—————————————————————————————————
হলফনামা বিশ্লেষণ
—————————————————————————————————-
দিশারী ডেস্ক। ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ সংসদ সদস্য হওয়ার পর তাঁর অস্থাবর সম্পদ অনেকটাই বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে তাঁর স্ত্রীর সম্পদও। খবর: দৈনিক প্রথম আলো।
জুনাইদ আহ্মেদ ২০০৮ সালে অস্থাবর সম্পদ (টাকা, সোনা ইত্যাদি) দেখিয়েছিলেন দুই লাখ টাকার কিছু বেশি। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। এখন আছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সম্পদ। আরও আছে ৩০ ভরি সোনা ও কিছু ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম।
জুনাইদ আহ্মেদ ২০০৮ সালে প্রথম নাটোর–৩ আসন (সিংড়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
জুনাইদ আহ্মেদ নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতকোত্তর ও পেশা আইনজীবী বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। একটি মামলা নথিজাত অবস্থায় রয়েছে।
জুনাইদ আহ্মেদ ২০০৮ সালে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। স্থাপনার ভাড়া, আইন পেশা ও কৃষি থেকে তিনি এই আয় দেখিয়েছিলেন। এবার আয় দেখিয়েছেন ৩২ লাখ টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে বেশি আয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পাওয়া সম্মানী, ২১ লাখ টাকার মতো। ব্যাংক জমা ও সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফা বাবদ তাঁর আয় ৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। টক শো করে তিনি বছরে ২ লাখ ২ হাজার টাকা আয় করেন।
প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর আয় বছরে প্রায় ১৯ লাখ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৮৪ হাজার টাকা। স্ত্রীর আয় কৃষি, স্থাপনা ভাড়া এবং সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগ থেকে।
হলফনামা অনুযায়ী, জুনাইদ আহ্মেদের হাতে নগদ রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ৩০ লাখ টাকার। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে ৯৫ লাখ টাকার মতো। প্রতিমন্ত্রী একটি শটগান ও একটি পিস্তলের মালিক।
স্ত্রীর নামে নগদ টাকা প্রায় ৪৬ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৫৪ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা এবং স্থায়ী আমানত প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেখিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
জুনাইদ আহ্মেদের স্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে। ২০০৮ সালে তিনি এক বিঘা কৃষি জমি, ১৮ শতাংশ অকৃষিজমি ও একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন। এখন তাঁর নামে ২৪৩ শতাংশ কৃষিজমি ও আধা শতাংশ অকৃষিজমি রয়েছে। তিনি স্ত্রীর বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন ২০ লাখ টাকা।
পৈতৃক দোতলা বাড়ির কথাও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ঢাকার পূর্বাচলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন জুনাইদ আহ্মেদ। নিজের দায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার ঋণ। গাড়ি কিনতে ঋণটি নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর কোনো কৃষিজমি ছিল না। অকৃষিজমি ছিল ১৫ শতাংশ। এখন তাঁর ৯০০ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। অকৃষিজমি আছে প্রায় ১৩৭ শতাংশ। ঢাকার শেওড়াপাড়ায় তাঁর দুটি দোকান রয়েছে। স্বামীর বাড়িতে বিনিয়োগ আছে ৫০ লাখ টাকা। ঢাকায় তিনি ১ হাজার ৭২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিক।
সেই নির্বাচনে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরের দুটি সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও একই আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এবারের দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, শূন্য সঞ্চয়ের সেই জুনাইদ আহ্মেদ এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। তাঁর স্ত্রীও কোটি টাকার মালিক। স্বামী-স্ত্রীর ভূসম্পত্তিও বেড়েছে বহুগুণ।
Leave a Reply