অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০% রোগীর মৃত্যু

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, জুলাই ১৬, ২০২৪
  • 102 পাঠক

————————————————————————————-

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান

————————————————————————————–

দিশারী ডেস্ক। ১৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

শনিবার চট্টগ্রামের রাউজানে ঘাস কাটতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হন কৃষক রণজিৎ পাল (৬০)। সাপে দংশনের ঠিক তিন ঘণ্টা পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন। এর আধাঘণ্টা পর হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ওই কৃষকের।

রণজিৎ পালের মৃত্যুর ঘটনায় রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন ধর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ সময়ক্ষেপণের কারণে হয়তো অ্যান্টিভেনম কাজ করেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০ থেকে ২২ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হতে পারে সমন্বিত চিকিৎসার অভাব এবং সময়ক্ষেপণের কারণে। অথচ দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা গেলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত রোগী বাঁচানো সম্ভব।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব সাপ দিবস। সাপ দিবসের উদ্দেশ্য হলো সাপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক সত্য দিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা ভেঙে প্রাণীটির সঙ্গে সহাবস্থানকে উৎসাহিত করা। প্রতিবছর ১৬ জুলাই এই দিবস পালিত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে প্রতিবছর চার লাখ তিন হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এর মধ্যে ২৪ শতাংশ বিষধর সাপের কামড়, যা সংখ্যায় সাড়ে ৯৬ হাজার। আর মারা যাচ্ছে সাত হাজার ৫১১ জন। বিষধর সাপের দংশনের ঘটনার ৯৫ শতাংশই গ্রামে ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের লাইব্রেরি অব মেডিসিন এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এলসিভিয়ার বলছে, সাপের অ্যান্টিভেনম দুই ধরনের—মনোভ্যালেন্ট ও পলিভ্যালেন্ট। একক প্রজাতির সাপ থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিভেনম হচ্ছে মনোভ্যালেন্ট। অর্থাৎ রোগীকে যে সাপে কেটেছে তাকে ওই সাপের অ্যান্টিভেনমই প্রয়োগ করা হয়। আর দুই বা ততধিক প্রজাতির সাপের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য বানানো হয় পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশে প্রয়োগ করা পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম সব ধরনের সাপের বিষের বিপরীতে কার্যকর নয়। কিং কোবরা (গোখরা), ক্রেইট (শঙ্খিনী) ও রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া)—এই তিন প্রজাতির তিনটি সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবে দেশে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম কাজ করে। সামুদ্রিক সাপ, পিট ভাইপার ও দুর্লভ ক্রেইটসহ অন্যান্য বিষধর সাপের বিষের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিভেনম কার্যকর নয়।

দেশে প্রথম সাপের কামড়ে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ। তিনি জানান, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনমগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো দক্ষিণ ভারতের চার ধরনের সাপ থেকে বিষ নিয়ে তৈরি হয়। এটি যে খুব ভালো মানের অ্যান্টিভেনম তা নয়। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় এগুলো।

এম এ ফয়েজ বলেন, বিষধর সাপের কামড়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ একমাত্র চিকিৎসা নয়। এটা হলো অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০ থেকে ২২ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। এখানে সময়মতো এবং সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে সেটি নেই। অন্তত সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ২৪ ঘণ্টা সাপের কামড়ের রোগীর জন্য সমন্বিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়। বিষধর সাপের কামড়ের শিকার রোগীর জন্য মোট ১০ ভায়াল বা এক ডোজ অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন। সে হিসাবে সরকার বছরে দু-তিন হাজার রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনম কিনছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, বিষধর সাপের দংশনের স্থান দ্রুত ফুলে যায়, ক্রমাগত রক্তপাত হয়, রোগীর ঘুম ঘুম ভাব হয় বা চোখের ওপরের পাতা বুজে আসে, প্রস্রাব কমে যায় বা কালো রঙের প্রস্রাব হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে বিষধর সাপ কামড় দিয়েছে।

ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, সাপে কাটা অঙ্গ বিশ্রামে ও অচল করে রাখতে হবে। রোগীকে দ্রুত গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দংশিত স্থানে কোনো রকম রশির গিঁট দেওয়া যাবে না। দংশিত স্থানে কাটা বা সুই ফুটানো কিংবা কোনো কিছুর প্রলেপ দেওয়া যাবে না। ওঝা বা বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা কিংবা ঝাড়ফুঁক করে সময় নষ্ট করা যাবে না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!