উন্নয়নের প্রধান বাধা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি

  • আপডেট সময় সোমবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
  • 132 পাঠক

————————————————————————————-

নাগরিক প্ল্যাটফরমের জরিপ
————————————————————————————–
দিশারী ডেস্ক। ১৬ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

দেশের ৬৯.৪ শতাংশ তরুণের মতে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হলো ‘ দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ’। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর এক জরিপে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

১৪ অক্টোবর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত ‘ যুব সম্মেলন-২০২৩’ এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

দেশের তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পরিচালিত ‘ইয়ুথ পারস্পেক্টিভ ইন দ্য কারেন্ট ন্যাশনাল কনটেক্সট’ জরিপ অনুযায়ী, দেশের উন্নয়নে দুর্নীতি ছাড়া আরও যে বাধাগুলো রয়েছে তারমধ্যে দ্বিতীয়টি হলো- স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব (৪৬.৫ শতাংশ), এরপরে রয়েছে স্বজনপ্রীতির প্রবণতা (৩২.৬ শতাংশ) এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বা সমন্বয়ের অভাব (২৮.১ শতাংশ)।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসে ৫ হাজার ৭৫ জন তরুণ অনলাইন জরিপে অংশ নেন। এ ছাড়া ২৮টি তরুণ নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান, ২০টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ও গত ১০ বছরের লিটারেচার রিভিউয়ের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণরা অংশগ্রহণ করেন।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি, এর বড় অংশই তরুণ। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় জনশক্তি যুবরা।

প্রতি দশকে এই বয়সীদের সংখ্যা ও অনুপাত বাড়ছে। ২০০১ সালে ছিল ২৯%, ২০১১ সালে ২৯.৫% এবং ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫%। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে নতুন ভোটার হয়েছে সাড়ে তিন কোটি তরুণ। এই যুবসমাজের আশা আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা আগামীদিনের বাংলাদেশে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যুক্ত করতে আমরা কতোটুকু সফল, কতোটুকু কার্যকর, কতোটুকু ফলপ্রসূ এই জিজ্ঞাসাটা আমাদের বারবার আসছে।

এই জিজ্ঞাসার ভেতরে একটা বড় জিজ্ঞাসা হলো রাষ্ট্র, দেশ, রাজনীতি, সমাজনীতি, পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে ঘর-সমাজের ভূমিকা আমরা বজায় রাখতে পারছি কিনা। এবং সেই ভূমিকা বাড়ানোর একটা বড় জায়গা হলো গণতন্ত্রের চর্চা করার ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনে আমরা যুব সমাজের অংশগ্রহণকে আরও জোরদারভাবে দেখতে চাই, আশা করি- নির্বাচন নিয়ে যে সমস্ত সংশয়, বিভ্রান্তি বা উদ্বেগ আছে সেগুলো আগামী দিনে কেটে যাবে।

জরিপে দেখা গেছে, তরুণরা সম্প্রতি অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার, শিক্ষায় অভিগমন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির মতো বিষয়ে সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন।

যুব জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসেবে দুর্নীতি দমন, জবাবদিহিতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন ৫৬.২%। ৫৫.৪% উল্লেখ করেছেন মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি। ৪০.২% জরিপ অংশগ্রহণকারী তরুণ দেশ ও দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন।

জরিপে দেখা যায়, ৬০.৪% তরুণ মনে করেন, রাজনীতিতে জড়িত তরুণরা কার্যত সাধারণ তরুণদের প্রায় সবসময় প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে ৩০% মনে করেন একদমই করেন না। ২৪.২% মনে করেন, করলেও তা খুবই কম। ৩৭.৩% অংশগ্রহণকারী বলেছেন, স্ব-স্ব এলাকায় বা জাতীয় নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সাধারণ তরুণদের সঙ্গে নিজ থেকে আলোচনা একদমই করে না। ২১.৭% মনে করেন আলোচনা করলেও তা খুবই কম।

৬৭.৮% মনে করেন সরকারের বাইরে থাকা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) অথবা নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বা তাদের মাধ্যমে উন্নয়ন ও নীতিতে মতামত প্রকাশ করা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত প্রকাশ ও সমর্থন করেছেন ৫৯.৬%।

৬০.৪% যুব জরিপ অংশগ্রহণকারী বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে। ৪৮.১% শ্রমিকদের জন্য মৌলিক জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে সক্ষম এমন মজুরি প্রদান করার পক্ষে। ৪৮.১% যুব উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা এবং ৪১.৪% ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাতিল করার দাবি জানান।

জরিপে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে তরুণদের মতামত ওঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ১৮.৭% অংশগ্রহণকারী সুযোগ পেলে স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যেতে চান। উচ্চশিক্ষিতের মধ্যে এ ধরনের মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। আরও ১৮.৯% অংশগ্রহণকারী অস্থায়ীভাবে চাকরি বা পড়াশোনা করতে বিদেশে যেতে চান।

৩৫.৪% অংশগ্রহণকারী মনে করেন, যুবসমাজ আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব/দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ৪৬% মনে করেন, যদি নীতি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে তাহলে তরুণরা প্রস্তুত।

জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, ৬৭ শতাংশ তরুণ কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেননি। ৭৯.১ শতাংশ তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ও রাজনীতি সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন। ৪৮.১ শতাংশ খবরের কাগজের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক আলাপ সম্পর্কে জানতে পারেন। একইভাবে ৪১.৭ শতাংশ টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে এবং ৭.৭ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ খবর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নন।

জরিপে উল্লেখ করা হয়, ৫৩.৮ শতাংশ তরুণ এখন পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। যাদের মধ্যে ১৮-২৫ বয়সীর সংখ্যা ৭৬.৪ শতাংশ, ২৫-২৯ বয়সীর সংখ্যা ৩৪.৫ শতাংশ ও ৩০-৩৫ বয়সীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ। ৪৬ শতাংশ তরুণ কোনো স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। ৩৫.২ শতাংশ তরুণ রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতিতে আগ্রহী নন। জরিপে অংশ নেয়া ৮৯.৪ শতাংশ ভোটার হয়েছেন। ৩৬.৪ শতাংশ তরুণ তাদের মতামত প্রকাশের জন্য নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন।

যুব সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের পাশাপাশি সংসদীয় বিতর্ক আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ। সমর্থনে ছিল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। ‘ দেশ হোক তেমন, যুবরা চায় যেমন ’ স্লোগানে যুব সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, শিক্ষক, গবেষক, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ অনেকে অংশ নেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!