তিন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি : টিআইবি

  • আপডেট সময় বুধবার, মে ১১, ২০২২
  • 337 পাঠক

দিশারী ডেস্ক

————

কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে এই অনিয়মের চিত্র পেয়েছে গবেষণা সংস্থাটি।

আজ বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষণায় ওঠে আসা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষক মাহফুজুল হক ও নেওয়াজুল মওলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতির পরিমাণ ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার, বাঁশখালী এস এস বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৫৫ কোটি ও মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আত্মসাৎ হয়েছে ১১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক এবং মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে যথাযথ বিশ্লেষণ না করে প্রভাবশালীদের স্বার্থে কয়লা ও এলএনজি প্রকল্প অনুমোদনের অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ইজারাকৃত জমি ব্যবহারকারীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জমি ক্রয়/অধিগ্রহণ বাবদ মূল্য প্রদানে কমিশন আদায়, ব্যক্তিগত জমির ক্ষতিপূরণের এককালীন অনুদানের টাকা আত্মসাৎ, ব্যক্তিগত জমির ক্ষতিপূরণের এককালীন অনুদানের টাকা প্রদানে কমিশন আদায়, জনপ্রতিনিধি, এনজিওকর্মী, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং মধ্যস্বত্বভোগী ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবরদখল এবং অর্থ প্রদান না করা খাস জমির জাল দলিল তৈরি করে তা বিক্রয় বাবদ অর্থ গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে (ভারত, চীন,পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া) নির্মিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩.৪৬-৫.১৫ মধ্যে থাকলেও নির্বাচিত প্রকল্পে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুযোগ রেখে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম ২২ থেকে ৪৯ শতাংশ বেশি দাম পড়বে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে দাতানির্ভর নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। একদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অধিক দুর্নীতি এবং দ্রুত মুনাফা তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকায় প্রয়োজন না থাকলেও কয়লা এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রভাবশালী মহলকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানে প্রকল্প অনুমোদন, বিবিধ চুক্তি সম্পাদন, ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ এবং বিদ্যুৎ ক্রয়ে প্রতিযোগিতা ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে বিশেষ বিধানের আওতায় চুক্তি ও কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে। কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশ দূষণ ও সংকটাপন্ন এলাকাসমূহে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বিদ্যমান আইন ও বিধি কার্যকরভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ- বন, নদী, খাস জমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধন হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং পুলিশের গুলিতে আন্দোলকারীদের মৃত্যু; মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও বিচার না হওয়াসহ অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে

যা খাত সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে আরও উৎসাহিত করছে বলে মনে করি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!