প্রাথমিকে বাংলা পড়তে পারে না সাড়ে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জুন ১৫, ২০২৩
  • 321 পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক। ১৫ জুন, ২০২৩।

———————————
দেশের দুই জেলার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ শিশু বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ ছেলে শিশু ও ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিশু, যার গড় দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর বাইরে ১৮ দশমিক ০৪ শতাংশ শিশু পাঁচটির মধ্যে কমপক্ষে চারটি শব্দ শনাক্ত করতে পারে। আর ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৫৩ দশমিক ১৪ শিশু মেয়ে শিক্ষার্থী তিনটি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনি সাবলীলভাবে পড়তে পারে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজধানীর মিরপুরের ইউরোপ বাংলাদেশের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবার রাজধানীর মিরপুরে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েব ফাউন্ডেশনসহ চারটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে আসে। খুলনা ও রাজশাহী জেলায় ৮৮টি গ্রামের ৭১টি বিদ্যালয়ে এবং ১ হাজার ৭৬০টি পরিবারের ১ হাজার ৫৩৩ জন শিশুর ওপর সিটিজেন লেড অ্যাসেসমেন্ট নামক জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ’ আমাদের এখন শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র আয় বাড়লে শিক্ষার উন্নতি হবে, তা নয়। তাহলে তো সিলেট সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু, তা হয়নি। এখানে গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। আমার আহ্বান, ভবিষ্যতে যেন গবেষণার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরা হয়।’

জরিপের তথ্য বলছে, গণিতেও ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ শিশু একক অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা শনাক্ত করতে পারেনি। শুধু ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিশু দুটি যোগ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দুটি বিয়োগ ও দুটি ভাগ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি পর্যায়ক্রমে ৭৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ৯৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিশু।

আরও জানা যায়, সব থেকে করুণ অবস্থা ইংরেজিতে। এ বিষয়ে ছেলে শিশুর মধ্যে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিশু পাঁচটির মধ্যে কমপক্ষে চারটি ইংরেজি শব্দ শনাক্ত করতে পেরেছ। আর ৮৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মেয়ে শিশু তিনটি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনি সাবলীলভাবে পড়তে পারে না।

জরিপে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও যাচাই করা হয়। বলা হয়, যেসব শিশুর পিতা-মাতার মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ছিল, তারা ভাষার দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করেছে, তাদের তুলনায় স্বল্প শিক্ষিত পিতা-মাতার শিশুদের ভাষার দক্ষতা সন্তোষজনক ছিল না। যেসব শিশুর পিতা-মাতার মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ছিল, তাদের মধ্যে ৪৫৯টি শিশু বাংলায় এবং ১৯২টি শিশু ইংরেজিতে কাহিনি পড়তে পেরেছে। আর যেসব অভিভাবকের প্রাথমিক বা কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, তাদের শিশুদের মধ্যে মাত্র ২৩টি শিশু বাংলায় এবং ৭৮টি শিশু ইংরেজিতে অক্ষর শনাক্ত করতে পেরেছে।

সংলাপে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, শ্রেণির পড়া শ্রেণিতেই সম্পন্ন করার উদ্যোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী, স্ট্রিট চাইল্ডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয়সহ আরও অনেকে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!