সবুজ অরণ্যে স্নিগ্ধতার পরশ এঁকেছে পাহাড়ি ঝর্ণা

  • আপডেট সময় বুধবার, মার্চ ৩০, ২০২২
  • 356 পাঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি

——————————

সবুজ অরণ্যের স্নিগ্ধতার পরশ এঁকেছে পাহাড়ি ঝর্ণা। হ্রদ-পাহাড়ের শখ্যতায় হৃদয় নিংড়ানো সৌন্দর্য। পাহাড়ের বুক চিরে আছড়ে পড়া প্রবহমান জলধারা। গুঁড়ি গুঁড়ি জলকনাগুলো আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি হচ্ছে কুয়াশার আভা। স্রোতধারার শীতল কলতানে নিক্কন ধ্বনির উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে চারপাশ।
এমন বিস্ময়কর প্রাকৃতিক প্রাচুর্য শুধু রাঙামাটিতেই দৃশমান।জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ি ঝিড়ি-ঝর্ণা রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় রাঙামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্ণা। যা পর্যটকদের কাছে গিরিনির্ঝর ঝর্ণা নামে পরিচিত। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে ঝর্ণার জলধারা।ঝর্ণার অবিরাম পতনে সৃষ্ট নিক্কন ধ্বনি বিমহিত করে পর্যটকদের। দূর-দুরন্ত থেকে আগত দেশি-বিদেশী পর্যটকরা যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি অবসানে হারিয়ে যাচ্ছে ঝর্ণার জলধারায়। পাহাড়ে ঝর্ণার চঞ্চলা জলধারা পর্যটককেই কাছে টানে খুব সহজে। তাই গ্রীষ্ম বর্ষা, শরৎ কিংবা হেমত ঝর্ণারস্থলে পর্যঠকদের জুলুস থাকে সব সময়।রাঙামাটি শুভলং ঝর্ণা অর্থাৎ গিরিনির্ঝর ঝর্ণা দেখতে আসা পর্যটক সায়মন আহমেদ জানান, ঝর্ণার সতেজতায় পাহাড়ি ঝিরিগুলো হয়ে উঠে প্রাণচঞ্চল। সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলে ঝিরির জলরাশি মিলেছে হ্রদের প্রাণে। সত্যি অসাধারণ দৃশ্য। যেন কল্পনায় আঁকা এক বাস্তব চিত্র।

রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণার টিকেট বিক্রেতা রিন্টু চাকমা জানান, ঝর্ণা সবার কাছে প্রিয়। তাই রাঙামাটি বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসে এখানে। শুষ্ক মৌসুমে বড় ঝর্ণাতে পানি একটু কম থাকলেও ছোট ঝর্ণায় পানি থাকে বারো মাসই। সম্প্রতি সময় ঝর্ণা স্পটে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী জানান, বর্তমানে ঝর্ণা স্পটে পর্যটকদের ভ্রমন অব্যাহত রয়েছে। তাই নৌযান ঘাটের বোর্ট চালকরা ব্যস্ত সময় পার করছে।

অন্যদিকে পর্যটকদের উৎসবে মেতেছে রাঙামাটির ঘাগড়া ঝর্ণা। যা পর্যটদের কাছে রাঙামাটি কলাবাগান ঝর্ণা নামে অতিপরিচিত। এটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এ ইউনিয়নের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া।

এ পাহাড়ি ছড়ার একমাত্র উৎপত্তিস্থল ঘাগড়া ঝর্ণাটি। এখানে শুধু দেশি-বিদেশেী পর্যটক নয়, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ আশপাশের জেলার স্থানীয়দের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ারমত। কলাবাগান ঝর্ণাস্থল এখন যেন আনন্দ উৎসবের ফোয়ারা।

জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে হলেও গাড়ি থেকে নেমে ছড়ার পথে হাঁটতে হয় আরও চার কিলোমিটার। কিছুটা সামনে এগুলেই দেখা মিলে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল। অসংখ্য ছোট-বড় পথরের গা ঘেষে সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলেছে স্রোতধারা।

দু’পাহাড়ের পথ ধরে হাটলে দেখা মিলবে এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়। এ ঝর্ণার শীতলতা দেখে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে পর্যটকদের। দুর হয়ে যায় সমস্ত ক্লান্তি। ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদাভারে মুখরিত থাকে ঝর্ণা স্পট।

অভিযোগ রয়েছে, রাঙামাটি জেলা জুড়ে অসংখ্যা সম্ভাবনাময় ঝর্ণা স্পট থাকলেও একটিকেও ঘিরে গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন কেন্দ্র। অরক্ষিত ঝর্ণা স্পট বিলীন হয়ে যাচ্ছে অযত্ন-অবহেলায়।

তাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ূয়া। তিনি বলেন, রাঙামাটির পহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। প্রকৃতিকভাবে এসব ঝর্ণাগুলো খুবই অপূর্ব। পর্যটকরাও ঝর্ণা ভালবাসে।

কিন্তু দুর্গমতা ও নিরাপত্তার ভয়ে অনেকে ঝর্ণা স্পটে যেতে চায় না। কিন্তু যেসব ঝর্ণা স্পটগুলো খুবই পরিচিত সেগুলোও অরক্ষিত। গড়ে উঠেনি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কোন ব্যবস্থা।  রাঙামাটির ঝর্ণা স্পটগুলো চিহ্নিত করে যদি সুন্দরভাবে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা যায় তাহলে অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চল। বৃদ্ধি পাবে পর্যটকও।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!