দিশারী ডেস্ক : নোয়াখালী পৌরসভার এক বাসিন্দা জাহেদ আলী। তাকে জানানো হলো, গত দু’ বছরে মশক নিধনে অনেক টাকা ব্যয় করেছে নোয়াখালী পৌর কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য শুনে জাহেদ আলী অবাক। বললেন, গত কয়েক বছরে তো মশার উৎপাত উল্টো আরও বেড়েছে।
আগে এমন পরিস্থিতি ছিল না। এখন দিন নেই, রাত নেই, মশার যন্ত্রণায় টেকা দায়। মশা নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে বললেন, মাঝেমধ্যে দেখি পৌর কর্তৃপক্ষ ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেয়। শুধু ধোঁয়াই দেখি, কিন্তু মশা তো মরে না।
ফগার মেশিন থেকে যে ধোঁয়া দেয়া হয় ; তাতে আদৌ কোনো ওষুধ (কীটনাশক) থাকে কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে জাহেদের। খুঁজলে তার মতো সন্দিহান আরও অনেককেই পাওয়া যাবে নোয়াখালী পৌরসভায়। কারণ, নগরীর হাজার হাজার বাসিন্দাই গত ক’বছরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন। নগরীর ঘরে-বাইরে অফিস-আদালত, দোকানপাট সবখানেই মশা আর মশা।
মশার উপদ্রব এখন আর কেবল যন্ত্রণায় সীমাবদ্ধ নেই, হয়ে ওঠেছে প্রাণঘাতী। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এজেলায়
মশাবাহিত রোগে কিছুলোক মারা গেলেও প্রকৃত পরিসংখ্যান নেই তাদের হাতে।
এমন প্রেক্ষাপটে নোয়াখারী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম ও ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। কালিতারা, সোনাপুর, দত্তের হাট, মাইজদীসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খাল-নালা-নর্দমায় মশার লার্ভা কিলবিল করছে। ঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় প্রতিটি এলাকায় এখানে- সেখানে, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। এসব এলাকার একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকার নালা-নর্দমা ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধে শ্বাস নেয়াই কঠিন হয়ে ওঠেছে। এখন কেবল সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনেও বাসাবাড়িতে মশা কিলবিল করছে।
অথচ নোয়াখালী পৌরসভার গত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংস্থাটি মশা নিধনে কম ব্যয় করেনি। এর মধ্যে মশা মারার কীটনাশক , ফগার, স্প্রেসহ বিভিন্ন যন্ত্র কেনা হয়েছে কয়েক লাখ টাকার এবং মশা নিধন-সংক্রান্ত অন্যান্য খাতে ব্যয়ও দেখানো হয়েছে অনেক অংকের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা শিফিকা আক্তার দৈনিক দিশারী’কে বলেন, এত টাকার ওষুধেও মশা কেন মরে না ! তা খতিয়ে দেখা দরকার। আসল ওষুধ কেনা হয়, নাকি নকল ওষুধ ছিটিয়ে পৌরবাসীকে বোকা বানানো হচ্ছে তা উদঘাটন করা জরুরি।
মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা স্বীকার করেন পৌরসভার একজন কাউন্সিলরও। তিনি বলেন, আসলেই বেশি মশা। পরিচ্ছন্ন বিভাগের লোকজন প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশার ওষুধ ছিটিয়ে থাকে। এরপরও মশা কমছে না।
এর কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন জানিয়ে পৌরসভার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মশক নিধনে তাঁরা এই পর্যন্ত যে মশার ওষুধ কিনেছিল ; সেগুলো তেমন কার্যকর নয়। ইতোমধ্যে , একটি বিশেষজ্ঞ দল এ নিয়ে জরিপ চালিয়েছে। সেই জরিপের সুপারিশ অনুসারে মশার নতুন ওষুধ কেনা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই মশার উপদ্রব থেকে আমরা পৌরবাসীকে মুক্তি দিতে পারব।
তবে পৌরসভার এক কাউন্সিলর জানালেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়সারাগোছের কাজ করছে। তাদের কাজের ধীরগতির কারণে খাল ও নালায় অনেকদিন ধরে ময়লা আবর্জনা জমছে। এতে পানি জমে মশা বাড়ছে।
এ ছাড়া বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র।
পৌরসভার আরেক কর্মকর্তা বলেন, মেয়র সাহেবের নির্দেশে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণে নতুনভাবে মশানিধন ওষুধ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Leave a Reply