দলিল কত প্রকার ও কি কি ?

  • আপডেট সময় বুধবার, আগস্ট ২৩, ২০২৩
  • 4608 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৩ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ি জমির দলিল মোট ৯ প্রকার। যথাঃ-
(১) সাফ-কবলা দলিল; (২) দানপত্র দলিল; (৩) হেবা দলিল; (৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল; (৫) এওয়াজ দলিল; (৬) বন্টন নামা দলিল; (৭) অছিয়তনামা দলিল; (৮) উইল দলিল ও (৯) নাদাবি দলিলবা মুক্তি নামা দলিল।

১) সাফ-কবলা দলিল
কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফ-কবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবলা বলা হয়। এই কবলা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।

২) দানপত্র দলিল
যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

৩) হেবা দলিল
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

৪) হেবা বিল এওয়াজ
এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।

৫) এওয়াজ দলিল
যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।
এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।

৬) বন্টনমানা দলিল
শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।

৭) অছিয়তনামা দলিল
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।

৮) উইল দলিল
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবিত কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।

৯) নাদাবী দলিল
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!