গবেষণা
———————–
দিশারী ডেস্ক। ১১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
একটি সাধারণ এক-লিটার (৩৩-আউন্স) পানির বোতলে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার প্লাস্টিকের টুকরো থাকে, একটি নতুন গবেষণায় সামনে এসেছে এই তথ্য। এই টুকরোগুলির মধ্যে অনেকগুলিকে শনাক্ত করা যায়নি, গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে প্লাস্টিক দূষণের সাথে যুক্ত স্বাস্থ্য উদ্বেগগুলি এর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।
যে কোনও রকমের প্লাস্টিকের ভগ্নাংশ, যা লম্বায় ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট, তাকেই বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর আগে মানুষের কোষে, গবেষণাগারের জীবজন্তুদের মধ্যে, এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের শরীরে মাইক্রো প্লাস্টিক এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সম্প্রতি স্তনদুগ্ধে মাইক্রো প্লাস্টিক এর উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার পর তার ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা বলছে, এই মাইক্রো প্লাস্টিকের থেকেও সূক্ষ্ম মানুষের চুলের মতো সূক্ষ ন্যানো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে বোতলের পানিতে। অনুসন্ধানগুলি দেখায় যে বোতলজাত পানিতে পূর্বের অনুমান গুলির চেয়ে ১০০ গুণ বেশি প্লাস্টিকের কণা থাকতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিকগুলি মাইক্রো প্লাস্টিকের চেয়ে মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি, কারণ তারা মানুষের কোষে রক্তের প্রবাহে প্রবেশ করতে এবং অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিক প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রূণের শরীরেও যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে বোতলজাত পানিতে তাদের উপস্থিতি সন্দেহ করেছেন, তবে পৃথক ন্যানো পার্টিকেল শনাক্ত করার প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটি অতিক্রম করার জন্য, গবেষণার লেখকরা একটি নতুন মাইক্রোস্কোপি কৌশল উদ্ভাবন করেছেন, একটি ডেটা-চালিত অ্যালগরিদম প্রোগ্রাম প্রয়োগ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড থেকে কেনা প্রায় ২৫ টি ১ লিটার বোতলের পানি বিশ্লেষণ করেছেন।
(গবেষকরা কোনও ব্র্যান্ডের নাম জানাতে চাননি ) তারা প্রতি লিটারে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছেন, যার মধ্যে ৯০ % ন্যানোপ্লাস্টিক।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে স্নাতক ছাত্র নাইক্সিন কিয়ান বলেছেন- এই গবেষণাটি ন্যানোপ্লাস্টিক বিশ্লেষণে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার প্রদান করে, যা ন্যানো স্তরে প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান জ্ঞানের ব্যবধান পূরণ করার ক্ষমতা রাখে।
গবেষকরা পলিথিন টেরেফথালেট (পিইটি) সহ সাতটি সাধারণ প্লাস্টিকের ধরনকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন, যেগুলি থেকে অনেক পানির বোতল তৈরি করা হয় এবং পলিমাইড প্রায়শই বোতলজাত করার আগে পানিকে শুদ্ধ করার জন্য ফিল্টারে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তারা পানিতে অনেক অচেনা ন্যানো পার্টিকেলও আবিষ্কার করেছেন। যদি এগুলোর কোনোটি ন্যানো প্লাস্টিকও হয়, তাহলে বোতলজাত পানিতে প্লাস্টিকের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
বিশ্ব প্রতি বছর ৪৫০ মিলিয়ন টনেরও বেশি প্লাস্টিক উৎপাদন করে, যার বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত ল্যান্ডফিলগুলিতে শেষ হয়। প্লাস্টিকের বেশিরভাগ অংশ প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় হয় না, তবে সময়ের সাথে সাথে ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়। মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানোপ্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান মানব শরীরের জন্য বিষাক্ত। কারণ সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা বা প্লাস্টিকের ভগ্নাংশ ব্যাকটেরিয়াদের আঁতুরঘর।
২০২২ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বোতলের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব কলের পানির চেয়ে বেশি। ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে প্লাস্টিকের পানির বোতলের ক্যাপটি খোলা এবং বন্ধ করলে প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরো তরলে বেরিয়ে যেতে পারে।
গবেষণা এখানেই থেমে থাকছে না। গবেষকরা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা থেকে সংগ্রহ করা ট্যাপ কলের পানি এবং তুষার নমুনাগুলিতে ন্যানোপ্লাস্টিকগুলি তদন্ত করার পরিকল্পনাও করেছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আরেক সহ-লেখক এবং জীব পদার্থবিজ্ঞানী ওয়েই মিন বলেন, “ন্যানোপ্লাস্টিকের একটি বিশাল জগৎ অধ্যয়ন করতে হবে। যত ছোট জিনিস, তারা আরও সহজে আমাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে সক্ষম।”
সূত্র : এনডিটিভি।
Leave a Reply