মাদক চক্র আর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারে কলুষিত রাজনীতি

  • আপডেট সময় বুধবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১
  • 635 পাঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : মাদক আর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারে পুরো জেলার রাজনীতিকে কলুষিত করার অভিযোগ ওঠেছে। সচেতনমহল দাবি করছেন, এ জেলায় যিনি মাদক রাখছেন, তিনি সঙ্গে রাখছেন অস্ত্রও। এসব অস্ত্র কারো কাছে পেশা, আবার করো কাছে নেশা।

ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত পথে মাদক চোরাচালানের রুট ধরেই হরহামেশাই নোয়াখালীতে ঢুকছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। আর মাদকের সঙ্গে সেসব অস্ত্রের বেচাকেনাও চলছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

জানা গেছে, নোয়াখালীর প্রায় মাদক সিন্ডিকেটের হাতে রয়েছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। প্রতিটি মাদক কারবারি নিজের কারবার টেকসই রাখতে থাকছে কোন না কোন রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তির ছত্রছায়ায়। আর মাদক কারবার ও রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে সঙ্গে রাখছে এ আগ্নেয়াস্ত্র।

সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির পাশাপাশি মাদক কারবারিরা এখন অস্ত্র বেচাকেনায়ও জেলাজুড়ে আলোচিত। অবস্থাদৃষ্টে, অস্ত্র আর মাদক যেন এ জেলার রাজনীতির একটা অংশ হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডে গড়ে ওঠা অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে কুমিল্লা, ফেনী, পাবর্ত্য চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকা দিয়েই এসব অস্ত্র নোয়াখালীতে আসছে। এসব রুট দিয়ে ফেনসিডিল, হেরোইনের সঙ্গে আসছে ইয়াবাও।

নোয়াখালীর চিহ্নিত মাদক ও অস্ত্র কারবারিরা ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালীরা ঝুঁকছেন অবৈধ অস্ত্রের কারবারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে একই সঙ্গে পাচ্ছেন মাদকের চালানও। আবার মাদক কারবারিদের ধরতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে অস্ত্রের চালান। মাদক আর অস্ত্র চোরাচালানে যোগসূত্রে পুরো নোয়াখালী জেলায় এখন এক চরম অস্থিরতায়।

জেলার একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেন, মাদক কারবারিদের কাছে অস্ত্র আছে। মাদক কারবারিরাও এখন এই কারবারটি করে এমন তথ্য আমরা আগেই পেয়েছি। তিনি বলেন, তবুও, শত সমস্যা মোকাবেলা করে আমাদের সদস্যরা নিরস্ত্র হয়েও অনেক অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

নোয়াখালীর একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, অবৈধ অস্ত্র অবৈধ কারবারে ব্যবহার করা হয়। তবে মাদকের সঙ্গে এর যোগসূত্র বেশি। এর অন্যতম হোতারা তাদের কারবার ও প্রভাব ধরে রাখতে বা শক্তির জানান দিতে সঙ্গে অস্ত্র রাখে।

সূত্র জানায়, নোয়াখালীতে রাজনৈতিক দলের অনেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে। এরা বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের কোন না কোন নেতার অনুসারী। তাই পুলিশ ও অনেক সময় এসবজনদের ধরতে যথেষ্ঠ তোয়াক্কা করতে হয়।

সূত্র আরো জানায়, ভারতের কারখানায় তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের পিস্তলের সঙ্গে উগনি কম্পানির রিভলবার, মাউজার পিস্তল, ইউএস তাউরাস পিস্তল, ইতালির প্রেটো বেরেটা পিস্তল, জার্মানির রুবি পিস্তল, ইউএস রিভলবার, আমেরিকান নাইন এমএম পিস্তল,মেঘনাম কম্পানির পয়েন্ট থ্রি-টু বোরের রিভলবারও এ জেলায় নতুন নয়।।

সম্প্রতি, জেলা শহর মাইজদীতে আওয়ামী লীগের তিনটি বিবাদমান গ্রুপের দৌরাত্ম্য প্রদর্শনীকালে তাঁদের অস্ত্রবাজির একটি ভিডিও ক্লিপ পাওয়া যায়। এ সময় একরামুল করিম চৌধুরীর সমর্থকরা এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিনের সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ মোটর সাইকেল শোভাযাত্রায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা করার দৃশ্য দেখা গেছে।

পরবর্তীতে, শাহিন সমর্থকরাও অস্ত্রের জবাব অস্ত্রের ভাষায় দিতে গিয়ে তাদেরও অস্ত্র প্রদর্শন চিত্র সরেজমিনে লক্ষণীয় হয়। রাজনীতির নামে যেন সবই অস্ত্রের দৌরাত্ম্য আর তামসাবাজি।

অবশ্য , অস্ত্রধারীদের এমন একটি অস্ত্রবাজির ভিডিও বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন জেলার পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

একাধিক সূত্র জানায়, জেলার রাজনীতিতে কয়েকজন হাইপ্রফাইল হওয়ায় বৈধ অস্ত্রও রাখেন। তবে সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রও কিনছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভ‚ঁঞা বলেন, একটা সময় রাজনীতিতে মেধার সাথে মেধার প্রতিযোগিতা হতো। এখন অর্থের প্রতিযোগিতায় মেধা হেরে যায়। আর অর্থের দৌরাত্ম্যে রাজনীতি করতে হলে অস্ত্র আর মাদক ছাড়া ও তো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে যখনই অস্ত্রবাজি আর নেশাখোররা ডুকে পড়ছে তখন থেকেই রাজনীতি বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এখন সমাজের কোন মেধাবী, শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মানুষ রাজনীতি করতে চাইনা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, আমাদের দলে কোন অস্ত্রবাজ নেই। আমরা তো একটি দলের অস্ত্রবাজিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছি অনেক আগেই। মাদকাসক্ততার বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা দল থেকে চিরতরে উৎখাত করে রাখি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!