মানুষের জ্ঞানের অন্যতম তিন উৎস

  • আপডেট সময় বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
  • 5 পাঠক

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ। ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

মানুষের জ্ঞানের প্রধান উৎস তিনটি। অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শক্তি। অভিজ্ঞতা মানবীয় জ্ঞানের অন্যতম উৎস। বর্তমানের বিস্ময়কর মানবসভ্যতা বহুলাংশে অভিজ্ঞতার ফসল।

এ অভিজ্ঞতা আহরিত জ্ঞানের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষের অভিজ্ঞতা কোনো একক সত্যের দাবি করতে পারে না। স্থান, কাল, পাত্রভেদে এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ হয়ে থাকে। মানবীয় অভিজ্ঞতায় অনেক সময় ভুলভ্রান্তি থাকে।

এ ছাড়া দেশ, কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবীয় জ্ঞান অচল মুদ্রায় পরিণত হয়। সে অভিজ্ঞতা ব্যক্তি, দল, জাতি বা জাতীয় সংসদের যারই হোক না কেন, এর ফলে জাতীয় সংসদে রচিত আইন ও সংবিধানের সংশোধনী আনতে হয়। কাজেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান চূড়ান্ত ও অভ্রান্ত নয়। মানবীয় জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস হলো ইন্দ্রিয় শক্তি।

এর মাধ্যমে মানুষ অনেক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই ইন্দ্রিয় শক্তির পরিধি ও ক্ষমতার মধ্যে একটি সীমাবদ্ধতা আছে। এ ছাড়া অনিবার্য কোনো কারণেও মাধ্যমটির বিকৃতি ঘটতে পারে। যেমন—দেহে জ্বর উঠলে মিষ্টি লাগে তেতো, সর্দি হলে নাকে কোনো গন্ধ পাওয়া যায় না, জন্ডিস হলে রোগী চারদিক হলুদ দেখে (চোখ)। কাজেই ইন্দ্রিয় শক্তিও নির্ভুল জ্ঞানের মাধ্যম নয়।

মানবীয় জ্ঞানের তৃতীয় উৎস হলো মানুষের বুদ্ধি। তবে এ মাধ্যমটিরও সীমাবদ্ধতা আছে। সীমার বাইরে এর কোনো ক্ষমতা নেই। মানবীয় বুদ্ধি সবার সমান নয়। আর মানবীয় বুদ্ধি কোনো একক সত্যের দাবি করতে পারে না। এ ছাড়া অনেক কারণে মানবীয় বুদ্ধি লোপ পেতে পারে (শারীর বৃত্তীয় কারণ, বয়স… ইত্যাদি)।

সুতরাং মানবীয় জ্ঞানের প্রতিটি মাধ্যমে দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা আছে। অভিজ্ঞতার দ্বারা যে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা ইন্দ্রিয় শক্তির দ্বারা অর্জন করা যায় না। বুদ্ধি দিয়ে যে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা ইন্দ্রিয় শক্তি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন করা যায় না। যেমন—একটি আম মিষ্টি না টক, তা বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতা দিয়ে জানা যায় না। এ জ্ঞান দান করে ইন্দ্রিয় শক্তি। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কী করণীয়, কী বর্জনীয় তা দান করতে পারে মানবীয় বুদ্ধি। এটি ইন্দ্রিয় শক্তি দিয়ে হয় না। অতীত সম্পর্কে কোনো ধারণা বা বুদ্ধি ইন্দ্রিয় শক্তি দিতে পারে না। তা দিতে পারে মানবীয় অভিজ্ঞতা।

আসলে মানবীয় জ্ঞানে আছে অনেক ভুল, বিভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতা। এর মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয় তাতে আছে বস্তুজগতের সম্পর্ক, স্থান-কাল-পাত্রের প্রভাব। এ জ্ঞান বস্তুজগতের বাইরের কোনো মহাসত্যের সন্ধান দিতে পারে না। ফলে দৃশ্যমান বস্তুজগৎই মানুষের কাছে একমাত্র সত্য বলে মনে হয়। এই চিন্তা-চেতনায় মানুষের মনে ভোগবাদের সৃষ্টি হয়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!