দিশারী ডেস্ক। ১২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের রাজনীতি ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে গেছে। টানা দেড় যুগ ক্ষমতায় থাকাকালীন নানা কর্মসূচি দিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগের আহ্বানে রাজনীতির মাঠে তাদের অবস্থান জানান দিলেও এখন যেন ‘কোথাও কেউ নেই’।
জোটের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ আত্মগোপনে আবার অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করছেন। তবে দলটির ভেরিয়েফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিনিয়ত ‘আপডেট’ দিতে দেখা গেছে। সরকার ও বর্তমানে ‘প্রভাবশালী’ রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক কর্মকান্ডের সমালোচনাও চোখে পড়েছে তাদের পেজে।
এরই মধ্যে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রমেশ সেন, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, দলের নেতা সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ কয়েক শত নেতা-কর্মী জেলে রয়েছেন।
অবশ্য সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নান ও সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে মুক্তি পান। অন্যদিকে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা।
—————————————————————————-
ক্রান্তিকালে চৌদ্দ দলের রাজনীতি কোথাও নেই শরিকরা
————————————————————————–
তাদের কেউ কেউ দেশে লুকিয়ে আছেন এবং কেউ কেউ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কারও কারও ভারত থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার খবরও শোনা যাচ্ছে, যাদের প্রায় সবার নামেই হত্যা মামলাসহ নানা মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে দেশের বাইরে থেকে বক্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিনিয়ত ফেসবুক পেজে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হামলা, মামলার খবর ও দলের অবস্থান নিয়ে আপডেট তথ্য দেয়া হচ্ছে।
তবে অনলাইনে ও অফলাইন কোথাও যেন নেই ১৪ দলের শরিকরা। গত কয়েক দিন শরিক দলগুলোর প্রধান কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলোই তালাবদ্ধ। জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া অন্যরা সক্রিয় নন। দল বা দেশের নানান ইস্যুতে অনলাইনেও তারা বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন না। তবে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি অফিস মাঝেমধ্যে খুলতে দেখা গেছে। তাতে নেতাকর্মীদের আনোগোনা নেই বললেই চলে।
বর্তমান সরকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মোটাদাগে ১৪ দলের দিকে অভিযোগ তুললেও হাতেগোনা কয়েকজন নেতার প্রতি রয়েছে ক্ষোভ। এরই মধ্যে হত্যা মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টি (জেপি)-এর সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গ্রেপ্তার হলেও খুব দ্রুত জামিন পান। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়–য়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ অন্যরা রয়েছেন অজ্ঞাত মামলা-আতঙ্কে। তারা নানা স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
১৪ দলের এক নেতা জানান, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১০ জন এবং জাসদের ৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের নেতাদের নামে মামলার খবর তাদের কাছে এসেছে।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এরপর তার দলের পক্ষ থেকে আর কোনো বিবৃতি আসেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সর্বশেষ বিবৃতি দেন ৩০ সেপ্টেম্বর। বৈরুতে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে একটা বিবৃতি পাঠায়। এর আগে রাশেদ খান মেনন গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল দলটি।
অন্যদিকে জাসদ নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা বার্তা দেয় দলটি।
এ ছাড়া ১৪ দলের অন্য শরিক যেমন- ন্যাপ, গণ-আজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টির কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। এমনকি দলের কোনো নেতাকর্মীকে কোথাও দেখা যায় না।
রাজনীতির মাঠে কেন ফিরছেন না বা কোন প্রক্রিয়ায় তারা ফিরবেন- হোটাসঅ্যাপে এমন প্রশ্ন করা হয় ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ, বাসদ ও গণতন্ত্রী পার্টির কয়েকজন নেতার কাছে। তাদের ভাষ্য, এখনও তারা বুঝে ওঠতে পারছেন না পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে তারা রাজনীতিতে সক্রিয়া হবেন।
উল্লেখ, শুরুতে এই জোটের ১৪টি দল ছিল। সে অনুযায়ী জোটের নাম ১৪ দল রাখা হয়। বর্তমানে ১১টি দল রয়েছে জোটে। তবুও জোটের নাম ১৪ দলই থাকছে !
Leave a Reply