নবীজির মায়াবী মুখখানা

  • আপডেট সময় বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
  • 5 পাঠক

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী। ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

এক জীবনে কত মুখই না দেখেছি আমরা। আরও কিছু দিন বেঁচে থাকলে আরও কত হাজার লাখ মুখ দেখব। মানুষের মুখ এক রহস্যঘেরা বিষয়।

সবার চোখ আছে, নাক আছে, কান আছে- কিন্তু কারও চেহারার সঙ্গে কারও কোনো মিল নেই। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের, বাবার সঙ্গে ছেলের মুখের কোনো মিল নেই। প্রতিটা মুখই আলাদা। আলাদা সৌন্দর্য। আলাদা শিল্প।

মহান আল্লাহ যত মুখ সৃষ্টি করছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মুখ কোনটি ? পৃথিবীতে অনেক সুন্দর মুখই ছিল, আছে ও থাকবে। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর মুখ আমার দয়াল নবীজি (সা.)-এর। তাঁর চেয়ে সুন্দর, স্নিগ্ধ, মায়াবী মুখ আর কারও নয়। আগেও ছিল না। এখনো নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। একবার সে মুখখানা যে দেখেছে তার জন্যই জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে গিয়েছে।

অবশ্য শর্ত হলো, ইমানের সঙ্গে দেখতে হবে। আসুন হাদিসের কিতাব ঘেঁটে নবীজি (সা.)-এর মায়াবী মুখখানা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করি। আর দোয়া করি, আল্লাহ যেন স্বপ্নে নবীজি (সা.)-এর দিদার লাভের মাধ্যমে আমাদের এই অন্ধকার জীবনে আলোর ফুল ফুটিয়ে দেন।

হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ আমার দীর্ঘ জীবনে রসুল (সা.)-এর চেয়ে সুন্দর আর কাউকে দেখিনি।’ (বুখারি ও মুসলিম।) একই কথা বলেছেন জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-ও। তবে তিনি একটি শব্দ পাল্টে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ আমার দীর্ঘ জীবনে রসুল (সা.)-এর চেয়ে সুন্দর আর কিছুই দেখিনি।’ অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রা.) ‘ কাউকে ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘কিছুই দেখিনি’ বলেছেন। কাউকে দেখিনি আর কিছুই দেখিনি এ দুটো শব্দের মাঝে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ আবদুল হক দেহলভী (রহ.)। তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রা.) বোঝাতে চেয়েছেন, নূর নবীজি (সা.)-এর সৌন্দর্যের সঙ্গে কোনো মানুষের সৌন্দর্যের তুলনা তো হতেই পারে না, এমনকি অন্য কোনো কিছুর সৌন্দর্যও নবীজি (সা.)-এর সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। কেননা সৃষ্টিজগতের সবকিছুর চেয়ে আমার নবী (সা.)-এর নুরানি রূপমাধুর্য তুলানাহীন। (মাদারেজুন নবুয়াত, প্রথম খণ্ড, ৯ পৃষ্ঠা।)

বুখারির বর্ণনায় এসেছে, বারা ইবনে আজেবকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ‘ রসুল (সা.)-এর পবিত্র চেহারা মোবারকের উজ্জ্বলতার সঙ্গে কি তরবারির চকচক আলোর ঝলকানির তুলনা করা যেতে পারে ? ’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘ কখনোই না। তবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চেহারার নুরের সঙ্গে পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলোর তুলনা হতে পারে। পার্থক্য হলো, পূর্ণিমার আলোর চেয়ে হুজুর (সা.)-এর চেহারা মোবারক বেশি উজ্জ্বল।’

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, হুজুর (সা.)-এর চেহারা তরবারির সঙ্গে তুলনা না করার প্রথম কারণ হলো, তরবারির মাঝে একধরনের হিং¯্রতা এবং ধারালো ভাব আছে, আর হুজুরের চেহারায় আছে কোমলতা এবং মায়াবী ভাব, যা চাঁদের মধ্যে আছে।

—————————————————————————-

আরেকটি কারণ হলো, তরবারি গোল নয়, হুজুরের চেহারা গোল, অবিকল চাঁদের মতো। মুসলিম শরিফের বর্ণনায় বারা ইবনে আজেব হুজুর (সা.)-এর চেহারার আকৃতি বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চেহারা চাঁদ ও সূর্যের মতো গোল।’ (বুখারি ও মুসলিম।)

—————————————————————————-

নবীজি (সা.)-এর চেহারার বর্ণনা নবীজি নিজে এভাবে দিয়েছেন, ‘আমি লাবণ্যময়, আর আমার ভাই ইউসুফ উজ্জ্বল। সিরাতবিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ উজ্জ্বল চেহারার চেয়ে লাবণ্যময় চেহারার আকর্ষণ বেশি।’ তবে সিরাতবিদরা এটাও বলেছেন, ‘ হুজুর (সা.)-এর চেহারা মোবারক হুবহু চাঁদের মতো গোল নয়। বরং চিবুকের দিক থেকে কিছুটা লম্বাটে। এক কথায় হুজুর (সা.)-এর চেহারা মোবারক লম্বা ছিল না। আবার পুরোপুরি গোলও ছিল না। এর মাঝামাঝি ছিল। যা দূর থেকে দেখলে গোলাকার মনে হতো।’ (মাদারেজুন নবুয়ত, প্রথম খণ্ড, ৯ পৃষ্ঠা।)

শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (রহ.) লেখেন, কোনো কোনো সিরাত বিশেষজ্ঞ সাহাবিদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে হুজুর (সা.)-এর চেহারা এক ফালি চাঁদের মতো ছিল। যেমন বিখ্যাত সাহাবি কবি কাব বিন মালিক (রা.) তাঁর কবিতায় হুজুরের চেহারাকে এক ফালি চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, হুজুর (সা.)-কে কেউ যদি একদিক থেকে দেখত তাহলে মনে হতো, সে যেন এক ফালি চাঁদ দেখছে। এ হিসেবে হুজুর (সা.)-এর সৌন্দর্যের সঙ্গে এক ফালি চাঁদের তুলনা করা হয়েছে। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেছেন, ‘ রসুল (সা.)-এর কপালে যখন ভাঁজ পড়ত, তখন মনে হতো এক ফালি চাঁদ হুজুর (সা.)-এর কপালে ভাসছে।’ (বুখারি।)

হজরত আবু বুকর (রা.) বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর চেহারা চাঁদের মতো উজ্জ্বল ছিল। চাঁদের আলো যেমন মনকে শীতল করে, হৃদয়ে প্রেম জাগায় তেমনি হজরত (সা.)-এর দিদারও আমাদের মনে প্রশান্তি আনত এবং হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিত।’

নেহায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘ হুজুর (সা.) যখন হাসতেন, তাঁর চেহারা এত বেশি উজ্জ্বল হতো যে আশপাশে কোনো কাচ থাকলে তা চিকচিক করত।’ (মাওয়াহিবে লাদুনিয়া।)

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!