প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রের শীর্ষে নোয়াখালী ও ফেনী 

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
  • 155 পাঠক

—————————————————————————————

ই-ক্রয় কার্যের ৭০ ভাগ পাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদারেরা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৫ কাজের সবগুলোই এক ঠিকাদারের হাতে

—————————————————————————————-

নিজস্ব প্রতিবেদক। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাহীন একক দরপত্রের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কাজ হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক)। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আর উত্তর সিটির অবস্থান ‘সাত’-এ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘ বাংলাদেশে ই-সরকারি ক্রয়: প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতা বিশ্লেষণ ’ শীর্ষক গবেষণায় এ চিত্র ওঠে এসেছে।

সোমবার ধানমন্ডিতে টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুর ইসলাম। তিনি জানান, সরকারের ই-জিপি পোর্টালে থাকা ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত সব ই-কার্যাদেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ২০১২ সাল থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ই-জিপিতে (অনলাইনভিত্তিক সরকারি ক্রয়কার্য) হওয়া কাজগুলোর মধ্যে ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশই হয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে। এই সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৬ টি। যার চুক্তিমূল্য ১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে হওয়া ১ হাজার ৪৩১টি কাজ হয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে। যার চুক্তিমূল্য ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচটি দরপত্রের একটি একক দরপত্রের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। ই-ক্রয় কার্যের ৭০ ভাগ পাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদারেরা। আর মাত্র ৩০ ভাগ কাজ পাচ্ছেন স্থানীয় নন এমন ঠিকাদার। ঠিকাদারের আধিপত্য ইঙ্গিত করে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য যোগসাজশ এবং গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান।

দেখা গেছে, ফেনী ও নোয়াখালী সবচেয়ে বেশি একক দরপত্রপ্রবণ জেলা। এই দুই জেলায় প্রতি দুটি কার্যাদেশের একটি একক দরপত্রের মাধ্যমে হয়। ৯২টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে একক দরপত্র পড়ার হার ৭৫ ভাগের বেশি। ৪১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭৫ শতাংশ কাজ পেয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে।

টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজেও ঠিকাদারদের আধিপত্য লক্ষণীয়। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ কাজের টেন্ডার একজন ঠিকাদারকেই দেওয়া হয়েছে, এমন ঘটনাও রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়া হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ২৫টি কাজের সবগুলোই, অর্থাৎ শতভাগ পেয়েছে মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই মন্ত্রণালয়ের চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২২টি কাজের মধ্যে ২১টি পেয়েছে মেসার্স ঢাকা মেটাল অ্যান্ড মেশিনারিজ স্টোর।

টিআইবির পর্যবেক্ষণ বলছে, তুলনামূলক ছোট অঙ্কের কাজগুলো ই-জিপির মাধ্যমে হয়। ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপির মাধ্যমে যত কেনাকাটা হয়, তার ৯৯ ভাগের বেশি কাজের চুক্তিমূল্য ২৫ কোটি টাকার নিচে, যার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৫টি। আর ১০০ কোটি বা তার বেশি চুক্তিমূল্যের কাজ ই-জিপির মাধ্যমে হয়েছে মাত্র ৮২টি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক যোগসাজশ ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া, অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া এবং কাজ ভাগাভাগির কারণে কাজের মান খারাপ হচ্ছে।’

ই-জিপির মূল উদেশ্য ছিল সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো এবং সম্পাদিত কাজের মান বাড়ানো। টিআইবি মনে করে, এই দুটি বিষয়ে ই-জিপির প্রভাব কম।

বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতে এবং সম্ভাব্য যোগসাজশ বন্ধে একক দরপত্রপ্রবণ ক্রয় অফিসগুলোকে নজরদারির ভেতর আনতে সুপারিশ করেছে টিআইবি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!