োগ করার পরও এটি ছিল অন্যতম লোকসানি পরিবহন। অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ গণসেবা প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ হরিলুটের চিত্র।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মেরামতের নামে শুধু ধোয়ামোছা করে আত্মসাৎ করা হয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। কাজ একটি, কিন্তু আটটি প্যাকেজে বিভক্ত করে অনিয়মিত খরচ প্রায় এক কোটি। একই কাজ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ভাউচার দেখিয়ে লুট হয় অর্ধ কোটি। কাজ শেষ হয়নি কিন্তু বিল পরিশোধ- এমন আরও ৫০ রকমের অনিয়ম করে হাতানো হয় ৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

—————————————————————————————

এছাড়া গত ১৫ বছরে ৮৯ প্রকল্পে অনিয়মিত ব্যয়ে আত্মসাৎ ২১ হাজার কোটি টাকা। আর এসব অর্থের ভাগ পেয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেলের চার মন্ত্রী, সাত সচিব, আট ডিজি, ২০ প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার ও শ্রমিক লীগ নেতারা। এমনকি অনেক কর্মচারীর পকেটেও গেছে।

—————————————————————————————

৮৯টি প্রকল্পের ২০টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনো প্রকল্পই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করেনি রেলওয়ে। অন্তত ২০টির ক্ষেত্রে ৮-১০ বার সময় বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গে বাড়ানো হয় বরাদ্দও। এভাবে শুধু লুটপাটের জন্য একটি প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ১০০ টাকা থাকলেও শেষে খরচ দাঁড়াত দশগুণ, তথা ১ হাজার টাকা।

রেলে গত ১৫ বছরে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের রেলওয়ে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৮৯টি প্রকল্পে লোকসান দেখানো হয়েছে ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। মূলত এ অর্থ লুট হয়েছে।

ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে ডেমু

রেলের সবচেয়ে বড় লুটপাটের প্রকল্প ডিজেল মালটিপল ইউনিট (ডেমু) প্রকল্প। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয় ২০ সেট ডেমু ট্রেন। ২০১০ সালে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পটি অনুমোদন, দরপত্র প্রক্রিয়া, ক্রয় প্রক্রিয়াসহ সব স্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ডেমু ট্রেন মেরামতেও তিন ধরনের জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।

ডেমুর ইঞ্জিন মেরামতে মূল প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে স্থানীয় কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়। এই কোম্পানি আবার ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানি থেকে যন্ত্রাংশ কেনে। এছাড়া ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তা বা ম্যানুয়ালও নেয়া হয়নি। পরিণতিও ভালো হয়নি। বছরে ১০০ কোটি টাকা মুনাফা হওয়ার যুক্তিতে ট্রেনগুলো কেনা হলেও এখন রেলের লোকসানের বোঝাই ভারী করছে ডেমু। ‘কেজি’ দরে এসব ট্রেন বিক্রির পরিকল্পনা করছে রেল।

প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ডেমুর ইঞ্জিন বিশেষ ধরনের, উচ্চগতিসম্পন্ন ভারী পরিবহনের জন্য খুবই আধুনিক ও উন্নতমানের। ইঞ্জিনগুলো তৈরি করেছে জার্মানির এমএএন গ্রুপ। এসব ইঞ্জিন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা, যা কখনও করা হয়নি। কারণ, ডেমু ট্রেন মেরামতের কোনো ওয়ার্কশপ নেই দেশে। এরপরও ওয়ার্কশপ ম্যানেজার ডিজেল ঢাকার অধীনে ২০১৭-১৯ সালে ১৫টি ডেমুর ইঞ্জিন ওভারহোলিং করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে ট্রেনগুলো শুধু ধোয়ামোছা করা হয়েছে।

————————————————————————————–

রেলের ডেমু মেরামতে জড়িত ছিলেন ওই সময় রোলিং স্টোক বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক পার্থ সরকার। দায়িত্ব অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জুলাইয়ে রেলওয়ের সংসদীয় কমিটি তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, সেটি আর হয়নি।

রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডেমু ট্রেনের মেরামতের নামে সাড়ে ৫ কোটি টাকা তিনি নিজেই হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের রেক্টর।

অভিযোগের বিষয়ে পার্থ সরকার বলেন, ডেমু ট্রেনের মেরামতের দুর্নীতির বিষয়ে অডিট আপত্তির চিঠির জবাব দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগগুলো সত্য না হলেও সংসদীয় কমিটি তাকে কেন সাসপেন্ডের (সাময়িক বরখাস্ত) সুপারিশ করেছিল, বিষয়টি তার জানা নেই।

————————————————————————————–

এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে ৫৬টি চুক্তির মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অনিয়মিতভাবে ডিজেল ও ডেমু যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন না থাকলেও উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ না করে সীমিত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে বলা হয়। রেলের তৎকালীন মহাপরিচালক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

———————————————————————————————–

অনুসন্ধান বলছে, ডেমু ট্রেন প্রকল্পের দুর্নীতিতে শুরুতে জড়িত ছিলেন রেলে কালো বিড়ালখ্যাত সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। এই প্রকল্পের শুরু থেকে যত মন্ত্রী ও সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন সবাই দুর্নীতির টাকার ভাগ পেয়েছেন। তারা হলেন- রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুজিবুল হক, নূরুল ইসলাম সুজন ও জিল্লুল হাকিম। সচিব ও ডিজির মধ্যে ২০১১ থেকে দায়িত্ব পালন করা অন্তত ৮ সচিব, ৮ ডিজি ও প্রকল্প পরিচালক এই ডেমু ট্রেন প্রকল্পের দুর্নীতিতে জড়িত।

———————————————————————————————–

৪৪০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শুধু রেলপথের কাজ শেষ করা হয়। স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আরও তিন বছর সময় চাওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে র্নিমিত এই প্রকল্প ১৫ বছরে শেষ হচ্ছে।

ইতোমধ্যে প্রকল্প ঘিরে ৪৪০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্পটি শুরু থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট খরচের ওপর ২৫টি আপত্তি দিয়েছে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অডিট অধিদপ্তর। আপত্তি তোলা হয়েছে সরকারি কোষাগারে পাওনা জমা না পড়া কিংবা শুল্ক-কর না কাটা নিয়েও। এছাড়া অতিরিক্ত বিল পরিশোধের বিষয়েও আপত্তি রয়েছে।

এছাড়া এ প্রকল্পে কালুরঘাট সেতুও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেজন্য কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে পুরোনো কালুরঘাট সেতু সংস্কারের। পরে তড়িঘড়ি করে বুয়েটের পরামর্শ নেয় রেলওয়ে। ৮ কোটি টাকায় বুয়েট পরামর্শ দেয়ার পর আরও ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে সেতুটি সংস্কারে করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। এর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেল।

একটি নতুন রেল ও সড়ক সেতুর জন্য একাধিক সম্ভাব্যতা যাচাই এবং সেতুটির নকশা তৈরি ও বদল করতে ৯ বছর কাটিয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে সেতুটি তৈরির জন্য প্রাথমিক অনুমানের প্রায় ১২ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে এখন। সেতুটিতে ডাবল লেন ডুয়েলগেজ রেললাইন ও ডাবল লেন সড়ক থাকবে। সেতুটির জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের পেছনে জড়িত ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী, সচিব এমনকি বর্তমানে দায়িত্ব থাকা প্রকল্প পরিচালকরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত প্রকল্পগুলো নেয়া হয় ইচ্ছে করেই, কারণ নতুন কিছু মানেই লুটপাট।

জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৮২ শতাংশ

ব্যয় ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি মানে বাড়তি ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ। শুরুতে চীন প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করতে চায়, পরে সরে আসে। এরপর নানা অজুহাতে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় ব্যয় বাড়ে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেললাইনটিকে ডুয়েল-গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর করা।

কিন্তু চীন ২০২১ সালের মার্চে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোয় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশের অনুরোধে জাপান প্রকল্পটি অর্থায়নে রাজি হয় এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই পর্যালোচনা করে। জাপানি পরামর্শকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে এখন ২৫ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা লাগবে, যা প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৮২ শতাংশ বেশি। এখন প্রকল্পটি ৮২ শতাংশ বেশি ব্যয়ে ২০৩০ সালের জুনে শেষ হতে পারে।

কোটি কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প

প্রয়োজন নেই তবু প্রকল্প নিয়ে লুটপাট করেছেন বিগত সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা। মূলত প্রভাবশালী এমপিদের অনুরোধে এসব অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়েছিল রেলওয়ে। পায়রা বন্দরের পণ্য পরিবহন ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০২৩ সালে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রেলওয়ের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প ধরা হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অথচ এগুলোতে ট্রেন চলছে মাত্র ৭টি। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে দেশের রেলকে যুক্ত করা আখাউড়া-আগরতলা রুটে একটি ট্রেনও চলছে না। ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ট্রেন চালু রয়েছে ৪টি এবং ১৮ হাজার কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে মাত্র দুটি।

————————————————————————————————-

রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর, রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জ লাইনে প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী মেলেনি। মধুখালী-মাগুরা রেলপথের কাজ শেষ হলে একই অবস্থা হতে পারে। সেজন্য ৪২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

————————————————————————————————–

কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে ১৮ বছর। এখন চলমান আছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার ৩২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্প মিলিয়ে গত ১৫ বছরে রেলওয়ের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে মোট ৮৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকাও উন্নয়নের নামে লুপাট করা হয়েছে।

৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

পতিত সরকারের আমলে ৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকা অডিট আপত্তি রয়েছে। ২০০৯-২০২২ সাল পর্যন্ত এই অডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করে দেখা গেছে, প্রতি বছরই গড়ে ৩৯৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কোনোটা রেল স্টেশনের টিকিটের টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, আর কোনোটা একই কাজকে কয়েকবার কাজ সম্পাদন দেখিয়ে লোপাট করার আপত্তি। এমন আরও ২০ ধরনের দুর্নীতির অডিট আপত্তি আছে।

অডিট প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলওয়ের ইন্টারনাল অডিটে ধরা পড়ে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে ক্যাটারিং বিলে কম ভ্যাট আদায় করার তথ্য। কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করেনি রেল। এতে ওই পরিমাণ টাকা সরকারের লোকসান হয়।

ওই অর্থবছরে এরকম ১৬টি অনিয়মে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য মেলে। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি, ২০০৮-১১ অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে। ১৩ বছরে ৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়।

——————————————————————————–

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, রেলে লোকসানের কারণ অপরিকল্পিত প্রকল্প। মানে, যাচাই-বাছাই না করেই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। নতুন রেলপথ নির্মাণে যে ব্যয় তা বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণও খোঁজার সময় এসেছে। ক্রয় থেকে পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। তবেই লাভের মুখ দেখবে এ পরিবহন।

——————————————————————————–

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয়ের সংকোচনে নজর দিয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করছে।

সার্বিক বিষয়ে রেলের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন সরকার বলেন, আগে পরিকল্পনাহীন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার খুব সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করে প্রকল্প নিচ্ছে, যাতে সরকারের কোনো লোকসান না হয়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!