বেশির ভাগ অজ্ঞাত লাশের পরিচয় অজ্ঞাত

  • আপডেট সময় রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
  • 87 পাঠক

————————————————————————————————————–

পরিচয় না পাওয়ায় রহস্য উদঘাটন কিংবা অপরাধীদের চিহ্নিত করাও কঠিন

—————————————————————————————————————

দিশারী ডেস্ক। ২০ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১৬১ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে শুধু গত এপ্রিল মাসেই উদ্ধার করা হয়েছে ৫৮টি লাশ, যার মধ্যে ৬৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী।

উদ্ধার করা বেশির ভাগ লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেইসের সঙ্গে আঙুলের ছাপ না মেলা এবং শরীর বিকৃত ও অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক জরিপ প্রতিবেদনে এমন চিত্র ওঠে এসেছে।

রাজধানীসহ সারা দেশের রাস্তার পাশ, ডোবা, খাল-বিল, নদীর পানি, ফসলি জমি ও রেললাইনের পাশ থেকে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফের পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল ছাড়াও মার্চ মাসে ৪২টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৬টি এবং জানুয়ারিতে ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চার মাসে গড়ে ৪০টি করে লাশ উদ্ধার করা হয়।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের প্রতি মাসে উদ্ধার করা হয়েছে গড়ে ২৯টি লাশ।

এমএসএফ বলছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, উদ্ধার করা ২৪ শতাংশ লাশ শনাক্ত করা গেলেও বাকি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পারিবারিক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এসব লাশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। রাস্তাঘাটে, বনে, ঝোপঝাড়ে কিংবা নির্জন স্থানে এভাবে লাশ ফেলে রাখার বিষয়টি উদ্বেগের।

আবার অনেক ভবঘুরের লাশও অজ্ঞাতপরিচয় থেকে যাচ্ছে। তবে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হয়। এর মধ্যে কোনো হত্যার ঘটনায় লাশের পরিচয় শনাক্ত হলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীরা পরিকল্পিতভাবে কাউকে তুলে এনে হত্যার পর লাশ গুম করে। আলামত নষ্ট করতে এক এলাকায় হত্যা করে অন্য এলাকায় লাশ ফেলে যায়।

এসব লাশের বেশির ভাগের পরিচয় পাওয়া না যাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়। নাম-পরিচয় না পাওয়ায় হত্যার রহস্য উদঘাটন কিংবা হত্যাকারীদের চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান, অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, অজ্ঞাত যেসব লাশ উদ্ধার করা হয়, সেগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশের পরিচয় মেলে না। লাশের শরীর ক্ষতবিক্ষত থাকা, দেশের এক প্রান্তের লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় অন্য প্রান্তে পাওয়া, জাতীয় সার্ভারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না থাকা, কখনো না মেলা, ভবঘুরে কিংবা কোনো লাশের আঙুল না থাকাসহ বেশ কিছু কারণে এসব লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায় না। তবে জাতীয় সার্ভার আপডেটসহ আমাদের তথ্য-প্রযুক্তির আরো উন্নয়ন হলে পরিচয় শনাক্ত আরো বাড়বে বলে মনে করি।

এমএসএফ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রতি মাসে দু-চারটি ঘটনা ছাড়া সব লাশের পরিচয় অশনাক্তই থেকে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এপ্রিল মাসে ৫৮ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৭ বছরের নিচে এক শিশু, ২৬ জন যুবক, ১২ জন তরুণী, ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও দুজন নারী এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ১১ জন নারী-পুরুষ রয়েছে।

অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা কেন বাড়ছে জানতে চাইলে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এভাবে লাশ উদ্ধারের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। তবে প্রায়ই দেখি পারিবারিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে গুপ্তহত্যার শিকার হন কেউ কেউ। পরে ওই হত্যার ঘটনা লোকচক্ষুর আড়াল করতে নদী, ডোবা কিংবা খালে লাশ বস্তাবন্দি করে ফেলা হয়।

প্রযুক্তির সহায়তায় এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তবে নজরদারি আরো বাড়ানোসহ প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ও দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সূত্রে জানা যায়, একসময় অজ্ঞাতপরিচয় লাশের বেশির ভাগই ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত লোকজন। কিন্তু মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে সহজেই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় মিলছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় সহজে নিশ্চিত হওয়ায় দুর্ঘটনায় বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা কমে আসছে। আর বর্তমানে বেওয়ারিশ লাশের বিরাট একটি অংশ হত্যার শিকার।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অজ্ঞাতপরিচয় লাশের ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়। তবে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় মামলার তদন্ত ধীরগতিতে হয়। কিছু কিছু মামলায় দীর্ঘদিন পর নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানার পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, নানা কারণেই লাশের পরিচয় অজ্ঞাত থাকতে পারে। তবে সব হত্যার ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়। যেসব এলাকায় একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, সেসব এলাকায় নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!