যে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন আর লকডাউন কিংবা শাটডাউন চাইনা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, জুন ২৫, ২০২১
  • 664 পাঠক

——————-

আকাশ মো. জসিম

——————-

বিকেল সাড়ে ৪টার কাছাকাছি সময়। প্রাণপ্রিয় পুত্র ফোন করলেন। বললনে, আব্বু আমার সবগুলো জুতো ছিঁড়ে গেছে। আসতে নিয়ে আসবেন। নিমিষেই কম্পিউটারের সুইফ অফ করে রাস্তায় বেরিয়ে গেছেন বাবা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফুটপাতে এক দোকানী থেকে অনেক চড়া দামেই পুত্রের জুতো কিনতে হয়েছে তাকে।

এ সময় পৃথিবীর কোন লকডাউনই তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়েছে। শুনেছি, সরকার এবার শাটডাউন ঘোষণা করতে চলছে। তবে যে দেশে লকডাউনই যথেষ্ঠ নয়, সেদেশে শাটডাউনও আরেকটি জনভোগান্তির নাম হতে পারে।

মফস্বল শহর নোয়াখালীর মাইজদী হতে সোনাপুরের দুরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। চলছে ধারাবাহিক লকডাউন।কিছুই চলেনা ! কিন্তু চলছে অটোরিকসা নামের সিএনজি । যাত্রী প্রতি ১০ টাকার ভাড়া এখন ৫০ টাকা ।বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলেই বলে দেন, পুলিশ ধরলে ১০০০ টাকার নিচে ছাড়েনা।অবশ্য, এক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিচক গুজবই বলে দাবি করছেন।

আবার জেলা শহরের সর্বত্রই কিছু দোকানী নিজ দোকানের শাটারের সামনে বসে আছেন। কোন পথচারী যেতে বলছেন, ভাই কি লাগবো। পথচারীর চাহিদার কথা জানানোর পরই শাটার ওল্টিয়ে ভেতরে ডুকে সারছেন কেনাবেচা। এরপর গ্রাহক বেরিয়ে গেছেন। দোকানী বসে বসে পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন।

এভাবেই চলছে নোয়াখালী শহরের গত ক’দিনের লকডাউনের চালচিত্র। কিন্তু পৃথিবীর কোন সভ্য মানুষ এহেন দৌরাত্ম্যময় হা-হুতোশে কোন ব্যবসা বাণিজ্যের পেশাদারিত্বে সফলকাম হতে পারেনা। এটা যেন আরেকটি বেহালচিত্র।

সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত পরিচিতি, অপরিচিতি কারো মুখে মাস্ক দেখা সহজ হয়না। যে দেশে স্বাস্থ্যবিধিই জানা নেই ! কার্যকরের উদ্যোগও হতাশাজনক। সেদেশে লকডা্উন তো বারবার কোম্পানীগঞ্জের ১৪৪ ধারারই ন্যায়।

সমাজসচেতনরা বলছেন,  এসবের আগে দরকার স্বাস্থ্য সচেতনতা, মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার প্রসারতা। সে পথে না বাড়িয়ে বারবার লকডাউন অনেকটা প্রথাগত হরতাল আর অবরোধেরই নামান্তর।

শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে একটি গ্রাম্য চা দোকানে এক শ্রমজীবি মানুষ বললেন, ভা্ই লকডাউন যারা সিদ্ধান্ত নেয় আর দেয় তারা অনেকে এখনো ঘুমে অচেতন। যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার কারিগর তারা এ থেকেও রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান। কারণ, তাদের অফিসে যেতে হয়না। কাজ না করেই বেতন- ভাতা সবই পান আর খান।

কিন্তু, আমরা শ্রমজীব মানুষ। কাজ না করলে খাবো কি ! কে দেবেন ! কত দেবেন! ক’দিনইবা দেবেন !

পাশে থাকা অন্যজন বললেন, নিজ দেশে নয়, বিদেশ থেকেই এদেশে করোনা এসেছে। তিনি বললেন, প্রথমে ইতালি থেকেই অনেকগুলো করোনারোগী দেশে নেমে এর নমুনা দেখালেন। এরপর ভারত হয়ে আরো আরো বাংলাদেশীরা দেশে এসে প্রার্দুভাব ছড়িয়ে দিলেন।

সে সময়ে সরকার থেকে শুরু করে সবারই মধ্যে ছিল মারাত্বক উদাসিনতা আর বগ্লাহীনতা। শুরুতে সজাগ থাকলে আজ সবাক হতো পুরো বাংলাদেশ এমন দাবিও করেন তিনি।

এ ভদ্রলোক শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রীধারী না হলেও দীক্ষায় অনেক বেশি প্রাজ্ঞতা সমৃদ্ধ বলে সমাজে বিদিত।

বললেন আপনি পুরো দেশে জরিপ করে দেখেন, আমরা বেশির ভাগ শ্রমজীবি কিংবা কর্মজীবি মানুষ লকডাউন চাইনা। কেননা, লকডাউন আমাদের এ সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে চরম দুগর্তি বয়ে আনে।আয় রোগার বন্ধ করে দেয়। ভিক্ষাবৃত্তির পথে পা বাড়ায়।

এ সময় ১০ টাকার ভাড়া ৫০ এর নিচে নামেনা। ২০ টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ১২০ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকেনা। অন্য কোন রোগের প্রার্দুভাবে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা সেবাও গ্রহণ করা সহজ হয়ে ওঠেনা।যে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন আর লকডাউন কিংবা শাটডাউন চাইনা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!