এখন আর কেহ দেয়াল-লিখন পড়তে পারেন না

  • আপডেট সময় সোমবার, মে ১, ২০২৩
  • 179 পাঠক

সম্পাদকীয়

———–

উন্নয়নশীল বিশ্বে দেশগুলোয় একটি কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা কী করেন ? দিনে দিনে এমনই আবর্জনার স্তূপ তৈরি করে ফেলা হয় যে, কেহ না কেহ সেই আবর্জনা পরিষ্কার করতে এগিয়ে আসতে হয়। তাই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নেই যে, কেহকে সকল প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে জঞ্জাল পরিষ্কার করতে এগিয়ে আসতে হয়।

এসব দেশে যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের মধ্যে বিরোধী দলগুলোকে খাটো করে দেখবার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এর ফলে ক্ষমতার একটি বলয় তৈরি হয়। এবং এসব দেশে যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা হয়তো জানেনই না যে, এই আচরণের মধ্য দিয়ে তারা জনগণের জীবনকে কতটা দুর্বিষহ করে তুলছেন।

আর এই দুর্বিষহ করে তোলার সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন প্রশাসনের একধরনের সুবিধাভোগীরা, যাদের দেশ সম্পর্কে কোনো অনুভূতি, কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।

উন্নয়নশীল দেশগুলো যারা পরিচালনা করেন, তাদের সবচাইতে বড় একটি দুর্বলতা হলো, তারা দেয়াল লিখন পড়েন না। আগে দেয়াল লিখন হতে মানুষের নানা মত পাওয়া যেতো। কিন্তু যিনি দেয়াল লিখন পড়তে বলেছেন, তিনি এখন থাকলে কী বলতেন? এখন দেয়ালের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যা থাকে, তা হতে জনগণের ভাষা বুঝবার কোনো সুযোগ নেই।

এ সম্পর্কে ফরাসি বিপ্লবের একটি উদাহরণ সকলের স্মরণে রাখা দরকার। ফরাসি বিপ্লবকালে জনগণ যখন জেগে ওঠেছে, বাস্তিল দুর্গ পতনের মুখে, তখনো রাজদরবার দেয়াল লিখন পড়তে পারেনি।এমনকি সাধারণ মানুষের মনোভাবের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় ছিল না। কথিত আছে, বিপ্লবীরা যখন রাজদুয়ারের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে, তখন রাজা ষোড়শ লুইয়ের স্ত্রী, অর্থাৎ রানি ম্যারি আঁতোয়নেতে শোরগোল শুনতে পেয়ে রাজকর্মচারীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, তারা শোরগোল করতেছে কেন?

কর্মচারীরা উত্তরে বলেন, মহারানি এরা রুটি খাইতে চান, কিন্তু তা পাচ্ছেননা। শুনে রানি উত্তরে বলেন, এদেরকে কেক খাইতে বলো! ইহাও ইতিহাসে আছে যে, রানি এতটাই জাঁকজমকপূর্ণ ও বিলাসী জীবন যাপন করতেন যে, রাজকোষ খালি হয়ে গিয়েছিল, যার কারণে তার টাইটেল হয়েছে ম্যাডাম ডেফিসিট।

আজও উন্নয়নশীল দেশে এই প্রবণতাই লক্ষ করা যায়। উন্নয়নশীল দেশের এই একতরফা বিষয় এবং অসহিষ্ণুতা উন্নত বিশ্বেও লক্ষ করা যাচ্ছে। তা না হলে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্রচর্চার দেশেও কেন নির্বাচন-পরবর্তীকালে ফলাফল না মেনে চলতে দেখা যায় ? ১৭৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে তার সাবেক মিলিটারি সেক্রেটারি এবং কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জনাথন ট্রামবুল জুনিয়র চিঠি লিখে অনুরোধ করেন তৃতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে (১৯৫১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীর তৃতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হওয়া রদ করা হয়)। কিন্তু ওয়াশিংটন ইহাকে গোপন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বলে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেন।

সুতরাং উন্নয়নশীল দেশ যারা পরিচালনা করেন, তাদের এও মনে রাখা অতি জরুরি যে, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নেই। যাতে সকলেই বলিবে—পরিবর্তন চাই। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হতেও ইহা স্মরণে রাখা জরুরি। ইসলামে বারংবার যে কোনো বিষয়েই বাড়াবাড়ি কতে নিষেধ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন শরিফের সুরা নিসার ১৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে , ‘হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করিও না।’ সহি বুখারিতে উল্লেখ আছে, হজরত উমর (রা.) বলিয়াছেন, ‘তোমরা নেতৃত্ব লাভের পূর্বেই জ্ঞান হাসিল করিয়া লও।’ কিন্তু বর্তমান সময়ে ইহার অনুপস্থিতিও লক্ষ করা যায়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!