পবিত্র কোরআনে মানুষের যে স্বভাব ত্যাগ করতে বলা হয়েছে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪
  • 96 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা । ১৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

———————————————–

মানবজাতিকে সুপথের দিশা দিতে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি মানুষের ভালো স্বভাব উল্লেখ করে তা অনুসরণ করতে এবং মন্দ স্বভাব বর্ণনা করে তা পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মানুষের এমন কয়েকটি মন্দ স্বভাব উল্লেখ করা হলো।

১. মূর্খতা : মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতা নিন্দনীয়। ইসলাম মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে বলেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শঙ্কিত হলো। কিন্তু মানুষ তা বহন করল ; সে অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭২)

২. শয়তানের ফাঁদে পা দেয়া : কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার সতর্ক করার পরও মানুষ শয়তানের ফাঁদে পা দেয়, যা তার ইহকালীন ও পরকালীন বিপদের কারণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘ আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছানোর পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২৯)

৩. অকৃতজ্ঞতা : মানুষ তার স্রষ্টা ও তার উপকারী বন্ধুর প্রতি অকৃতজ্ঞ, যা নিন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের দিয়েছেন তোমরা তাঁর কাছে যা কিছু চেয়েছ তা থেকে। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৪)

৪. তর্কপ্রিয় : ঝগড়া-বিবাদ ও কুতর্কে লিপ্ত হওয়া মানুষের মন্দ স্বভা, যা পরিহার করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘ আমি মানুষের জন্য এই কোরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মানুষ বেশির ভাগ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৫৪)

৫. ত্বরাপ্রবণ : তাড়াহুড়া করা মানুষের স্বভাব। আল্লাহ তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘ মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শিগগিরই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বোলো না।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৭)

৬. মানসিক অস্থিরতা : মানসিক অস্থিরতা মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। কেননা মানসিকভাবে অস্থির ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘ মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থির চিত্তরূপে।’ (সুরা : মাআরিজ, আয়াত : ১৯)

৭. হতাশাগ্রস্ত হওয়া : কোরআনের দৃষ্টিতে হতাশা পরিহারযোগ্য মন্দ স্বভাব। কোরআনে মানুষের এই স্বভাবের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘ যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ।’ (সুরা : মাআরিজ, আয়াত : ২০-২১)

৮. অনুগ্রহ উপেক্ষা করা : আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে বিমুখ হওয়া নিন্দনীয়। বিমুখ হওয়ার অর্থ হলো অনাগ্রহ দেখানো ও যথাযথ মূল্যায়ন না করা। আল্লাহ বলেন, ‘ আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। আর তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে যায়।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮৩)

৯. মিথ্যাচার : মিথ্যাচার জঘন্যতম পাপ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মিথ্যাকে শিরকের পরে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ সুতরাং তোমরা বর্জন করো মূর্তিপূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাকো মিথ্যাকথন থেকে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০)

১০. সম্মান ও সম্পদের মোহ : সম্মান ও সম্পদের মোহ বহু পাপের কারণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩২)

১১. আল্লাহকে ভুলে থাকা : মহান স্রষ্টা আল্লাহকে ভুলে থাকা নিন্দনীয়। কোরআনে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘ মানুষ বলে, আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব ? মানুষ কি স্মরণ করে না যে আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি, যখন সে কিছুই ছিল না?’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৬৬-৬৭)

১২. মৃত্যুকে ভুলে থাকা : মানুষ পার্থিব জীবনে এমনভাবে চলাফেরা করে, যেন কোনো দিন তার মৃত্যু হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আমি তোমার আগে কোনো মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি, সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যানীত হবে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)

১৩. পরকালকে ভুলে থাকা : মৃত্যু-পরবর্তী জীবন ও পরকালীন জবাবদিহি ভুলে থাকা মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ মানুষ কি মনে করে যে তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেওয়া হবে? ’ (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৩৬)

১৪. অপব্যয় ও অপচয় : অনুরূপ অপব্যয় ও অপচয় দূষণীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ তোমরা খাও ও পান করো, কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

১৫. নিজেকে অমুখাপেক্ষী ভাবা : মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে সে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। কিন্তু বহু মানুষ নিজেকে অমুখাপেক্ষী ভাবে। তাদেরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘ বস্তুত মানুষ সীমালঙ্ঘন করেই থাকে। কেননা সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমার প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ৬-৮)

১৬. কৃপণতা : কৃপণতা মানুষের অতিশয় নিন্দনীয় স্বভাব। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে কৃপণতার নিন্দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু, বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)

১৭. অহংকার : অহংকার বা আত্মম্ভরিতা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম স্বভাব। আল্লাহ অহংকার অপছন্দ করেন এবং তা মানুষের পতন ডেকে আনে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ আল্লাহ কোনো উদ্ধত-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৮)

১৮. ক্রোধ ও রাগ : অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের হিতাহিত জ্ঞান কেড়ে নেয় এবং অন্যায় কাজে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন, ‘ যখন তারা ক্রোধান্বিত হয়, তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৩৭)

১৯. হিংসা-বিদ্বেষ : ইসলামের দৃষ্টিতে হিংসা একটি মানসিক ব্যাধি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ হিংসা থেকে পানাহ চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা : ফালাক, আয়াত : ৫)

২০. আত্মগৌরব : আত্মপ্রশংসা ও আত্মগৌরব মানুষকে বাস্তবতা বিমুখ করে। ইসলাম আত্মগৌরব থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘ তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, কে আল্লাহভীরু এ সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)

আল্লাহ সবাইকে মন্দ স্বভাব পরিহারের তাওফিক দিন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!