নামেই ওষুধ ! আসল নকল চেনা বড়ই দায়

  • আপডেট সময় শুক্রবার, আগস্ট ৪, ২০২৩
  • 312 পাঠক

নিজস্ব ডেস্ক। ৪ আগষ্ট, ২০২৩।

১৯৪০ সালের ওষুধ আইনের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী, ওষুধ পরীক্ষার পর একটি নির্দিষ্ট ফরমে প্রতিবেদন দেয় চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি। ওই ফরমে পরীক্ষার প্যারামিটার বা কী কী বিষয় পরীক্ষা করে দেখতে হবে তা উল্লেখ নেই। আইনের এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে ওষুধ পরীক্ষার নামে শুধু ‘ ওষুধের সক্রিয় উপাদান ’ পর্যাপ্ত আছে কিনা ও কিছু ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওষুধটি গলে যাবে কিনা তা পরীক্ষা হচ্ছে। এই পরীক্ষায় পাস করলে ওষুধটি ‘ মানসম্মত ’ আর পাস না করলে ‘ মানসম্মত নয় ’ বলে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে।

বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে পরীক্ষা করা ওই ওষুধে আর কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, সেই উপকরণগুলো ক্ষতিকর কিনা এবং সবগুলো উপকরণের বিশুদ্ধতা কত শতাংশ তা আর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না। ফলে ওষুধে কী কী উপকরণ থাকে, এসব উপাদান কতটুকু বিশুদ্ধ সেটা ‘ পরীক্ষা প্রতিবেদনে ’ ওঠে আসে না।

২০২২ সালের ১১ এপ্রিল সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি থেকে দেয়া একটি আয়ুর্বেদিক ক্যাপসুলের পরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যাপসুলটির প্রস্তুতকারক দাবি করেছে, এতে সক্রিয় উপাদান রয়েছে ৬০৮ মিলিগ্রাম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এতে সক্রিয় উপাদান পাওয়া গেছে ৬৩১.৮৭ মিলিগ্রাম। সে হিসেবে সক্রিয় উপাদান পাওয়া গেছে ১০৩.৯৩ শতাংশ। যদিও সক্রিয় উপাদান ৯৫ থেকে ১০৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকলে সেই ওষুধকে মানসম্মত বলা যায়।

পরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্যাপসুলটির প্রস্তুতকারকের দাবি, এটি মানুষের পেটে গেলে ৩ মিনিটের মধ্যে গলে যাবে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধটি গলতে ৮ মিনিট সময় নিয়েছে। তবে ১০ মিনিটের মধ্যে গলে গেলে সেটিকে মানসম্মত বলে ধরা হয়। এ কারণে ওষুধটি ‘মানসম্মত’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওষুধটিতে নিষ্ক্রিয় উপাদান কী কী ব্যবহার করা হয়েছে তা পরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। এছাড়া ওষুধে থাকা সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় উপাদান কতটুকু বিশুদ্ধ সেই তথ্যও পরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক এম ডি কাইয়ুম বলেন, ওষুধ আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ফরমে পরীক্ষা প্রতিবেদন দিতে হয় আমাদের। ওই ফরমের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ওষুধে কী কী উপকরণ আছে, সেগুলো কতটুকু বিশুদ্ধ- তা পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা ফরমে উল্লেখ নেই। সেই ফরমে ওষুধের সক্রিয় উপাদান কতটুকু আছে, আমরা শুধু সেটা উল্লেখ করি। ওই ওষুধে আর কী কী উপকরণ আছে, সবগুলো উপকরণ কতটুকু বিশুদ্ধ- এসব সাধারণত দেখা হয় না, যার কারণে লেখা হয় না। বিশেষ ক্ষেত্রে দেখা হয়। সব ওষুধের সব কিছু দেখতে গেলে একটা ওষুধ পরীক্ষার পেছনে লাখ টাকার বেশি খরচ হতে পারে, সময়ও লাগবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজার থেকে ওষুধের স্যাম্পলগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোর মান ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে থাকে। এখানে ঠিক আছে মানে হচ্ছে ওষুধের গায়ে যে পরিমাণ সক্রিয় উপাদানের কথা লেখা আছে, তা আছে কিনা দেখা।

একটা ওষুধে ওমিপ্রাজল ২০ মিলিগ্রাম থাকার কথা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কত মিলিগ্রাম আছে সেটা বের করে পরীক্ষা প্রতিবেদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিগুলো। এ কাজটি করতে প্রতিটি স্যাম্পলে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ হতে পারে। কিন্তু যদি ওই ওষুধে ওমিপ্রাজলের বাইরে আর কী কী নিস্ক্রিয় উপাদান আছে সেটি জানতে হয়, তখন লাখ টাকা লাগবে। আমাদের দেশে সেটি করা হয় না। ওষুধের সবকিছু এখানে পরীক্ষা করা হয় না।

তিনি আরও বলেন, সক্রিয় উপাদান ও নিস্ক্রিয় উপাদান মিলে ওষুধ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ সামান্য। বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয় উপাদান, যা নিয়ে ওষুধের আকার-আকৃতি দেয়া হয়। ওষুধের উপাদানগুলো কত শতাংশ বিশুদ্ধ, সেটার উপরও নির্ভর করে দাম। যে উপাদানের বিশুদ্ধতা ৯৯ শতাংশ আর যে উপাদানের বিশুদ্ধতা ৯৯.৯৯ শতাংশ; দুটি দাম এক হবে না। আমাদের দেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি কম দামে নিম্নমানের কাঁচামাল আমদানি করে। ওষুধ বা কাঁচামালের বিশুদ্ধতা সরকারিভাবে পরীক্ষা করা হয় না বলে, এসব বিষয় ধরা পড়ে না।

একজন অ্যাডভোকেট বলেন, ওষুধে ব্যবহার করা উপকরণগুলো আসলেই কী, সবগুলো খাওয়ার উপযোগী কিনা, উপাদানগুলো কতটুকু বিশুদ্ধ তা পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম করা উচিত। দায়সারাভাবে হাজার হাজার ওষুধ পরীক্ষা না করে অন্তত একশ ওষুধ যদি পরিপূর্ণভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং অনিয়ম পেলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরির দুঃসাহস কেউ দেখাবে না।

তিনি আরও বলেন, ওষুধের কাঁচামাল কতটুকু বিশুদ্ধ সেটা বের করার জ্ঞান ও যন্ত্রাংশ যেহেতু আমাদের আছে, তাহলে সেটা বের করা উচিত। ওষুধ যেখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কী আইন দেখে কাজ করবেন? মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার প্রতি ঔষধ প্রশাসনকে দায়বোধ অনুভব করতে হবে। ওষুধ আইনে যে দুর্বলতা আছে, সেই দুর্বলতা কাটিয়ে আইনকে সংশোধন করার জন্য নাগরিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানাই।

এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০-২১ অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঔষধ প্রশাসনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি ল্যাবে মোট ৩ হাজার ৩৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ; এই সময়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা পড়ে ৪ হাজার ৬৫৯টি। সে হিসেবে ওই অর্থবছরে ১ হাজার ৩০৯টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৩৩৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এরপর থেকে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা শুধুই কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অস্বাভাবিকভাবে মাত্র ২ হাজার ৬৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর পরের অর্থবছর আরও কম, মাত্র ২ হাজার ৩৩১টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নমুনা পরীক্ষা হয় ৩ হাজার ৮০৯টি।

এমন অবস্থায় ওষুধের বিশুদ্ধতা করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলতেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমাদের ল্যাবরেটরিগুলো চালাতে হয়। আমাদের ঘর আছে ছাদ নেই অবস্থা বা টিন ফুটো। এখন ওষুধের মাত্রা ঠিক আছে কিনা এটা নিশ্চিত করাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।

তিনি আরও বলেন, ওষুধে নিষ্ক্রিয় উপাদান যেগুলো আছে, সেগুলো এমনিতেই মানসম্পন্ন দিতে হবে। নয়তো সক্রিয় উপাদান ওষুধে লেগে থাকবে না। ওষুধে সক্রিয় উপাদান টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও কোম্পানিগুলো ভালো মানের নিষ্ক্রিয় উপাদান ব্যবহার করবে। আর বিশুদ্ধতা যাচাই করার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলতে পারেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ঔষধ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. এনামুল হক বলেন, আপনি যেভাবে বললেন, আমাদেরকে কেউ কখনো এটা বলেনি। ওষুধ পরীক্ষার সময় বিশুদ্ধতাও পরীক্ষা করা দরকার। এ বিষয়টি বিধিমালা হিসেবে আমরা করবো। জরুরি হলে আমরা পরিপত্র করতে পারি। জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এটা নিয়ে আপনারা লিখতে পারেন। তখন পরিপত্র আকারে ঔষধ প্রশাসনকে গাইডলাইন দিতে পারবো। এটা যেকোন সময় মন্ত্রণালয় করতে পারবে।

—————————————————-

নকল-আনরেজিস্টার্ড ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে না

——————————————————

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে আনরেজিস্টার্ড ওষুধ পরীক্ষা করা হয় না। এমনকি নকল হিসেবে শনাক্ত হলে সেটিও পরীক্ষা করা হয় না। শুধুমাত্র নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানির বৈধ ওষুধ পরীক্ষা করে থাকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাহাড়তলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার আলামত ওষুধ পরীক্ষা না করেই ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পুলিশকে প্রতিবেদন দিয়ে দেন ল্যাবরেটরির তৎকালীন পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ; ওই পরীক্ষা প্রতিবেদনে তিনি মন্তব্য করেন, প্রেরিত নমুনাগুলো আনরেজিস্ট্রার্ড বিধায় নমুনাগুলো অবৈধ। পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়ে না।

আনরেজিস্ট্রার্ড ওষুধগুলো পরীক্ষা করে ক্ষতির মাত্রা আদালতকে না জানানোর কারণে আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে লঘুদণ্ড পেতে পারেন বলে আশংকার কথা জানিয়েছেন নোয়াখালীর এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী । এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক এম ডি কাইয়ুম বলেন, গোড়াতেই গলদ বলে একটা কথা আছে। যে ওষুধগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নয়, নকল হিসেবে শনাক্ত- এসব ওষুধ আমরা পরীক্ষা করি না। নকল-আনরেজিস্টার্ড ওষুধ পরীক্ষা করে না দেখায় এগুলোর ক্ষতির মাত্রা অজানা থেকে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ ওষুধ মানেই ক্ষতিকর হিসেবে ধরে নিতে হবে।

এদিকে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক এম ডি কাইয়ুম জানান, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ট্রেডিশনাল মেডিসিন পরীক্ষা করে ৩৩টি নমুনা নিম্নমানের বলে শনাক্ত করেছেন তারা। নিম্নমানের ধরা পড়া কিছু হোমি ওষুধ ছিল আমদানি করা। এসব নিম্নমানের ওষুধ শনাক্ত করে প্রতিবেদন দেয়ায় তাকে অনেক হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে হুমকিদাতাদের পরিচয় জানাতে রাজি হননি সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক এম ডি কাইয়ুম।
————————————————————————–

সাধারণ মানুষের পক্ষে ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ কতটা ?

————————————————————————–

এদিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারার চাতরি চৌমুহনি বাজারের মা ফার্মেসি থেকে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে নকল ‘সারজেল’ কিনে আনেন এ প্রতিবেদক। এছাড়া এর আগে চট্টগ্রাম নগর, জেলার আনোয়ারা ও সাতকানিয়া থেকে কিছু ওষুধ কিনেন এ প্রতিবেদক। এর মধ্যে কিছু ওষুধের প্যাকেট, পাতা দেখে নকল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ওষুধ পরীক্ষা করার জন্য সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক এম ডি কাইয়ুমের কাছে গেলে তিনি জানান, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ওষুধের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ তাদের নেই।

তিনি আরও জানান, ওষুধ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী, ওষুধ পরীক্ষা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানই করতে পারবে। তবেই এটা আইনি ভিত্তি পাবে। সাধারণ কেউ নিজে সচেতন হওয়ার জন্য ওষুধ পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু এটা নিয়ে আইনগতভাবে কিছু করা যাবে না। উল্টো আইনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা আছে।

ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এক সময় ওষুধ পরীক্ষা করার জন্য চারটি নমুনা নিতে হতো ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে অন্তত ২০০ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল নিতে হবে পরীক্ষার জন্য, তাও একই ব্যাচের। এখন এতগুলো নকল-ভেজাল ওষুধ এক সাথে না-ও থাকতে পারে। এ ধরনের নিয়ম নকলবাজদেরই সুরক্ষা দেবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২২ সালের ২৪ জুলাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক সাখাওয়াত হোসেন রাজু আকন্দের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কিছু সন্দেহজনক (নকল) ওষুধ পরীক্ষা করানোর উপায় জানতে চান। তখন তিনি বলেন, ওই ওষুধগুলো পরীক্ষা করতে হলে আমাদের নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে ওঠাতে হবে। সেগুলো কোন লাইসেন্সধারী ফার্মেসি থেকে তাদের ওষুধ কেনার ইনভয়েসসহ ওঠাতে হয়। অন্তত ২০০ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল নিতে হবে একই ব্যাচের।

নকল ওষুধ এক সঙ্গে এতগুলো তো পাওয়া যায় না বা বিক্রি করে না, বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ডিডি স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।’ এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপপরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ আমাদেরকে সন্দেহজনক ওষুধ এনে দিলেই আমরা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারি না। ফার্মেসিতে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে অন্তত ২০০ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ওঠাতে হবে। সেই ওষুধগুলো কেনার রশিদ নিতে হবে। নানা নিয়মকানুন মানতে হবে।

এদিকে নকল সন্দেহ করা ওষুধগুলো পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম গবেষণাগারের এসএসও এবং তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা এ জে এম মোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এ প্রতিবেদক। তিনি জানান, ওষুধ পরীক্ষা করার সুযোগ তাদের নেই। তখন তাকে জানানো হয় বিসিএসআইআর এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ওষুধ পরীক্ষা করা যাবে এবং এজন্য ফি লাগে ১৩ হাজার টাকা।

এরপর এ জে এম মোরশেদ বলেন, এ বিষয়ে আপনি পরিচালক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এরপর একই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিসিএসআইআর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আমাদের এখানে ওষুধ পরীক্ষা করার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। পানি পরীক্ষা করে দিতে বলতেন, করে দিতাম।

সন্দেহজনক ওষুধগুলো পরীক্ষা করার জন্য অন্য কোন উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে না বলার পর তিনি বলেন, তাহলে আর কেউ ওষুধ পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে কিনা আমি জানি না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!