করোনাভাইরাস : মুখে খাওয়ার ওষুধ দেশের বাজারে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, নভেম্বর ৯, ২০২১
  • 472 পাঠক
ডেস্ক রিপোর্ট
—————

দেশের ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ ও বেক্সিমকো ফার্মাকে করোনায় মুখে খাওয়ার ওষুধ মলনুপিরাভির জরুরি বাজারজাতকরণের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

আজ মঙ্গলবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।

রাজধানীর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত বেক্সিমকো ও এসকেএফকে মলনুপিরাভির জরুরি বাজারজাতের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

করোনার চিকিৎসায় কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ ছিল না। গত সপ্তাহে একটি নতুন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। ‘মলনুপিরাভির’ নামের ওই খাওয়ার ক্যাপসুল দেশে উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বাজারে এসকেএফ ফার্মার উৎপাদিত ওষুধটির জেনেরিক সংস্করণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মনুভির’ আর বেক্সিমকো ফার্মার ওষুধটির জেনেরিক নাম ‘এমোরিভির’।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনুমোদনের তালিকায় আছে আরও আটটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- স্কয়ার, জেনারেল, বিকন, রেনেটা, ইনসেপটা, একমি, হেলথ কেয়ার ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস।

মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এগুলো অবশ্যই টিকার বিকল্প নয়। টিকা নিতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেট খেতে হবে।”

ওষুধের ব্যবহারবিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মুখে খাওয়ার এই ওষুধ পাঁচ দিনের ডোজ। সকালে চারটা ট্যাবলেট আর রাতে চারটা ট্যাবলেট। পাঁচ দিনে মোট চল্লিশটা ট্যাবলেট খেতে হবে।

করোনা নিরাময়ে যৌথভাবে মলনুপিরাভির তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মার্ক ও রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক। ওষুধটির ওপর পরীক্ষা হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ১৭টি দেশে। ওষুধটি ৪ নভেম্বর অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কিংডম মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অথোরিটি। ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধটি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

মলনুপিরাভির কী?

মলনুপিরাভির একটি ট্যাবলেট বা বড়ি। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ঔষধটি দিনে দুইবার ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদেরকে দেয়া হয়। মূলত এই ঔষধটি ফ্লু এর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অনুযায়ী, এই ঔষধটি রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটাই প্রথম ঔষধ যেটি শিরায় প্রয়োগ নয় বরং মুখে সেবন করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক, শার্প এন্ড ডোম (এমএসডি) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস-এর তৈরি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটিই মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ।

রোগীর মধ্যে কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ঔষধটি দেয়া গেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।

কিভাবে কাজ করে মলনুপিরাভির?

নতুন এই চিকিৎসায় ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট এনজাইমকে লক্ষ্য করে কাজ করে। ওই এনজাইমটি ব্যবহার করে ভাইরাসটি নিজের মতো আরো ভাইরাস তৈরি করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

এই ঔষধটি ভাইরাসটির জেনেটিক কোডে একটি ত্রুটি তৈরি করবে যা ভাইরাসটিকে বিভাজিত হতে বাধা দেয়। যার কারণে দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কমে যায় এবং এর কারণেই রোগের তীব্রতাও কমে যায়।

মার্ক বলছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়ান্টের উপরও সমানভাবে কার্যকর হওয়ার কথা।

যুক্তরাজ্যের ঔষধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ জানায়, এই ট্যাবলেটটি সেসব রোগীদের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে যাদের মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এবং কমপক্ষে একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে যেমন স্থূলতা, বার্ধক্য, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী জুন রাইন বলেন, “কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ঔষধটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে যোগ হল।”

তিনি বলেন, “এটি এই রোগের জন্য বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত অ্যান্টি-ভাইরাল যা শিরায় না দিয়ে মুখে খাওয়া যেতে পারে।”

“এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মানে কোভিড-১৯ একটি গুরুতর পর্যায়ে যাওয়ার আগেই হাসপাতালের বাইরেই এর মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।”

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!