ইসলামের দৃষ্টিতে কোন স্বামী উত্তম ?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
  • 137 পাঠক

মিরাজ রহমান । ১৫ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো আলস্য সময় কাটাননি। সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে সাহাবিদের দ্বীন শেখানো, দ্বীনের প্রচার-প্রসার, বিভিন্ন কাজ, নানা পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনা, যুদ্ধ ইত্যাদি কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকতেন।

এসবের মধ্যেও নিজের ঘর ও দাম্পত্য জীবনকে যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিতেন। স্ত্রীদের আত্মিক প্রশান্তি দিতে মনোযোগী থাকতেন। সচেষ্ট থাকতেন স্ত্রীদের আনন্দ দিতে এবং তাদের সুখী রাখতে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, “ একবার তিনি এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল অল্প। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগিয়ে যাও।’ এরপর (আমাকে) বললেন, ‘ এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ এরপর আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম।

পরবর্তী সময় আবার তাঁর সঙ্গে সফরে গেলাম। তখন তিনি সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগোতে থাকো।’ এরপর বললেন, ‘ এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ আমি আগের প্রতিযোগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর তখন আমার শরীর কিছুটা ভুলকায় হয়ে গিয়েছিল।

আমি বললাম, ‘ হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় কী করে আমি আপনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব? ’ তিনি বললেন, ‘ তুমি পারবে।’ এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। দৌড়ে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর বললেন, ‘ এই জয় আগের পরাজয়ের বদলা। ” (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৪৫)।

অপর বর্ণনায় আছে, “ এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। তাতে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘এটি ওই পরাজয়ের শোধ।” (আল-মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ, হাদিস : ২৬৩২০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দ বিনোদন করতেন। তাদের মন ভালো হয়ে যায়, এমন আচরণ করতেন। এখানে হাদিসের একটি ঘটনা বলা যেতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, “ একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য গোশত, ঝোল ও রুটি মেশানো খাবার তৈরি করে তাঁর কাছে এলাম। এসে সাওদাকে বললাম, তুমি খাও।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আমার ও তার মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সাওদা খেতে চাইল না। আমি বললাম, অবশ্যই তুমি খাবে, না হয় আমি তোমার চেহারা লেপ্টে দেব। তারপরও সে খেতে চাইল না। এরপর আমি খাবারের পাত্রে হাত ঢুকিয়ে (হাতে ঝোল মাখিয়ে) সাওদার চেহারায় লেপ্টে দিলাম। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন।

এরপর তাঁর উরু সাওদার জন্য বিছিয়ে দিলেন এবং সাওদাকে বললেন, ‘ এবার তুমি ওর চেহারা লেপ্টে দাও। তা শুনে সেও আমার চেহারা লেপ্টে দিল। আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এমন সময় উমর (রা.) আবদুল্লাহ… আবদুল্লাহ…’ ডাকতে ডাকতে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর হয়তো এখানে প্রবেশ করবেন ভেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দুজনকে বললেন, ‘ তোমরা যাও। তোমাদের চেহারা ধুয়ে নাও।’

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ উমর (রা.)-এর ডাক শুনে সেদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয় পাওয়ার পর থেকে আমিও উমরকে ভয় পাই।” (আস সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস: ৮৯১৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস: ৪৪৭৬)

স্ত্রীদের আনন্দ বিনোদনে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো দ্বিমত প্রকাশ করেননি। রাগ করেননি; বরং তাদের আনন্দ বিনোদনের সুযোগ করে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলাধুলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৭৭৯)।

মনে রাখতে হবে, আয়েশা (রা.) যে ধরনের পুতুল দিয়ে খেলতেন, তা বর্তমানে তৈরি করা পুতুলের মতো ছিল না। তা ছিল সাধারণ কাপড় ও তুলা দিয়ে তৈরি, যার বিশেষ কোনো আকৃতি ছিল না। অথবা তা ছিল ছবি তৈরির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসার আগের ঘটনা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) পারিবারিক পরিবেশকে সব সময় আনন্দমুখর রাখতে চেষ্টা করতেন। তিনি পরিবার তথা স্ত্রীদের গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে উত্তম স্বামী।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৭৭)।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!