প্রতিবেশী সম্পর্কে মহানবী (সা.) কি বলেছেন ?

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
  • 4 পাঠক

আবদুর রহমান তাশরীফ।১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সামাজিক জীবনের পথচলায় আমরা জড়িয়ে আছি প্রতিবেশীদের সঙ্গে। প্রতিবেশীরা জড়িয়ে আছেন আমাদের সঙ্গে। মানুষ সমাজে একাকী বসবাস করতে পারে না। সবার সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে হয়।

তবু পাশাপাশি পথ চলায় ভুল হয়ে যায়, যা কখনোই কাম্য নয়। প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার ঈমানের পূর্ণতা। প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও খুশির কারণ।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কোরো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস- দাসীদের সঙ্গে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহংকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি আল্লাহও শেষদিনের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৯)

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার ক্ষতি

নবীজি (সা.) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার অনেক ক্ষতি ও বঞ্চনা উল্লেখ করেছেন। তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

১. ঈমানের অপূর্ণতা : আবু শুরাইহ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) একবার বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কে সে লোক ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৬)

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিবেশীর অনিষ্ট সাধন করে হাদিসে তার কথা বলা হয়েছে। তবে ঈমানহীন হওয়ার অর্থ হলো, সে পরিপূর্ণ ঈমানদার নয়। (ফাতহুল বারি : ১০/৪৪৪)

২. জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৬)

৩. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া গুরুতর বিষয় : মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা ব্যভিচারের ব্যাপারে কি বলো ? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সেটিকে হারাম করে করে দিয়েছেন। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সেটি হারাম। তখন তিনি বললেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করার অপরাধের চেয়ে অন্য ১০ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করার অপরাধ অনেক লঘু।… (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৩৪২)

৪. আল্লাহ ও মানুষের অভিশাপের কারণ : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, যাও ধৈর্য ধরো। এরপর সে দুইবার, তিনবার এসে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তোমার জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাখো।

এরপর সে তার জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাখলে লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগল এবং তার প্রতিবেশীর খবর জানাতে থাকল। লোকেরা তার প্রতিবেশীকে অভিশাপ দিতে লাগল, আল্লাহ তোমার এরূপ এরূপ করুন। তার প্রতিবেশী তার নিকট এসে তাকে বলল, তুমি ফিরে যাও। ভবিষ্যতে আমার পক্ষ থেকে এরূপ কোনো কিছুর পুনরাবৃত্তি দেখবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৫৩)

৫. অধিক ইবাদত কাজে না আসা : প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ে যত ইবাদতই করা হোক না কেন, সেটা কোনো কাজে আসবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ রাসুল! অমুক নারীর অনেক নামাজ, রোজা ও সদকার আলোচনা হয়, তবে সে মুখ দিয়ে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়।

নবীজি (সা.) বললেন, সে জাহান্নামি। সে বলল, হে আল্লাহ রাসুল ! অমুক নারীর নামাজ রোজা ও সদকা অল্প বলে তার আলোচনা হয় এবং সে আসওয়ার সদকা করে, তবে সে তার জবান দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। নবীজি (সা.) বললেন, সে জান্নাতি। (মিশকাতুল মাসাবিহ)

এই আয়াত ও হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায়, মুসলমানের করণীয় হলো পারস্পরিক আন্তরিকতা বজায় রাখা, প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া, প্রতিবেশীর সঙ্গে যথাসম্ভব সদাচার বজায় রাখা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!