বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সাজা, জনমনে তীব্র ক্ষোভ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
  • 141 পাঠক

——————————————————————————————————

নোয়াখালী

——————————————————————————————————

নিজস্ব প্রতিনিধি । ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় ৪ বছরের সাজার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিকসহ সমাজের নানান শ্রেণীপেশার নাগরিকেরা।

তারা বলেছেন, নোয়াখালী হতে শুরু করে বিএনপির জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে মো. শাহজাহান একজন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে খেতাব রয়েছে। তিনি জীবনে কোনদিন কোন একজন মানুষের সাথে অসদাচরণ বা কোন ধরনের খারাপ বাক্য বা কোন ধরনের অন্যায়, অত্যাচার কিংবা কারো মনে কষ্টে দিয়েছেন এমন কথা খোদ বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকেরাও বলতে পারবেননা।

তাছাড়া মো. শাহজাহান রাজনীতির অধ্যায়ে একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবেই পরিচিত। ছাত্রাবস্থা হতে শুরু করে জীবনের এ পর্যায়েও এ মানুষটি রাজনীতির পিচ্ছিল পথেও কোন ধরনের সহিংসতায় জড়িত নেই ও ছিলেননা।
তবুও ঢাকার একটি থানায় দায়ের করা এক মামলায় তাকে গায়েবী আসামী বানিয়েও ৪ বছরের সাজা প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

জেলার সাধারণ মানুষেরা মনে করেন, মো. শাহজাহান ১৯৯১ সালে নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সদর ও সুবর্ণচরের মানুষের জনজীবনের চেহারা পাল্টে যেতে শুরু করেছে। তারা বলেন, এক সময় সোনাপুর হতে সুবর্ণচরে যাতায়াতের উন্নতমানের কোন রাস্তাঘাটই ছিলনা। সোনাপুর হতে আক্তার মিয়ার হাট, চরজব্বর, চরজুবলি তথা হাতিয়ার নদী- ঘাট পর্যন্ত সেসব রাস্তাঘাট পাকাকরণ হয় তাঁর সময়ে।

এছাড়া মো. শাহজাহানের সময়েই সুবর্ণচর ও জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় বিদু্্যৎ যেতে শুরু করে। পরবর্তীতে দাপে দাপে তা উন্নত হয়।

শিক্ষা বিস্তারে সদর ও সুবর্ণচরের বিভিন্ন রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠায়ও তার নাম খোদিত রয়েছে জনমানুষের অন্তরে। শিক্ষাদীক্ষা ও জনমানুষের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী মো. শাহজাহানের প্রেরণায় নোয়াখালী সরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর ও সরকারী মহিলা কলেজে অনার্স চালু হয়।

এছাড়া সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ, চরজব্বর কলেজ, চরমটুয়া কলেজ, মাইজদী পাবলিক কলেজ ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও মো. শাহজাহানের রয়েছে অকৃপণ অবদান।

জেলা শহরের পাশের অশ্বদিয়া শিল্পনগরী স্থাপন, জেলা শিল্পকলা ভবন, জেলা জজকোর্ট ভবন, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ২৫০শয্যায় উন্নতকরণ, নোয়াখালী পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানির নিশ্চিতকরণসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের উন্নয়নে রয়েছে মো. শাহজাহানের নাম ।

এদিকে মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রচারিত রায়কে সরকার কর্তৃক ফরমায়েসী ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে মো. শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র আবু আবদুল্যাহ সবুজ বলেন, এ মামলাটি সম্পর্কে তাঁর বাবার কিছুই জানা নেই। মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত লোকও ছিলেননা। তাছাড়া মামলায় ঘটনার যে দিনক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে, ওই তারিখে মো. শাহজাহান ঢাকায়ও ছিলেননা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, সরকার পরিষ্কারভাবে আরেকটি ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন করতে চায়। সে কারণে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও রাজনীতিকদের থানা, পুলিশ ও আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনীতির মাঠ হতে বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। তিনি বলেন, দুনিয়ার কোন স্বৈরশাসকই নিজ থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নেয়ার ইতিহাস নেই। এ সরকারও তার ব্যতিক্রম নই বলে মন্তব্য করেন আবদুর রহমান।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির আরেক নেতা মাহবুব আলমগীর আলো মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ঘোষিত সাজাটিকে ফরমায়েসী বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে এ সাজা বাতিল চান।

নোয়াখালী পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাছের বলেন, সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একটি একদলীয় নির্বাচন করে নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। সে কারণে তারা চেনা পথ থেকে আর বের হতে চায়না।
তিনি বলেন, সারা বিশ্ববাসী তাদের শাসনামল দেখে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের অধীনে ইউপি নির্বাচন হতে শুরু করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পর্যন্ত কোন নির্বাচনই তারা অবাধ, সুষ্ঠু, জনগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত করতে পারেনি।

তবুও তাদের আশঙ্কা যে, পৃথিবীর গণতান্ত্রিক নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রগুলো যদি হস্তক্ষেপ করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কায়েম করে, সে নির্বাচনে যেন বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধিতার সুযোগ না পায় ; এমন জালে বিএনপিকে আবদ্ধ করে তারা আবারো সরকার গঠন করতে চায়। তাদের কুটরাজনীতির ছকের অংশ হিসেবে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মো. শাহজাহানকে সাজা দিয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের নোয়াখালীর সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, শেখ হাসিনা চান ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবারো পুতুল খেলার নির্বাচন। তিনি বলেন, এরুপ নির্বাচনী খেলার তামসায় রাষ্ট্রের জনগণের কোটি কোটি টাকার খরচ করার কি দরকার ?

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সুমন বলেন, আপনি এসব না করে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিজেকে নিজের খেলায় বিজয়ী ঘোষণা করলেই তো আপনার আসল চেহারা প্রকাশ পায়। সুমন বলেন, শেখ হাসিনা বলছেন, তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবেন। আমরা সাধারণ জনগণ তাঁর মনগড়া নির্বাচনী খেলায় বাধা না দিলেই তো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপ্রিয় হয়ে যায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজস্ব খেলাধুলার বাধা হিসেবে মো. শাহজাহানসহ বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের সাজা দিয়ে টিকে থাকতে চায়।

নোয়াখালীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রচারিত সাজা বাতিল ও আওয়ামী লীগকে নিজস্ব দলীয় সংস্কৃতির নির্বাচনী খেলাকে জাতীয় নির্বাচনী খেলা হিসেবে চালিয়ে না দিয়ে একটি জনঅংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পথে হাঁটার আহবান জানান।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!