———————–
আকাশ মো. জসিম
সম্পাদক ও প্রকাশক।
————————-
একজন সম্পাদক ও প্রকাশক নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সদস্য হতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, হতে পারলেননা। বাতিল তালিকায় নামের পাশে লেখা ছিল চাহিদামাফিক পত্রিকা পাওয়া যায়নি। অথচ, ওই সম্পাদকের মাত্র নোয়াখালী প্রতিনিধি সদস্য হয়ে বীরদর্পে নোয়াখালী চষছেন। ওই সম্পাদক হেন কোন অপরাধারী নেই, যাকে নোয়াখালীর এই প্রতিনিধি, সেই প্রতিনিধি নামে পত্রিকার পরিচয়পত্র না দেয়ার দু:সাহস দেখাননি। নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক আহবায়কের যেমন কোন দু:সাধ্য ছিলনা স্বামী, স্ত্রীকেও সদস্য পদের দাম্পত্য উপহার দিতে।
এসব অসাধুকর্মে আমারও দায়বদ্ধতাও কম ছিলনা। একজনকে দৈনিক দিশারীর নির্বাহী সম্পাদক পদের সম্মান জানিয়ে সদস্য হতে যাই দরকার ছিল, সবই করে দিলাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শেষ পর্যন্ত সেও আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিচালনাকারী সমন্বয়ক নিযুক্ত হলেন।
এক যুগ আগের কথা। জীবদ্দশায় গাজিউল হক গাজি ভাই একদিন এক যুবককে নিয়ে এলেন। বললেন, ছেলেটি এতিম। খুবই অভাব, অনটনে, খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। দৈনিক দিশারীর একটি পরিচয়পত্র হলে তার (গাজির) সাথে চলে অন্তত খেয়ে, পরে বাঁচতে পারবে। জীবন সংগ্রামে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনধারায় তাকে নানাভাবে আর্থিক সহায়তা করতে কার্পণ্য ছিলনা আমার। অনেকে তাকে দুম্বা নামে ডাকে।এক যুগ পরে সেও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের নির্বাচনী মাঠে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আরেকদিন এক হকারকে সঙ্গী করে আমার কাছে এসেছিলেন এক হতাশাগ্রস্ত হাতুড়ে চিকিৎসক।বিষম মিনতি, অনুনয় ও বিনয় করে আমার পত্রিকায় যে কোন পদে পরিচয়পত্রের সুযোগ চায়।আমাকে নাকি আজীবনই শ্রদ্ধায় রাখবেন ! তার নানা আকুলতা, ব্যাকুলতায় শেষ পর্যন্ত তাকে একটি এলাকার প্রতিনিধি পদের পরিচয়পত্র প্রদান করি।একপর্যায়ে, ওই পরিচয়পত্রটা দেখিয়ে জাতীয় ও জেলার বিভিন্নমহলে দৌঁড়ঝাপ বাড়িয়ে দেয়। আমার পত্রিকার বিরুদ্ধপক্ষরা ভাবছিল, আমি হয়তোবা ওই নামখাওয়াস্ত থেকে বিশেষ কোন আর্থিক সুযোগ, সুবিধা হাসিল করছি। তারাও কিছুদিন পরে তাদের পত্রিকায় একেবারে প্রিণ্টার্স লাইনেই তার নাম ছাপিয়ে দিলেন। এ পর্যায়ে দেখলাম, আসলে সে একজন গাঁও, গেরামে ডুগডুগিবাজিয়ে আইসক্রিম বিক্রয় করেছিল। কিছু সময় ঠুঙ্গাব্যাপারী।
দেড় যুগ আগে সেই সময়ের সমাজকর্মী ( বর্তমানে আইনজীবি ) জনাব মিরাজ উদ্দিন জুয়েল আর আমার সম্পর্কটা ছিল একই অন্তরাত্মার। তিনি নোয়াখালী মৌজার ঠক্কর এলাকায় প্রশিকায় কাজ করতেন। ওই এলাকার একজন তার পিছু নিয়েছেন দৈনিক দিশারীর পরিচয়ে নিজেকে সম্ভ্রান্ত করতে। পরে মিরাজ ভাই তাকে নিয়ে আমার কাছে নিয়ে এলেন। লোকটি জানালেন, তার ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে। বাবা হিসেবে তার অন্যকোন পরিচয় নেই। মিরাজ ভাই’র অনুরোধে তাকে পরিচয়পত্র দিলাম। একপর্যায়ে সেও কিছুদিন আমার বিরোধী শিবিরে উস্কানী দেয়ার অনেক ঘটনা জানা রয়েছে।
আরেকজন হেঁটে হেঁটে, পথে-ঘাটে, সেলুনে সেলুনে লোশন বিক্রয় করতেন। পত্রিকাটির শ্রদ্ধেয় প্রকাশক এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞার পরামর্শে সে সময়ের সাপ্তাহিক দিশারীর পরিচয়পত্রটা তাকে আমিই দিয়েছিলাম। কিছুদিন পর সে যেন আর্ন্তজার্তিক পর্যায়ের সাংবাদিক। আমার বিষয়ে বিভিন্নমহলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও নানা কথা বলতে শুনা গেছে। বললাম, এসব আমার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাত্র। এরপর সে নানাপথ মাড়ি দেয়। চড়াই উৎরাই হিরোইনসহ আটক হয়। জেলহাজতে জামিন নিতেও আমার সহায়তার দরকার হয়। সে সহযোগিতার ওপর ভর করে তার জামিনও হয়। সেও নাকি ফের আমার বিরুদ্ধে উৎরাই।
( অবশ্য, তার বিষয়ে জীবদ্দশায় একদিন শ্রদ্ধেয় নিজাম উদ্দিন মানিক ভাই আমার ওপর ক্ষেপছিলেন। বলেছিলেন, তোমরা এই পেশাটাকে সস্তা করে দিচ্ছ। লোশন ব্যাপারীর কোন বৈধতা ছিলনা। নিজের হাতে তৈরী করা মাল বিক্রয় করতে নাকি সাংবাদিকতার কার্ড গলায় ঝুলায়।)
অন্যজনকে নিজের যাত্রা ভঙ্গ করে একটি পত্রিকার মালিক বানিয়েও একপর্যায়ে দেখি তিনিও সামান্যতে আমার যথেষ্ঠ ক্ষতির কারণ হন। যেমন প্রকাশ্যে, গোপণে উপকার করতে পিছপা ছিলামনা কাকা ডাকি এমন একজনের দু:সময়ে।
সাংবাদিকতার আড়ালে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অতীতে অনেকে অনেক কিছু করার গল্প রয়েছে। তবে হালে শহর, নগর, বন্দর ও গাঁ গেরাম চষে বেড়াচেছ পরিবার ও সমাজের কিছু বেকার। আবার কিছু করছেন, জাতীয় ও জেলার সরকারী কর্মকর্তাদের চামচাগিরি।তোয়াজগিরি। করছেন ধান্ধবাজি। সরকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের আচার অনুষ্ঠানে ছবি ওঠিয়ে বলে দিচ্ছেন তার সাথে সাংঘাতিক দহরম মহরম। হতাশাগ্রস্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভাগিয়ে নিচ্ছেন নিজের আখের। আর এসবের পেছনে আমরা সম্পাদক, প্রকাশকরাও কম দায়ি নই। চাইলেই তো মাত্র বিনা বেতনে একটি পরিচয়পত্র ধরিয়ে দিয়ে তাকেই টিকেট দিচ্ছি, যাও, বেঁচে থাক। চাঁদা খাও।
পাদটিকা : ( ধর্মমতে, কারো উপকার করে খোটা দিতে নেই। তবুও যে বাস্তবতা সামাল দেয়া বড়ই কঠিন। দিনদিন কিছু মানুষের মুখোশগুলো বারবারই মনে পড়ছিল। মুখ আর অন্তরের অমিলতা বড়ই অভাবনীয় হিসেবে মিলেছে হিসেবে খাতায়। সে কারণে নিজের ছোট্র পরিহাসের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাটুকু সংশোধ করলাম।)
Leave a Reply