সীমান্ত দিয়ে চোরাই চিনি আসছে কিভাবে !

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৩
  • 103 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৪ আগস্ট২০ ২৩ খ্রিস্টাব্দ ।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চিনি আনা হচ্ছে অবৈধভাবে। চোরাকারবারিরা এসব ছড়িয়ে দিচ্ছে সারাদেশে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছে চিনি আমদানি ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো। তবে ১৩ দিন আগে চিঠি দেয়া হলেও চোরাচালান বন্ধে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকরা।

চিনি আমদানি ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ) নেতারা বলছেন, অবৈধ কারবার বন্ধ না হলে দেশীয় চিনি শিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

তবে ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে চিনি আমদানি করে অল্প কয়েকটি কোম্পানি। বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে সেই হারে কমানো হয় না। এমনকি ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে দেশে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সে কারণে অবাধে ঢুকছে চিনি। এটি বন্ধ করতে দাম সমন্বয় জরুরি।

অবৈধ পথে চিনি আনা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১০ আগস্ট বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো ওই চিঠিতে বিএসআরএ বলেছে, সরকার গত অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে আমদানি করা চিনি থেকে। তিন মাস ধরে ভারত থেকে নিম্নমানের চিনি অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় চিনি শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় চিনি শিল্পের ধ্বংস অনিবার্য। এ বিষয়ে সরকার অবহিত থাকলেও কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করায় আমদানিকারকরা উদ্বিগ্ন।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে চিনি ঢুকছে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকটি চালান জব্দ করেছে। তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।

এদিকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে কীভাবে দেশে চিনি ঢুকছে– পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ওই অঞ্চলের কিছু ব্যবসায়ী। সম্প্রতি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা এ বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ধরনের চোরাকারবারির সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এ বিষয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে  বলেন, সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক চিনি ঢুকছে দেশে। যেগুলোর বেশির ভাগ নিম্নমানের। সরকার চাইলে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে চোরাচালান বন্ধ করতে পারে।

বিএসআরএর মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, অবৈধভাবে প্রতিদিনই ঢুকছে চিনি। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে দেশের পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

চলতি বছরের এপ্রিলের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দর নিম্নমুখী। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে সরকার যতবারই দাম বেঁধে দিয়েছে, তা একবারও কার্যকর করেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৮ রুপিতে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৬ থেকে ৬৪ টাকা।

বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এসব চিনি অবৈধ পথে এনে সীমান্তবর্তী হাটগুলোতে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দোকানিরা খোলা আকারে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করেন। কিন্তু দেশি চিনি খুচরা দোকানিদের বিক্রি করতে হয় ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অবৈধভাবে চিনি আসুক, এটা কেউ চান না। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে চিনির সরবরাহ বাড়ালে অবৈধভাবে চিনি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!